বৃহস্পতিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০১৭

সম্পাদকের কলমে



বাংলা কবিতাঃ আবেগ ও হুজুগ

বাঙালি আর কবিতা কি পরস্পরের পরিপূরক? হঠাৎ-ই মাথায় আসল প্রশ্নটি। কবিতা নিয়ে মাতামাতি তো শুধু আমরা বাঙালিরাই করি না, আবিশ্ব অধিকাংশ জাতিই কবিতা নিয়ে মাতামাতি করে থাকে। অথচ কোথায় যেন আমাদের বাঙালির মননে কবিতা নিয়ে একটি বাড়াবাড়ি রকমের আবেগ কাজ করে থাকে। অনেকেই কিন্তু এই বিষয়ে একমত হবেন। বাঙালি যেরকম আবেগতাড়িত হয়ে কাব্যচর্চা করে থাকে, অন্যান্য জাতিও কি ঠিক সেইরকম আবেগ থেকেই কবিতা নিয়ে মাতামাতি করে? এই যে আবেগের মাতামাতি, যেটি জাতি হিসাবে আমাদের একটি প্রধানতম চরিত্র লক্ষ্মণ, সেইখানেই যেন আমাদের কাব্যচর্চার নোঙর। আবার আবেগের সাথে আরও একটি বিষয় অনেক সময়েই জড়িয়ে যায়, সেটি কিন্তু হুজুগ। বিশেষত যৌবনের অন্যতম বৈশিষ্ট এই হুজুগ। বয়সের সাথে দিনে দিনে যার শক্তি কমতে থাকে ক্রমশ! অভিজ্ঞতার পারদ যত চড়তে থাকে হুজুগের মাতামাতিও ততই দূর্বল হতে থাকে। আর সেই হজুগের হাত ধরেই আমাদের বাঙালিদের কাব্যচর্চার পরিসরটি কোলাহল মুখর হয়ে ওঠে প্রতিটি যুগেই নতুন করে।

ইনটারনেট বিপ্লবের হাত ধরে আমাদের বর্তমান যুগে বাঙালির কাব্যচর্চার এই হুজুগ প্রবল ভাবে শক্তি অর্জন করে চলেছে। সেই বিষয়ে আশা করি বিতর্ক থাকতে পারে না কোন। অনেকেই এই হুজুগকে সদর্থক ভাবে দেখতে চাইছেন। অনেকেই মনে করছেন, এই হুজুগের মধ্যে দিয়েই বঙ্গসংস্কৃতি এগিয়ে চলবে দূর্বার গতিতে। অনেকেই এই হুজুগের মধ্যে দিয়ে বাংলা সাহিত্যের আবিশ্ব পরিচিতির বিষয়টি আরও সবল হয়ে উঠবে বলেই আশা করছেন দৃঢ় ভাবে।

এখন এই হুজুগের পেছনে কাব্যচর্চা নিয়ে আবেগের যে মাতামতি, সেটিকেই অনেকে বাঙালির অন্যতম শ্রেষ্ঠ সম্পদ বলে মনে করেন। আমাদের আবেগের অন্যতম বহিঃপ্রকাশই হলো কবিতা। এরকমটাই ভাবতে চান অনেক কাব্যপ্রেমী বাঙালি। এবং এই বিষয়টিকেই বাঙালির গর্ব ও অহংকার বলে প্রচার করেন অনেকে। কিন্তু আমাদের প্রশ্ন কবিতা কি শুধুই আবেগের বহিঃপ্রকাশ মাত্র? কিংবা কবিতা কি মূলত আবেগেরই সম্প্রসারণ? প্রশ্নটিকে একটু ঘুরিয়ে ধরলে, আবেগের বহিঃপ্রকাশেই কি কবিতার প্রাণভোমরার জীয়নকাঠি?

না এই প্রশ্নের শেষ মীমাংসা হয়তো কোনদিনই হবে না। যদিও অধিকাংশ বাঙালি কাব্যপ্রেমীই এই প্রশ্নের উত্তরে সমস্বরে হ্যাঁ বলে সায় দেবেন। বস্তুত আবেগপ্রবণ জাতি হিসাবেই আমরা বিষয়টিকে দেখতে অভ্যস্থ। আমাদের সকল যুক্তির ধার সেই দিকেই শানিয়ে ওঠে স্বাভাবিক ভাবেই। কিন্তু আমাদের মধ্যেই বেশ কিছু মানুষ আছেন, যাঁরা কবিতাকে আবেগের স্বগতোক্তি হিসাবে দেখতে রাজি নন আদৌ। কারণ ভাবাবেগ আমাদের উদ্বেল করে তোলে ঠিকই, কিন্তু কোন মহত্তর সত্যে পৌঁছিয়ে দিতে পারে না। আর কবিতার মূল গতি সত্যের অভিমুখে। ভাবাবেগ অধিকাংশ সময়েই আমাদেরকে সত্যের থেকে অনেক দূরবর্তী অবস্থানে আটকিয়ে রাখে। আর কবিতাও যদি সেইরকম ভাবেই সত্যের থেকে দূরতর অবস্থানে দাঁড়িয়ে যায়, তবে সেটিকে কবিতা বলায় আপত্তি করতে পারেন কিছু কিছু মানুষ। কারণ তাঁদের প্রত্যয়ে ব্যক্তিগত ভাবাবেগের স্বতঃস্ফূর্ত বহিঃপ্রকাশ থেকে কবিতা অনেক বড়ো মাপের বিষয়। জগৎ ও জীবনের চলমান প্রতীতির সাথে বিশ্বসত্যের শাশ্বত বীক্ষার অন্বয়ের মধ্যেই কবিতার অস্তিত্ব।

আর সেই অস্তিত্বের সারাৎসার ধরতে চান তাঁরা জীবনবোধের পরতে পরতে  অভিজ্ঞতা আর স্বপ্নের তীব্র ঘাত প্রতিঘাতে। সচেতন প্রজ্ঞা আর অবচেতন মননের দিগন্ত ব্যাপি উদ্বোধনের আনন্দে। সত্য উপলব্ধির গভীর অনুরণনেসুস্পষ্ট জীবনসত্যের সুদৃঢ় ভিত্তিতে বলিষ্ঠ প্রত্যয়ে পৌঁছানোর সুতীব্র অভীপ্সায়। না, ভাবাবেগের মাতামাতিতে সম্ভব নয় এই উত্তরণ।

অনেকেরই আক্ষেপ তাই, বাংলা কবিতা অধিকাংশ সময়েই ভাবাবেগের প্রাবল্যে দিগভ্রান্ত পথিকের মতো মরিচিকার পেছনে ছুটে চলার এক অদম্য হুজুগ মাত্র। এখন আবেগসর্বস্বতার এই হুজুগ থেকে বাঙালি ও বাংলা কবিতাকে রক্ষার উপায় কি? বাঙালিকে রক্ষা করার বিষয়টি সমাজতাত্বিক থেকে সমাজবিদ সমাজসংস্কারকদের বিষয়। কিন্তু বাংলা কবিতাকে ভাবাবেগসর্বস্বতার এই হুজুগ থেকে রক্ষার উপায়, আরও বেশি করে সমাজমনস্কতার বেদীতে অস্তিত্বের সারসত্যকে প্রত্যক্ষ করার শিক্ষাকে প্রসারিত করতে থাকা। আমাদের জীবনচর্চার পরিমণ্ডলেই সার্থক করে তুলতে হবে এই প্রয়াস।

এরপরেও ভিন্নমতাবলম্বীরা কবিতাকে ভাবাবেগের স্বতঃস্ফূর্ত বহিঃপ্রকাশ হিসাবেই প্রচার করে চলবেন সন্দেহ নাই। সন্দেহ নাই তারপরেও কবিতা লেখার হুজুগকে বাঙালি যথেষ্ঠই শ্লাঘার বিষয় হিসাবেই আঁকড়ে ধরে বসে থাকতে স্বচেষ্ট হবে। প্রত্যেক মানুষের ব্যক্তিস্বাধীনতা চর্চার মৌলিক অধিকার রয়েছে। তাই এক একজন এক এক রকম ভাবেই সমগ্র বিষয়টি বিচার করবে সেটাই স্বাভাবিক। আর এরই মধ্যে আমাদের এগিয়ে চলতে হবে আপনাপন বিশ্বাস ও যুক্তির পথরেখা ধরেই। কবিতাউৎসবের পথ চলার শুরুও সেইরকম ভাবেই। ভাবাবেগ ও হজুগের মায়াজাল ছিন্ন করেই পরিপূর্ণ জীবনপ্রশ্নের অভিমুখে কাব্যচর্চার একটি বিশ্বস্ত পরিসর গড়ে তোলার স্বপ্ন নিয়েই আমাদের যাত্রা শুরু। আর এই যাত্রায় আমরা প্রায় দুটি বছর অতিক্রম করে তৃতীয় বছরের দিকে পা রাখতে এগিয়ে চলেছি। বাংলা কবিতা নিয়ে অত্যন্ত গভীর ভাবে যাঁরা ভাবছেন, নানান পরীক্ষা নিরীক্ষার মধ্যে দিয়ে নিজস্ব কন্ঠস্বরকে খুঁজে পেতে অদম্য উৎসাহে যাঁদের এখনো ভাঁটা পড়েনি, তাঁদের সকলকেই কবিতাউৎসবে আমাদের আন্তরিক আমন্ত্রণ।

এই প্রসঙ্গে অত্যন্ত আনন্দের সাথে জানাতে চাই, মাসিক কবিতাউৎসবের আয়োজনে দুই বাংলার কবিদের নিয়ে গত ১৬ই ডিসেম্বর ২০১৭ পাক্ষিক কবিতাউৎসব লাইভের বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠান হয়ে গেল সম্প্রতি জুম ভিডিও কনফারেন্স প্ল্যাটফর্মে; কানাডা নিবাসী কবি মৌ মধুবন্তীর নান্দনিক সঞ্চালনায়। কবিতাউৎসব বাংলা কবিতা চর্চার দিগন্তকে আরও ফলবতী করে তুলতে সর্বদাই অঙ্গীকারবদ্ধ। মাসিক কবিতাউৎসবের পৌষ সংখ্যার অন্যতম আকর্ষণ জার্মান প্রবাসী তরুণ কবি রেজওয়ান তানিমের দুরন্ত সাক্ষাৎকার। আমাদের আশা পূর্ববর্তী সংখ্যাগুলির মতোই বর্তমান সংখ্যাটিও কবিতাউৎসবের পাঠকবর্গকে তৃপ্তি দিতে সফল হবে।

কবিতাউৎসব ফেসবুক পেজ কে লাইক করে ফেভারিট করে রাখলে কবিতাউৎসবের যাবতীয় তথ্য ও বিজ্ঞপ্তি সরাসরি আপনার ফেসবুক ওয়ালেই দেখার সুযোগ ঘটবে। এই পেজেই কবিতাউৎসবে প্রকাশিত কবিতাগুলিও নিয়মিত প্রচারিত হয় লিংকসহ।

এবং এরই সাথে কবিতাউৎসবের ফেসবুক গ্রুপ: 
কবিতাউৎসব ফেসবুক গ্রুপ এ জয়েন রিকোয়েস্ট পাঠালে গ্রুপের সদস্য হিসাবে গ্রুপের ওয়ালে আপনার কবিতা ও কবিতা বিষয়ক মূল্যবান মতামত সরাসরি পোস্ট করে সকল সদস্যদের সাথে শেয়ার করেও নিতে পারবেন। গ্রুপের পিনপোস্টে এই বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশাবলীও দেওয়া আছে।

এছাড়াও কবিতাউৎসব গুগুল কমিউনিটি
কবিতাউৎসব গুগুল কমিউনিটি  তে সরাসরি জয়েন করে একটি সম্পূর্ণ ওয়েবসাইটের মতো সুযোগ গ্রহণ করতে পারেন। এখানে আপানার কবিতা পোস্ট করার সুবিধা ছাড়াও আপনার নিজস্ব সাহিত্য ব্লগের লিংক নিয়মিত ব্যবধানে প্রচারের সুবন্দোবস্ত ও অন্যান্য একাধিক বিভাগে আপনার যোগদানের সুযোগ রয়েছে। রয়েছে সুস্পষ্ট নিয়মাবলীও।

***কবিতাউৎসবে লেখা পাঠানোর সাধারণ নিয়মাবলী:
১) স্বনির্বাচিত স্বরচিত ৫টি প্রিয়কবিতা পাঠাতে হবে
২) অভ্র বাংলা হরফে টাইপ করে একটি এমএস-ওয়ার্ড ফাইলে এটাচ করে
৩) কোনভাবেই পিডিএফ ফাইল ও বিজয় ফন্ট গ্রহণযোগ্য নয়
৪) একটি প্রফাইল চিত্র  অতি অবশ্যই আবশ্যক
৫) কবিতা পাঠানোর ঠিকানা amaderkobitautsov@gmail.com
৬) পাঠানোর শেষ দিন প্রতি বাংলামাসের ১লা তারিখ

***কবিতাউৎসবে প্রকাশিত কবিতার স্বত্ত্ব লেখকের নিজস্ব।
কবিতাউৎসব আপনার সৃষ্টিশীলতার প্রতি ঐকান্তিক শ্রদ্ধাশীল থেকে সবরকমের সহযোগিতার বিষয়ে সাধ্যমত অঙ্গীকারবদ্ধ। কবিতাউৎসবের সাথে থাকুন কবিতাউৎসব আপনার পাশে রয়েছে সবসময়।