বৃহস্পতিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০১৭

রেজওয়ান তানিম



কবিতাউৎসব সাক্ষাৎকার  ১৪২৪

কবিতাউৎসব: কবিতা উৎসবের পক্ষ থেকে আপনাকে স্বাগত। কবিতা আর বাঙালি: বাঙালি আর উৎসবএ যেন এতটাই স্বত:সিদ্ধ যে, এই নিয়ে কোন সংশয়ের অবকাশই থাকে না। আমরা কবিতা লিখতে ভালোবাসি। কবিতা পড়তে ভালোবাসি। কবিতায় থাকতে ভালোবাসি। আর কবিতা নিয়ে উৎসব তো আমাদের বারোমাস্যা। তাই কবিতা নিয়ে বাঙালির এই উৎসবকেই আমাদের শ্রদ্ধার্ঘ মাসিক কবিতা উৎসব, শুধুমাত্র কবিতার জন্যে কবিদের মাসিক পত্র। বাংলার জনজীবনে কবিতার এই যে একটা বিপুল প্রভাব এই বিষয়টি আপনাকে কি ভাবে প্রভাবিত করে। এবং আপনার লেখকসত্ত্বার গড়ে ওঠার পেছনে এই প্রভাব কতটা ক্রিয়াশীল ছিল বলে মনে করেন আপনি?

রেজওয়ান তানিম: কবিতাউৎসবের বর্ষপূর্তির শুভেচ্ছা জানাই। কবিতাউৎসব সকলের মাঝে ছড়িয়ে যাক এই কামনা। এবারে প্রশ্নের উত্তরে আসি। কবিতা আর বাঙালি: বাঙালি আর উৎসবএ যেন এতটাই স্বত:সিদ্ধ যে, এই নিয়ে কোন সংশয়ের অবকাশই থাকে না। আপনার এই কথা আজকের দিনের প্রেক্ষাপটে, নগর সভ্যতার যন্ত্র ও যানের দুর্মর গতি ও আবেগ বর্জনের যুগে সত্যিই কি সংশয়হীন? আমার অন্তত তা মনে হয় না। কবিতার আবেদন সাধারণে দিনকে দিন কমছে। কমতে কমতে এমন তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে যে বাংলাদেশে এখন ৩০০ কপি বই বিক্রি একটা ভাল কবিতার বই কিংবা বাজারে সফল বইয়ের মানদণ্ড হিসেবে দাড়িয়ে গেছে। ওপার বাংলা কিংবা বিশ্বের প্রেক্ষাপটে কথাটা না বলতে পারলেও বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে এটা সত্য।

হ্যাঁ একটা সময় ছিল যখন কবিতা ও কবিরা এই নরম মাটির দেশে ছিলেন তারকা। সে আরাকানি রাজসভার আলাওলের যুগ হোক কিংবা রবিঠাকুরের সময় হোক। এমনকি ৪৭ এ দেশ বিভাগের পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্য পড়াতে আসা অধ্যাপক এ জী স্টক এর বইতেও পড়েছি কবিদের প্রতি প্রবল সম্মান ও সাধারণ্যে গুরুত্ব দেখে বিস্মিত বোধ করেছেন, তাদের সম্মান প্রাপ্তি থেকে আশাবাদী হয়েছেন কিন্তু এখন কবি শব্দটা বাংলাদেশে গালির পর্যায়ে চলে গেছে। ওপার বাংলায় কি অবস্থা জানা নেই। আমি দৃঢ়ভাবে বলতে পারি, সাধারণ লোকের কাছে কবিতা কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। তার সময়ক্ষেপণের এত এত মাধ্যম আছে যে কবিতা পাঠ করে সময়ক্ষেপণ কল্পনাতেও আসে না আজকাল, এমনকি স্বয়ং কবিদের বেলাতেও না। একশজন কবির মাঝে খুঁজলে দেখা যাবে স্বল্পসংখ্যক নিজের বাদে অন্যের লেখা পড়েন। 

আমার লেখালেখির শুরুর সাথে কবিতার এইসব তথাকথিত সামাজিক প্রভাব যার কথা বলছেন এর দূরতম যোগাযোগও ছিল না। যদি ছোটবেলায় কেউ বলত কোনদিন আমি লিখব, আমাকে লোকে পড়বে; তবে তাকে রূপকথার গল্পের চেয়েও অবাস্তব বলে উড়িয়ে দিতাম। কিন্তু কি আশ্চর্য হুট করে ২০০৬ সালে একদিন আমাকে কবিতায় পেল, ঠিক নিশি পাওয়া মানুষের মত। সেই যে নেমে এলো এক স্বপ্ন-কল্পনার নিগুঢ় অভিশাপ, তা বহন করে চলতে হচ্ছে এখনো


কবিতাউৎসব: কিন্তু বাঙালির প্রতিদিনের জীবনে কাব্যসাহিত্যের ঐতিহ্য কতটা প্রাসঙ্গিক কতটা হুজুগ সর্বস্ব বলে আপনি মনে করেন? অর্থাৎ জানতে চাইছি জাতি হিসেবে সাহিত্যের সাথে আমাদের আত্মিক যোগ কতটা গভীর। নাকি আসলেই এটি একটি সামাজিক হুজুগ, সামাজিক পরিচিতি লাভের সহজ একটি উপায় হিসাবে।

রেজওয়ান তানিম: আজকাল বিভিন্ন ধরণের সামাজিক মাধ্যমকে যেমন লেখার প্লাটফর্ম বানিয়ে ফেলেছি আমরা বঙ্গ দেশের লেখক কিংবা কবিরা, বিশ্বের আর কোথাও এমন দেখা যায় না। বেশ কিছু আন্তর্জাতিক গ্রুপ এবং বাইরের দেশের বন্ধুস্থানীয় সাহিত্যিক যারা আছেন তারা অনেকেই সৃজনশীল লেখা বিশেষ করে কবিতা নিয়মিত ফেসবুকে দেন না। এর মূল কারণ তাদের প্রতিষ্ঠানের শক্ত ভিত্তি। সাহিত্য পত্রিকা কিংবা বইয়ের জন্যেই দেন শেষে। ফ্রি ফ্রি ফেসবুকে বিলিয়ে বেড়াবার জন্যে নয়। আমাদের দেশের প্রেক্ষিত ভিন্ন। ফেসবুক একটা যোগাযোগ মাধ্যম। ছবির বই যার আক্ষরিক মানে, সেখানে মুফতে যে গল্প কবিতা লিখতে পারছি, প্রচারণা হচ্ছে এটা অনেক বড় ব্যাপার। আসলে এ দেশের প্রেক্ষাপটে একজন ভাল ফেসবুকারের লক্ষণ যে ভাল লিখতে পারে। অনুন্নত কিংবা উন্নয়নশীল বিশ্বে প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি ও কাঠামোগত সক্ষমতার অভাব থাকায় এই বিকল্প গণমাধ্যমের গড়ে ওঠা খুব স্বাভাবিক। এখন লেখক হলে যখন গুরুত্ব পাবেন তখন ভালো করে যে বানান জানে না সেও লিখেই নিজেকে জাহির করতে চাইবে এ আর আশ্চর্য কী। এর মাঝ দিয়েই যেতে হবে আমাদের


কবিতাউৎসব:  কাব্যচর্চা বা সামগ্রিক ভাবে সাহিত্যচর্চা বলতে আপনি কি শিল্পসাহিত্যের জন্যেই সাহিত্যচর্চায় বিশ্বাসী? না কি মনে করেন কবিতা বা সাহিত্যেরও একটা সামাজিক দায়বদ্ধতাও আছে? আপনার নিজস্ব সাহিত্যচর্চার জীবনের প্রেক্ষিতে যদি বিষয়টি একটু আলোচনা করেন। সামাজিক দায়বদ্ধতার নিরিখে, একজন সাহিত্যিকের সমাজসচেতনতা কতটা জরুরী বলে মনে হয় আপনার? যেমন ধরা যাক একুশের চেতনা। বাংলা ভাষার স্বাধিকার বোধ। এইসব বিষয়গুলিমুক্তিযুদ্ধের অপূর্ণ লক্ষ্যগুলি।

রেজওয়ান তানিম: এই প্রশ্নের উত্তর আমি বহুবার বহুভাবে দিয়েছি। বলতে বলতে ক্লিশে হয়ে গেলেও আবারো বলছি, ‘উদ্দেশ্যহীন সাহিত্যচর্চা অর্থহীনএখন প্রশ্ন, আপনার উদ্দেশ্য কী। যদি সাহিত্য করতে এসে রাজনৈতিক স্বার্থ সংশ্লিষ্টতা কিংবা কোন গোষ্ঠীস্বার্থ হাসিল করতে চান তাহলে যেমন সাহিত্য ব্যর্থ হতে পারে তেমনি জীবনের সাথে ঘনিষ্ঠতা না রেখে শুধু শিল্পবোধ নিয়ে উচ্চকণ্ঠ থাকলেও গুরুত্বপূর্ণ কোন লেখনীর জন্ম হতে পারে না। জীবনটাই শিল্পের অংশ, শিল্প জীবনের বাইরে নয়। একজন লেখকের সামগ্রিক মননে এক ধরণের প্রস্তুতি থাকতে হয় যা তাকে নির্দেশ করে তিনি কি লিখবেন। আমরা যদি বলি পদ্মা নদীর মাঝিতে যেমন দেখা যায় হোসেন মিয়ার অচেনা অজানা ময়নাদ্বীপে মালাকে ফেলে কুবের আর কপিলার পালিয়ে যাওয়াঘটনার এই পরিণতি মানিক বন্ধপাধ্যায়ের হাতে ছিল না, এ অনেকটা নিয়তি নির্ধারিত, পূর্ব পরিকল্পিত। মানিক বাবুর বামঘরানার বিশ্বাস তাকে ওই পথে চালিত করতই। হয় এইভাবে কিংবা অন্য কোনভাবে।

সমাজ সচেতনতা, রাজনীতি, ধর্ম, অর্থনীতি, বিজ্ঞান, ইতিহাস, প্রথা, আচার এইসব আমাদের এমন করে জড়িয়ে আছে যে আমরা চাইলেও একে ফেলে রাখতে পারি না। ফেলে রাখার চেষ্টা করেছেন এমন সাহিত্যিক আমাদের চারপাশে অনেক আছেন। সেই ব্রিটিশ ভারতের সময়েই যদি যাই, মাইকেল মধুসূদন দত্ত যে বাংলাকে অস্বীকার করে ইংরেজিতে লিখেছিলেন, তাতে যে যশ হয়নি এর পিছনে মূল কারণ হিসেবে ইংরেজি জ্ঞানের অভাব দায়ী নয়; বরং দায়ী তার যাপন ও আচারের সাথে ইংরেজ মূলধারা সমাজের ভীষণ দূরত্ব। এই দূরত্ব তথাকথিত শিল্প সৌন্দর্যের চেয়ে ঢের গুরুত্বপূর্ণ। নিজের জনপদ, যাপনের রীতি ও দেশকে অস্বীকার করে বেশিদূর যাওয়া যায় না। লাতিন সাহিত্যের বিশ্বব্যাপী গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠার পিছনে অজ পাড়াগাঁয়ের গল্পই মূল ভূমিকা রেখেছে, ইউরোপ থেকে ধার করা জ্ঞানের অন্ধকার নয়। শিল্পের সৌন্দর্য চর্চার বোধ থেকে হোক বা মধ্যবিত্তের জীবনের টানাপোড়েনকে বড় করতে গিয়ে রাজনীতিকে সচেতনভাবে এড়িয়ে যাবার একদম 'রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত' থেকেই হোক, রাজনীতিকে নিজের লেখায় প্রবল হয়ে উঠতে না দেয়া এ সময়ের তুমুল জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদও কিন্তু শেষবেলায় এসে জীবন ও বিবিধ রাজনৈতিক বিষয়াবলীর টানাপোড়েন নিয়ে লেখার চেষ্টা করেছিলেন, এই সমস্তই সাক্ষ্য দেয় শিল্প শুধু শিল্পের জন্য এই তত্ত্ব অচল আজকের দিনে।


কবিতাউৎসব: এখন এই সমাজসচেতনতার প্রসঙ্গে একজন সাহিত্যিকের দেশপ্রেম ও রাজনৈতিক মতাদর্শ কতটা গুরুত্বপূর্ণ? আবার এই প্রসঙ্গে এইকথাও মনে হয় না কি, নির্দিষ্ট রাজনৈতিক মতাদর্শ একজন সাহিত্যিকের সাহিত্যভুবনকে বৈচিত্রহীন করে তুলতে পারে? এমনকি হারিয়ে যেতে পারে সাহিত্যিক উৎকর্ষতাও?

রেজওয়ান তানিম: বাংলা সাহিত্যে যারা আলো ছড়িয়েছেন তারা বেশিরভাগই বাম ঘরানার। কেউ সরাসরি যুক্ত ছিলেন কেউবা আদর্শের প্রতি অনুরক্ত। তাতে কি কারো সাহিত্যের উৎকর্ষ কমে গেছে? লেখককে হতে হয় জলের মত, যে চরিত্রের কথা বলছেন বা বর্ণনা করছেন, যদি নিজেকে সেই জায়গায় নিয়ে যেতে না পারেন তাহলে লেখা ব্যর্থ হবার সম্ভাবনা আছে। বিষয়টা লেখকের শক্তির উপর নির্ভর করে, রাজনৈতিক আদর্শ আর লেখক হিসেবে সততার জায়গাটা আলাদা করতে না পারলে লেখক হিসেবে নিজেকে দাবি করা শক্ত।


কবিতাউৎসব: আবার এই সমাজসচেতনতার ভিত্তি সুদৃঢ় ইতিহাসবোধের উপর প্রতিষ্ঠিত হওয়াকে কতটা জরুরী বলে মনে করেন আপনি, এবং কেন? কবি জীবনানন্দ যেমন জোর দিয়েছিলেন সুস্পষ্ট কালচেতনার উপর।

রেজওয়ান তানিম: ইতিহাসের ধারাবাহিকতা লেখককে দুটো বিষয়ে ধারণা দেয় এক তার লেখার মাধ্যম বা ব্যবহৃত ভাষার বর্তমান অবস্থান এবং ভাষার ক্রমবিবর্তন। আমাদের বাংলাসাহিত্যে ব্রিটিশরাজের সময় থেকে ত্রিশের দশক অব্ধি কবিদের উপরে ইউরোপীয় সাহিত্যরীতির যে অন্ধ অনুকরণের প্রচল লক্ষ করি, তার মুলে আসলে বাংলাভাষার সাহিত্যকীর্তির, অমূল্য রত্নসম্ভার সম্পর্কে না জানা কিংবা কম জানা থাকাই দায়ী। বাংলাভাষা যে কোন এক অঞ্চলে এক সময় রাজভাষা ছিল এটা আসলে এস্টাবলিশমেন্ট এর ধারণার বাইরে ছিল। তারা ভেবেছেন বাংলা ভাষায় কিছু নেই, চর্যাপদের আবিষ্কার, শ্রীকৃষ্ণ কীর্তন, ময়মনসিংহ গীতিকা, লালন সাঁইয়ের গান এইসব মাটির কথাকে বাংলার ভদ্র সমাজের তথাকথিত বৈঠকখানার সাহিত্যিকেরা এড়িয়ে গেছেন বলেই বাংলা সাহিত্য বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে গুরুত্ব হারিয়েছে। এই কথাগুলো অনেক তর্কসাপেক্ষ কিন্তু এ সত্য যে, আমাদের সাহিত্যের মাটিবর্তী বিকাশমান ধারাটিকে আমরা নিজেরাই গলা টিপে হত্যা করেছি। এখনো করে চলেছি। রবিঠাকুরের কীর্তন কেন জনপ্রিয় হল না অথচ রাধারমনের ভ্রমর কইয়ো গিয়াগানটির সুর তাজিকিস্তান কিংবা সুদূর রুমানিয়া গিয়ে লোকের মন জয় করেছে প্রশ্নের উত্তর বোধহয় এখানেই। জীবনানন্দ দাশ কি আমাদের লোকজ ঐতিহ্য এমনকি নিজের পৈতৃক ভিটা সুবিখ্যাত চন্দ্রদ্বীপ আজকের বরিশালের গুরুত্বপূর্ণ লোকজ উপাদানের দিকে তাকিয়েছিলেন? বিচ্ছিন্ন কিছু প্রয়োগ ছাড়া আমি তো সেরকম কোন লক্ষণ দেখি না তার সাহিত্যে। তার লেখায় যে গ্রামবাংলার ছবির দেখা মেলে সেও কি আঙ্গিকগত দিক থেকে ইউরোপীয় নয়? জীবনানন্দ নিজেই কি তার ভাষা ও সাহিত্যের এক হাজার বছরের ইতিহাস নিয়ে সচেতন ছিলেন? এইসব নিয়ে তিনি কিছু বলেছেন বলেও চোখে পড়েনি। আমি তাই তার ইতিহাস ও কালচেতনার বিষয়ে বেশ ভালোভাবেই সন্দিহান...


কবিতাউৎসব:  এই যে স্বদেশপ্রেম, নিজের দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যর প্রতি দায়বদ্ধতা- এগুলি একজন সাহিত্যিককে আন্তর্জাতিকতার প্রেক্ষিতে কতটা সীমাবদ্ধ করে তোলে বলে মনে করেন আপনি? অর্থাৎ আপনার সাহিত্য তো প্রাথমিক ভাবে এই বাংলার সুর তাল লয়ের মন্থনই। কিন্তু সেই সাহিত্যের পরিমণ্ডলেও কি একজন বিদেশী তৃপ্তি পেতে পারেন যদি না আপনার লেখা আপনার স্বদেশপ্রেম আপন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের উর্ধে উঠতে পারে? বিষয়টিকে আরও একটু অন্যরকম করে মেলে ধরলে বলা যায়, কালোত্তীর্ণ সাহিত্যের আন্তর্জাতিকতায় পৌঁছাতে গেলে যে বিশ্ববোধ জরুরী, দেশপ্রেম স্বাজাত্যপ্রীতি কি সেই পথে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে না?

রেজওয়ান তানিম: ঘোষণা দিয়ে আন্তর্জাতিক হতে গেলে আন্তর্জাতিকতা আপনাকে ছুঁড়ে ফেলে দিতে পারে। প্রত্যেক লেখককেই লেখার আগে লেখার উদ্দেশ্য জানতে হয়। এইটির অভাব এদেশে প্রবলঅনেকে সারাজীবন লিখেও বলতে পারেন না কেন লেখেন, কার জন্যে কিংবা কী ভেবে লেখেন। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলা ভাষা ও এ ভাষায় সাহিত্যের গুরুত্ব পাওয়া না পাওয়ার সাথে যথেষ্ট আন্তর্জাতিক হওয়া না হওয়ার সাথে কোন সম্পর্ক নেই। লেখক হিসেবে প্রবলভাবে জাতীয়তাবাদী হয়েও, সারাজীবন নিজের অঞ্চলের লোকের দুঃখ-শোক, হাসি-কান্না বর্ণনা করেও গুরুত্ব পেয়েছেন এমন উদাহরণ ভুঁড়ি ভুঁড়ি। আমাদের বঙ্গভূমি ও বাংলা ভাষা বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে এত বেশী প্রান্তিক যে অদূর ভবিষ্যতে পশ্চিম এত দূর পুবের দিকে মুখ তুলে চাইবে এমন ভাবা যায় না। তাতে বাংলাসাহিত্যের কিচ্ছু আসে যায় না। আসে যায় তাদের যারা হীনমন্য। বাইরে থেকে স্বীকৃত না এলে যারা আলো দেখতে পায় না, তাদের কাছে আমাদের কিছু না চাওয়াই ভাল।


কবিতাউৎসব: সাম্প্রতিক অন্তর্জাল বিপ্লবে বাংলা সাহিত্য বিশেষ করে বাংলা কাব্যসাহিত্যের ভুবন কি বিপুল পরিমাণে বিস্তৃত হয়ে গিয়েছে সেটা আমাদের সকলের চোখের সামনেই ঘটেছে ও ঘটছে। আগে লিটল ম্যাগাজিনের পরিসরের বাইরে অনেকটাই ফাঁকা জায়গা পড়ে থাকতো, যেখানে অনেকেই কবিতা লিখলেও তা চার দেওয়ালের বাইরে আলো দেখতে পেত না। আজ কিন্তু যে কেউই তার কবিতটিকে বিশ্বের দরবারে হাজির করতে পারছে। এই বিষয়টাকে আপনি ঠিক কি ভাবে দেখেন? অনেকেই যদিও বলছেন, এতে কবিতার জাত গিয়েছে চলে। এত বিপুল পরিমাণে অকবিতার স্তুপ জমে উঠছে, যে তার তলায় চাপা পরে যাচ্ছে প্রকৃত কবিতা। এই প্রবণতা বাংলা সাহিত্যের পক্ষে আদৌ কি আশাব্যঞ্জক বলে মনে করেন আপনি? না কি এটি আসলেই অশনি সংকেত?

রেজওয়ান তানিম: তিনটে জিনিস হয়েছে...

এক সম্পাদকের কাছে যাবার, তাকে তেল দেবার, বাজার সদাই করে দেবার কিংবা তার হয়ে ঝগড়ায় অংশ নেবার প্রয়োজন ফুরিয়েছে।

দুই প্রকাশের আগে সম্পাদনা, নিজস্ব বিচার বুদ্ধি ও স্থির চিত্তের প্রকাশ গত হয়ে গেছে। লেখা শেষ হবার পর লেখকের আবেগই প্রকাশ হয়ে যাচ্ছে, লেখা নয়।

তিন সাহিত্যে গণতন্ত্র চলে এসেছে। ফেসবুক ব্লগে ভোটাভুটি করে ভাল সাহিত্য নির্বাচন হচ্ছে। যোগ্যতা ও গুণ বিচার কমে গেছে। সাহিত্যে গণতন্ত্র অচল এইটা ভুলে যাওয়া বিপদের লক্ষণ

কিন্তু তবুও এক নম্বরটি এত বেশী গুরুত্বপূর্ণ যে আমি বাকি গুলো ছাড় দিতে রাজি। একে ইতিবাচক হিসেবেই দেখি। অশনি সংকেতের কিছু তো দেখছি না। হাজারো নতুন উপায় আসছে লেখকের লেখা প্রচার। ভালো লেখা বরং লোকের হাতে দ্রুত পৌছাচ্ছে


কবিতাউৎসব: সমাজজীবনে অস্থিরতা সাহিত্যচর্চার পক্ষে কতটা প্রতিবন্ধক বলে মনে করেন? না কি যে কোন সামাজিক পরিস্থিতিই একজন প্রকৃত সাহিত্যিকের কাছে তার লেখার কার্যকারি উপাদান হয়ে উঠতে পারে। যেমন ধরা যাক ওপার বাংলায় বাহান্নর ভাষা আন্দোলন, এপারের সত্তরের উত্তাল ছাত্র আন্দোলনের দশক; বাংলাদেশের একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ। বাংলার সাহিত্যচর্চার ভুবনটাকে তো বাড়িয়েই দিয়ে গিয়েছে বলা যেতে পারে। তাহলে সাম্প্রতিক মৌলবাদের উত্থান লেখক বুদ্ধিজীবী ধরে ধরে হত্যারাজনীতি ও মৌলবাদের পারস্পরিক আঁতাত; নিরন্তর ক্ষমতার ছত্রছায়ায় থাকার বাসনায় বুদ্ধিজীবীদের   ক্রমাগত ভোলবদল- এই বিষয়গুলি অতি সাম্প্রতিক সাহিত্যচর্চার পরিসরকে নতুন দিগন্তে পৌঁছিয়ে দিতে পারে কি? বা পারলে সেটা কি বর্তমানে আদৌ হচ্ছে বলে মনে করনে আপনি?

রেজওয়ান তানিম: সামাজিক অস্থিরতা অনেক মহৎ সাহিত্যের জন্ম দিয়েছে, দেবে। জন রিডের দুনিয়া কাপানো দশ দিন কী আমরা পেতাম সামাজিক অস্থিরতা ছাড়া? কদিন আগে অনলাইনে কথা হচ্ছিল লেখক শমীক ঘোষের সাথে। সে বলছিল তার ধারণা এই মুহূর্তে বাংলাদেশে কথা সাহিত্যে কলকাতার চেয়ে ভাল কাজ হচ্ছে। যেহেতু বাংলাদেশে অস্থিরতা নানাবিধ। ওর এই মত একান্ত ব্যক্তিগত (আমার মনে হয় কিছুটা ভুল) এবং এই অস্থিরতা বাংলাদেশের সাহিত্যে আদৌ কাজে আসছে কিনা তাতে সন্দেহ থাকলেও অস্থিরতা মহার্ঘ এ নিয়ে সন্দেহ নেই।


কবিতাউৎসব: আবার ধরা যাক এই সব নানান জটিলতা থেকে মুক্তি পেতেই একজন সাহিত্যিক বিশুদ্ধ কবিতার কাছে আশ্রয় পেতে ছুটলেন। যেখানে রাজনীতি নেই, সামাজিক অস্থিরতার দহন নেই, আছে শুধু ছন্দসুরের অনুপম যুগলবন্দী। জীবনের জটিল প্রশ্নগুলি এড়িয়ে গিয়েকল্পনার ডানায় ভর দিয়ে ছোটালেন তাঁর বিশ্বস্ত কলম। কবিতা তো মূলত কল্পনারই ভাষিক উদ্ভাসন। কিন্তু সেই পলায়নবাদী কবির কাছে পাঠকের আশ্রয় কি জুটবে? কবির কলম পাঠকের কাছে কতটা বিশ্বস্ত থাকবে সেক্ষেত্রে বলে মনে করেন?

রেজওয়ান তানিম: পলায়নবাদী পাঠকের জন্যে যাবার জায়গা কই রাখছেন যদি পলায়নবাদী কবিকে বের করে দেন। সমাজে সকলকিছুরই দরকার আছে। সকলকে সমাজ সচেতন কিংবা রাজনীতি সচেতন হতে হবে কেন ? বিষয়টা তাহলে একেবারে ক্লিশে হয়ে দেখা দেবে। লেখক লিখবেন, পাঠক পড়বেন- এই সাহিত্যের প্রথম ও প্রধান উদ্দেশ্য। পলায়নবাদী কি সমাজবাদী সে সমালোচকের আলাপ।


কবিতাউৎসব:  সাহিত্যে শ্লীলতা ও অশ্লীলতার তর্ক বহুদিনের। আজও সে বিতর্কের অবসান হয় নি বলা যায়। নিজের লেখা সম্পর্কে অনেক সাহিত্যিককেই অশ্লীলতার দায়ে অভিযুক্ত হতে হয়েছে তার সময়ে বিভিন্ন সমালোচকের কাছে। আপনার সাহিত্যচর্চার জীবনের অভিজ্ঞতার প্রেক্ষাপটে এই বিষয়ে আপনার অভিমতে যদি সমৃদ্ধ করেন কবিতাউৎসবের পাঠকবৃন্দকে।

রেজওয়ান তানিম: অশ্লীল সাহিত্য তাই যা সময় ছেকে ফেলে দেয়। এই নিয়ে বেহুদা তর্কে কোন লাভ নেই। আজ যা অশ্লীল, কাল তাই শিল্প, পরশু তা জীবন আচার...


কবিতাউৎসব: আমাদের এই দ্বিখণ্ডীত বাংলায় কলকাতা কেন্দ্রিক ও ঢাকা কেন্দ্রিক সাহিত্যচর্চার দুটি ভিন্ন স্রোতের মধ্যে কি ভাবে সামঞ্জস্য বিধান করবেন বাংলাসাহিত্যের একজন পাঠক? ৪৭এর দেশভাগ বাংলাসাহিত্যের দিগন্তকে কতটা প্রসারিত করেছে বলে আপনার ধারণা। এই যে কাঁটাতারের দুইপারে ধুটি ভিন্ন ঘরানার বাংলাসাহিত্যের দিগন্ত দাঁড়িয়ে গেল; এইটি আপনি কি ভাবে দেখতে চান?

রেজওয়ান তানিম: বাংলা সাহিত্যের পাঠককে শুধু দুটো ভাগ বা ভিন্ন স্রোত সামলাতে হয় এই বিষয়টা বাংলা সাহিত্যের জন্যে সুখকর নয়। আমি চাই অন্তত দশটা ভাগ বা দশটা স্রোত ধারা থেকে নেমে আসা ভিন্ন স্বাদের সঙ্গে পরিচিত হতে হোক। দেখুন সাতচল্লিশের দেশভাগের আগে বাংলা সাহিত্যের রাজধানী ছিল কলকাতা। একথা সর্বজন স্বীকৃত যে আজও যদি কলকাতা বাংলা সাহিত্যের রাজধানী থাকত (এক ও একমাত্র অর্থে, এখন আপনি যেমন বলছেন দুটো রাজধানীর কথা) তাহলে লালনের গান নিয়ে ফরিদা পারভিন জাপানের ফুকুওয়াকা প্রাইজ পর্যন্ত পৌছাতে পারতেন না। হাসন রাজার গান লন্ডনে বসে সেলিম চৌধুরী গাইতেন না, শাহ্ আব্দুল করিমের গান কালিকা প্রসাদ গাইতেন না। শ্রদ্ধেয় দীনেশ চন্দ্র সেন যখন মৈমনসিংহ গীতিকার পালা গানগুলো সংগ্রহের চেষ্টা করছেন তখন কলকাতার বোদ্ধা ও সমালোচক মহল একে তাচ্ছিল্যের চেষ্টা করেছেন এমনকি কথিত আছে যে, বিখ্যাত একজন লেখক তার কাছে জানতে চেয়েছিলেন পূব্ববঙ্গে এবার ফসল কেমন? যেটা বলবার চেষ্টা করছি তা হল, এই যে এস্টাবলিশমেন্ট; আমার অবস্থান এর বিপক্ষে। এস্টাবলিশমেন্ট এর প্রধান কাজ খারিজ করা। আমি-আপনি-আমরা সবাই এস্টাবলিশমেন্ট এর অংশ। কিন্তু আমাদের বলার যদি জায়গা থাকে তবে সবার কণ্ঠের ভিন্ন সুর, বাংলা ভাষাকে পুষ্ট করবে। মরিচ মান ভাষা বাংলায় চলছে কিন্তু রংপুরের আঁকালি এও তো একটা শব্দ, বাংলা ভাষায়; তাই না? দুটোই থাকুক না। আসামের শিলচর, ত্রিপুরার আগরতলা কিংবা বাংলাদেশের চট্টগ্রাম কিংবা রাজশাহীর ভিন্ন কণ্ঠস্বর আমি তো দাবি করতেই পারি। এর বাইরে লন্ডন কিংবা নিউইয়র্ক। কবি নুরুল হুদা যেমন বলেছেন, ‘যতদূর বাংলাভাষা ততদুর বাংলাদেশআমি তার সাথে কণ্ঠ মিলিয়ে বলতে চাই, যতদূর বাংলা সাহিত্য ততদুর বাংলা ভাষা।


কবিতাউৎসব: আমাদের এই দ্বিখণ্ডিত জাতিসত্ত্বায় সাম্প্রদায়িকতার যে চোরাস্রোত নিরন্তর বহমান,যাকে পুঁজি করে ইঙ্গমার্কীণ মহাশক্তি ও তাদের বঙ্গজ সহসাথীরা ধর্মীয় মৌলবাদের রাজনীতিতে সদাসক্রিয় থাকে; নেট বিপ্লবের দৌলতে সুদূর ভবিষ্যতে সেই সাম্প্রদায়িকতার চোরাস্রোত থেকে কি গোটা জাতিকে মুক্ত করতে পারবো আমরা? আপনার অভিমত! আর সেই কাজে সাহিত্যের ভূমিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে বলে আপনি মনে করেন!

রেজওয়ান তানিম: নেট তো সকলেই ব্যবহার করছে তাই না ? এখন তো গুজব ও সাম্প্রদায়িকতা সম্পূর্ণ এক নতুন রূপ পেয়েছে অন্তরজালের কারণে। দিনে দিনে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবার কথা তাই হচ্ছে। পুড়ে অঙ্গার হওয়া মানুষের ভিডিও যেমন ছড়াচ্ছে, ফেসবুকে ভুয়া পোস্ট দিয়ে ঘরবারি ভাঙচুর উৎসবের মত হয়ে গেছে। এ আরও বাড়বে আগামীতে। আমি একটা কথা বিশ্বাস করি, শিক্ষিত মূর্খের দেশে গনতন্ত্র বিপজ্জনকতা অপব্যবহারে নৈরাজ্য ডেকে আনতে পারে। তাই হচ্ছে এই খোলা পৃথিবীতে...


কবিতাউৎসব: এবার একটু ব্যক্তিগত প্রসঙ্গের অভিমুখে এসে আপনার নিজের লেখালেখির বিষয়ে যদি জানতে চাই, আপনার পাঠকের কাছে ঠিক কি ভাবে পৌঁছাতে প্রয়াসী আপনি?

রেজওয়ান তানিম: পাঠকের কাছে পৌঁছানো নিয়ে ভাবা বহু আগেই ছেড়ে দিয়েছি। কবি লেখক যেমন অনেক রকম পাঠক ও তেমনি। আমাকে যাদের প্রয়োজন কিংবা আমি যাদের প্রয়োজন মনে করি, তারা পাশে আছেন এবং নিয়ত আশীর্বাদ দিয়ে যাচ্ছেন। তাদের এই ভালোবাসা আমার জন্যে অনেক বড় পাওয়া...


কবিতাউৎসব: আপনার সাহিত্যচর্চার এই সময়ে দাঁড়িয়ে কতটা তৃপ্ত আপনি? আর কতটা আক্ষেপ রয়ে গেল? ভবিষ্যতের বাংলা সাহিত্য সম্বন্ধে আপনার মনে কি স্পষ্ট কোন ছায়পাত পড়ে?

রেজওয়ান তানিম: তৃপ্তি এলেই বুঝতে হবে মৃত্যু ঘটেছে লেখক রেজওয়ান তানিম এর। নিজেকে ভাঙার চেষ্টা করছি নিয়ত। হয়ত শেকড় থেকে দূরে থাকার কারণে লেখা কিংবা প্রকাশে অনেক সময়েই ছেদ পড়ছে কিংবা প্রত্যাশার চেয়ে বেশী সময় লাগছে লিখতে কিন্তু তাতে থেমে যাবার কথা ভাবিনা। প্রত্যেক লেখককেই নিজের নিজের যুদ্ধ করতে হয়। আরেকটা কথা, আমি প্রবলভাবে জাতীয়তাবাদী এই মুহূর্তে। উন্নয়নশীল দেশের মানুষ হিসেবে আন্তর্জাতিকতাবাদের চর্চা করার সুযোগ আমার কম। তবে তা কখনোই অন্যের প্রতি আক্রমণাত্মক হয়ে নয় এবং আবেগের বশে নয়। যা খারাপ, তাকে আবেগ দিয়ে অস্বীকার করা পাপ। নিজেকে সবসময় মনে করিয়ে দেই আমি বাংলাদেশের লেখক। রেজওয়ান তানিম ফ্রম বাংলাদেশ এই পরিচয় নিয়েই মরতে চাই। সাহিত্যকর্মের মূল চালিকা শক্তি সীমাহীন আক্ষেপ। এ শুধু আমার নিজের লেখা নিয়ে নয়, অকাল প্রয়াত সাহিত্যিকদের প্রতি ভালোবাসা থেকেও আমার মনে নিয়ত কাজ করে।


রেজওয়ান তানিম এ সময়ের একজন তরুণ কবি। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করা এই তরুণের আগ্রহের তালিকায় রয়েছে বাংলাভাষা ও বাংলা সাহিত্যের বিশ্বায়ন। কাব্যচর্চা তাঁর লেখালেখির মূল প্রেরণা হলেও পাশাপাশি ছোট গল্প ও সাহিত্য বিষয়ক প্রবন্ধ রচনাতেও রেখেছেন দক্ষতার সাক্ষর। উচ্চশিক্ষার জন্য বর্তমানে জার্মানিতে আছেন। প্রকাশিত বই : কবিতাশাদা পরচুল অন্ধকার [অনুপ্রাণন, ২০১৪] মৌনমুখর বেলায় [জাতীয় গ্রন্থ প্রকাশন, ২০১২] গল্প সংকলনঅবন্তি [ভাষাচিত্র, ২০১২] সম্পাদিত গ্রন্থশাহবাগের সাথে সংহতি [ই-বুক, ২০১৩] আন্তর্জাতিক কবিতা সংকলন ‘In Praise-In Memory-In Ink’ ‘In Our Own Words’ ‘Heavens above, poetry below’, [Blurb Publication, Canada, ২০১৩, ২০১৪] সম্পাদিত পত্রিকালিপি (২য় ও ৩য় সংখ্যা), ত্রৈমাসিক সাহিত্যপত্রিকা অনুপ্রাণন