বৃহস্পতিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০১৭

তন্ময় ধর



তন্ময় ধর

শিলালিপি ১

পাথরের মতো কিছুটা পাগল ছায়া ফেলছে আমাদের খেলা। শিকারের রঙ থেকে তীব্র হাড় খসে পড়ছে অভিনয়ের প্রুফ রিডিংয়ে। বরফের ভুল বানান থেকে আমাদের শীতলতার ঝুঁকি নিচ্ছেন ঈশ্বর। মাংসের নগ্নতা থেকে কেটে কেটে শূন্যতার ভিতর শব্দ ফেলে রাখছো তুমি
অসমাপ্ত ঈশ্বরের ফলাফলে আমরা গুছিয়ে রাখছি আগুন। উর্ণনাভ-দোষে সে কাহিনি গোটা একটা জন্মদোষ বুনে রাখছে। শস্যচক্র ও কালপুরুষের মাঝখানে আমাদের শরীরাংশ বহুভাগ জল হয়ে যাচ্ছে। ওলটপালট হয়ে যাওয়া আমাদের খিদে থেকে কাঁটা বেছে উড়ে যাচ্ছে অগুনতি পাখি
কাঁটায় বিঁধে থাকা শেষ রক্তমাংস থেকে আমরা মেরামত করে নিচ্ছি কাহিনি। প্রাগৈতিহাসিক সমস্ত ধাতুবিদ্যার ক্লাসে ঘুমিয়ে পড়া এক ছাত্রীর নোটবুক থেকে তিরতির করে কেঁপে ওঠা চামড়া ছাড়িয়ে নিচ্ছি আমি। ফার্নেসের গাঢ় লাল রঙে তৈরি হচ্ছে মতান্তর






শিলালিপি ২

গুহার কাছে একধাপ সূর্যে, ধরা যাক, তুমিই কথার উত্তর। ছিন্ন শুশুক-কাঠ-জরাগাছ-জীবাশ্ম সব কিছুর ওপর আবার তুমি বরফের মতো ফেলে রেখেছো সম্পর্কটা। জিওলজিক্যালি দীর্ঘতম যৌথ শরীরে হিসেব ভুল হয়।
কশেরুকার ভিতর অন্ধকারে চুঁইয়ে পড়ছে সাত হাজার বছর। ঘুমের রঙে মিথ্যেকথার মতো ব্যবহৃত হচ্ছে আমাদের শরীরাংশ। পায়ের শব্দের আড়াল থেকে গতি বাড়ছে হেমন্তের মাঠের খড়কুটো পোড়া ভুষোগন্ধের। শিকার ও মাংস থেকে অস্পষ্টতম রাত্রি ঢুকে পড়ছে তোমার চ্যালকোলিথিক ডিশে
সংসারের খুব পুরনো ম্যারিনেটে জেল্লা আসছে মাংসে। দই-হিং-নুন থেকে হিসেবের খাতাটা হারিয়ে ফেলছি আমি। আহারান্তে হাত ধুতে গিয়ে শীতলতম নদীর ঢাল বেয়ে দ্রুত ছোট হয়ে যাচ্ছে আমাদের ছায়া






শিলালিপি ৩

অস্ত্রের নিয়ম আমার পাঁজর থেকে বের করে নিচ্ছে তোমার মৃত্যু। বেশী করে জল খেয়ে শিশুর দিকে খেলছো তুমি। কালপুরুষের দৃশ্যত কুকুর পেরিয়ে কাঠকয়লা হয়ে শুয়ে থাকছে আমাদের সাংসারিক খরচ। সত্যিই কি ধানদুখী অকালবৃষ্টিতে আমাকে হাঁটতে হবে?
তোমার রঙের বিষাদে আমি বিশ্রাম নিচ্ছি। প্রাচীন হিমাঙ্কের শব্দ ও নাভি থেকে তোমাকে লুকোনো ছবির কথা বলেই যাচ্ছি... মৃত পাখির কঙ্কালে আর সাপের খোলসে। শীত কই? সাংসারিক টান থেকে লাফ দিচ্ছে হরিণশিশু... ফসলের সমস্ত নির্দেশ নষ্ট করে
সেই কমলা আলোর অনেক নীচে নদীমাতৃক স্তন্যে নির্ধারিত শিল্পীর মতো ঘুমিয়ে আছো তুমি। তোমার স্মৃতির নখ কাটতে কাটতে গল্পের প্রুফে ভুল শব্দের আঠালো কুয়াশা ঢুকে যাচ্ছে। শীত কোথায়? ভোরের অগুনতি পাখিতে আটকে পড়ছে আমাদের সম্পর্কটা






শিলালিপি ৪

এই চুনাপাথর থেকে, দ্যাখো, দীর্ঘতমে খুলে যাচ্ছে তোমার নখ। অসম্ভব এক ধাতব মূর্তি থেকে ভাঙা ভাঙা ভাষায় আমি লিখে দিচ্ছি তোমার ঠোঁট, বর্ম, আশ্রয় ও আত্মপরিচয়। ভেজা হাওয়ায় জড়িয়ে রাখা পশুপালকের তামাটে মুখ ওঠানামা করছে সম্পর্কের জ্বর
উষ্ণতা সম্পর্কে ঢের জেনে অগুনতি নিওলিথ পাখি আমাদের মিলন থেকে উড়ে যায়। ফ্রিজিং লেভেল থেকে ব্যথার ওষুধ খেয়ে আমি তোমার দৈব ফর্সায় নেমে আসি। শীতল সংসারের টানে হাত শক্ত করে রাখি
বাকি নক্ষত্র পর্যন্ত কুয়াশার আলো ভেঙে তোমার মনের অনেক ভিতরে রক্তচন্দন ঘন হচ্ছে। অনেক মুখোশ ও আলোর তীব্রতায় পথটা দুলে উঠছে প্যালিওলিথ সুরের মতো। তুমি আবার বেছে নিচ্ছো ফেয়ারনেস ক্রিম






শিলালিপি ৫

আদিম ঠোঁটের দৃশ্য থেকে খুব আস্তে চুরি হয়ে যায় আমাদের সম্পর্কের খাবার। নিওলিথ জলে ভেসে থাকা একটু কথা থেকে বিপজ্জনক দুগ্ধকৌশলে দাঁড়িয়ে পড়ে পর্যটক। আমার জলঘড়ি থেকে একটা নীল অংশের পেছনে ছুটতে শুরু করো তুমি
ম্যাজিক থেকে বাতিল হওয়া আরেকটা সুরের ভিতর সমস্ত পালক ঠিক রাখছে অগণিত পাখি। খেলার মতো দৃশ্যপথের ভিতর থেকে তুলে আনছে অভিনয়ের শস্যকণা, গন্ধ, আয়ু ও জন্মান্তর। ডিমের প্রবল কুসুমে গল্প পালটে যায়
আগুনে, রান্নায়, ব্যঞ্জনে, ফুটন্ত জলে সেই আলো পড়ে আবার। মর্মোদ্ধার করতে করতে অন্ধকার নামে তোমার দেহবোধে। দেহের বাকি অংশ অকালবৃষ্টিতে ভিজে যায়। রঙের অনেক নীচে আমরা আবার দেখা করি