বৃহস্পতিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০১৭

পৃথা রায় চৌধুরী



পৃথা রায় চৌধুরী

সাড়ে পনেরো আনা

কিশোরী করিডোর ছেড়ে যায় না স্বপ্নেও
প্রায়ই অন্ধকার মাকড়সা সিঁড়ি বাই
ছুটে পেরোই দিশাহারা কল পেতলের সারি
সকাল সাতটা থেকে একটা দুপুর এরাই
কতো চইচই গল্পে।


মাঝে মাঝে "ফিঙ্গার অন ইয়োর লিপ্‌স"
লাইনে ঢুকে মহীয়সী হবার শিক্ষা তেরো ভাবনায়,
হরমোন খেলা এ মা, ছি ছি!
সাদা স্কার্ট লেফট রাইট ওয়ান টু'র হাতে কোমরে
উঁচু পাঁচিলের সারি সারি চোখ, গেরুয়া দিন।


প্রথম তিন ডান আঙ্গুল বাঁ চেটো কোণাতলায়
তিন চারবার হালকা থুপথুপ, চটাপট চটাপট অশোভন
মুখ হাঁ? পোশাক পোশাক খেয়াল রাখা;
ভালো মেয়ে, দুপুর থেকে
ঠাকুরঘরে শুধুই কপাল ঠুকে নমো নমো।




সওদা

কিছু কিছু ছন্দপতন ব্যাংলাফ দিয়ে
একেকটা রোদপুকুর বাজারি করে বলেছে
ফের উঠেছ, এবারে কার পালা?
একঘেয়ে শঙ্খচিল টেক্কা দিলেও নির্বিকার
পসরা সাজিয়ে বোসো মাঝহাটে।


জ্বোরো দেওয়াল পরতে পরতে
দামী খসিয়ে এক্কেবারে দই ভাত, কুমোর
একটাও সানকি রাখেনি; অগত্যা
মেলামাইন, অগত্যা কোলছাড়া বিরতিতে
সেগুন ভেলভেট মেশা কামড়।


মাঝামাঝি কাঁচবাহারে টাকাগাছ
হলদেটে মরা জল, দেখেশুনে
আবার এসো কিন্তু,
তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না...
বুঝলে? তোমাকে প্রয়োজন
বড় বেশি রকমের।




দিও কিন্তু

এই যে আমায় চেনো, জানো, বোঝো
এই যে ভাবো মেয়েমানুষ, বুদ্ধিহীন
এই যে আমার দুর্বলতা খোঁজো
ভয়ও পাও,
জানো, ভালোবাসার ফাঁসে, অবস্থা সঙ্গীন।
দমবন্ধ হবার আগে
মুক্তির উপহার দেবো সুদৃশ্য মোড়কে,
শুধু বদলি উপহার চাই...
পরের বার চিনে নিও
ভাগহীন দিও একটা সিনেমা, সস্তার সেসব পছন্দ
যা দেবে বলেও...
পরের বার শুধু আটচল্লিশ ঘন্টা দিও
বিনা বাঁটোয়ারায়,
শুধু সত্যির ধাপে পা রেখে,
তারপর?
এবারের মতোই চলে যাওয়া,
এবারের মতোই মুক্তি...
যুক্তি... নেই।




শাস্তি মকুব

ঘুমিয়ে পড়তে পড়তেও বুঝতে পারছি,
চোরকাঁটা কতো প্রিয় হয়েছিলো
ঘুমের পালক সরিয়ে অজস্র লাল বিন্দুর চাষ করেছি স্বেচ্ছায়
বিন্দুরা ক্রমশঃ পাহাড়ি নদী।


যেসব সনাতন সুর জপমালা ধরিয়েছিলো হাতে,
তারাও নীরব, আপ্রাণ বোঝার চেষ্টায়
কখন জপমন্ত্রে শুধুই তোমার নাম ধ্বনিত হওয়া শুরুর লগ্ন
এখন রাত অর্ধেক, তুমি জেগে?


অ্যালবাম ঘেঁটে সমস্ত রঙ ছড়িয়ে দিয়েছি চেনা বৃত্তে
আমার অনুপস্থিতি তুমি টের পাবে না জেনেই,
হ্যাংলামির কোনো সুযোগ হাতছাড়া না করে বলেই ফেলি
বহুমাত্রিক ভাবে জানবে তুমি, জানবেই...।




স্বভাবসিদ্ধ

ক্রমাগত দেওয়াল তুলে তুলে ভুলে গেছি,
অন্যায় পাপ ক্রূরতার ক্রমিক সংখ্যা;
ইচ্ছে অনিচ্ছের অপর প্রান্তে শুধু
হুকুম ভেসে আসে, আটক করো
একান্ত কর্তব্য, মারণচক্ষু আড়াল।


তুমুল ঝড়ের রাতে ভাঙ্গা কাঁচের আলোয়
পথ হাঁটলে, আগুন আগুন কিছু অন্ধকার
ছায়া নামের সঙ্গী হয়,
কিছু দয়া, কিছু অবহেলায়।


খুঁজতে গিয়ে দেখি,
আমার কাঁচা মাটির ঘর ধুয়ে যাচ্ছে
লক্ষ দরজা সমেত,
আগল খোলার অবকাশ নেই।


একটা দুটো করে
অগুনতি প্যারাসিটামল রাত
সিঁড়িভাঙ্গার অঙ্ক কষতে বসে,
মুহূর্তে ইচ্ছামৃত্যুর দাবিতে
একটি বিলাসী তারা খসে পড়ে।


অভ্যেসবশে পরিযায়ী ফিরে যায়...