বৃহস্পতিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০১৭

অলভ্য ঘোষ




অলভ্য ঘোষ

কনকলতা

শনি রবি দূরদর্শন
বাংলা হিন্দি সিনেমা;
শাটার টানা সাদা কালো টিভির
তখন জামানা।
এন্টেনায় কাক বসলে পরে ঝিরি ঝিরি ঝিরি
কথায় কথায় বিঘ্ন ঘটে ভীষণ বিচ্ছিরি।
তবু কত অপেক্ষা কত আকুতি
পাড়ায় কটি টিভি ছিল সহজ সে গুনতি।
ভোটের খবর; ক্রিকেট ম্যাচ; সব কিছু ঘিরে
যার বাড়িতে থাকত টিভি উপচে পড়ত ভিড়ে।
এমনই এক বাড়ি ওলির মেয়ে কনকলতা
নামটা না হয় মিথ্যে বললাম শুনবে তার কথা?


কনকলতা কনকলতা
বাড়িওলির মেয়ে
সুযোগ পেলেই লুকোচুরি
খেলে আমায় নিয়ে!
জানলাখানা হেংলা হয়ে
ডেব ডেবিয়ে দেখে
কনকলতা ইচ্ছে করেই
চুল এলিয়ে রাখে!
রোগা ঢেংয়া ছেলে আমি
ভীষণ লাজুক
এক গোছা বই পড়ে তখন
হয়েছি আহাম্মুক!
বিপ্লব এক রক্তে আমার
আগুন ধরিয়ে দেয়;
পাল্টে দেবো সমাজ টাকে
এক দিন নিশ্চয়।
কনকলতা বড্ড ছোট
ফ্রক পরে নীল সাদা বুটি;
কথায় কথায় আমার সাথে
করে চলে খুনসুটি।
স্নানের ঘরের ভাঙা দরজা
ঢুকে পরে রোজ !
বালতি ভরে জল পড়ে যায়
দুটি মন নিখোঁজ।
কনকলতা মুচকি হাসে
বাঁকা তার চাউনি;
কেবলা আমি ছেঁড়া গামছা
শরীরে দিই ছাউনি।
সুচিত্রা সেন উত্তম কুমার
সেদিন রোমান্টিকতা দামী;
একদিন ঘাপটি মেরে পরীক্ষা নিলো
আমি কত বড় সংযমী।
এটাই কি শেষ; দুপুর বেলা ফাঁকা বাড়ি
সিনেমা গড়িয়ে চলে
কুসুম তেলের গন্ধ বিলয়
অঙ্ক খাতা ফেলে।
জান কবুল আর মান কবুল;
বিকচ্ছে দেশ;
ভালই হত এসব ভুলে
প্রেমিক হলে বেশ।
বাড়িওলা বাড়িওলি
আমায় বাবাজীবন বলে;
পিঠে পুলি পার্বণেতে
জামাই আদর কৌশলে।
ডিসেম্বরে ছুটির শেষে
গড়ের মাঠে পিকনিকে তে
কনকলতা ঘুরেছিল
আমার হাতে হাতটি রেখে।
ঠিকিত ছিল এমনিত হয়
সব প্রেমেরই একি-তো সিন;
স্বপ্নদোষ ও একই রকম
ভীষণ রকম অবসিন।
উল্টে দেবো পাল্টে দেবো
চশমা তখন আমার চোখে;
আমার স্বপ্ন ঘুমাতে দেয় না
আমায় সদা জাগিয়ে রাখে।

কনকলতা কনকলতা
নবম শ্রেণী হল;
আমি তখন কলেজে পড়ি
ঘি থেকে আগুন দূরে থাকই ভাল।

দূরদর্শনে ছবির ফাঁকে বিজ্ঞাপন বিরতি;
শেষ অংশে বলতে পারো কি হবে পরিণতি?

দূরে দূরে দূরে
নিজেকে সরিয়ে
অন্য এক পৃথিবীর
আমি ঘোরে।
কনকলতার স্বপ্ন গুলো
চার দেয়ালের ঘরে।
সমাজতন্ত্র কাকে বলে
কনকলতা জানে?
সাম্যবাদীর ভালবাসা
তাকে কখনো টানে!
সুখী গৃহকোণ
সচ্ছল তিনজন
ছোট পরিবার
সুখী পরিবার।
নিরাপত্তা, নির্ভরতা,
নিশ্চিন্ত জীবন!
মধ্যবিত্ত বেঁচে থাকার
এ টুকুই মূলধন।
সম্পর্ক চুক্তিপত্র;
কিছু সুযোগ সুবিধা!
এমন তরো ভালবাসা
একটা খোঁটায় বাঁধা।
যেমন ছাগল, গরু
তুইকি তেমন করে;
চাইছিলি
রাখতে আমায় ধরে।
দূর তুই কেন চাইবি
সিস্টেম চায়
জীবন কাটুক চাকরি
আর মাস কাবারির
হিসাবের খাতায়।
কনকলতা কনকলতা
তোরা খাঁচার পাখি;
আকাশ আমার
ভালো লাগে
জঙ্গলেতে সুখী।
লড়তে হবে লড়তে হবে
অনিশ্চিতের সাথে
অনেক মানুষ পাশে পাব
তুই নাইবা রইলি
কি যায় আসে তাতে!

সন্ধ্যে বেলা ভেজানো
দরজার কোণে;
কনকলতা দাঁড়িয়ে ছিল
একাকী নির্জনে।
- কে! কে ওখানে?
-আমি!
জীবন বিজ্ঞান বইয়ের ছলে
সেদিনের আগমনী।
কি মিহি কণ্ঠ যে তোর
এখনো কানে লেগে।
বড় বড় চোখ দুটো ছিল
জলে ঠাসা
নিদারুণ আবেগে।
তারপর আরো একদিন এলি
মাথানিচু করে বই ফেরত দিতে
ভাবলি পাথর আমি
মনে মনে চেয়েছিলিস
প্রতিশোধ নিতে!

- মেয়েটা পড়াশোনায় অমনোযোগী।
একটু তোমার সময় হয় যদি।
-না.....মানে.... ইয়ে.....
-আসলে দুশ্চিন্তা ওকে নিয়ে।
ঠিক আছে। ঠিক আছে।
দেখি কাছেপিঠে মাস্টার কে আছে।

আরো এক সন্ধ্যে বেলা
কোচিং যাবার পথে;
অন্ধকারে দাঁড়িয়ে ছিল
আমার জন্য ওৎ পেতে।
অনেকটা পথ হেঁটে ছিলি
পেছন পেছন চুপটি করে
সেসব ছেলেমানুষি মনে আছে;
কনকলতা তোর সংসারে
আজ আমার কথা মনে পরে?
না হয় আমি পাষণ্ড এক
না হয় ভালবাসতে জানি নাকো।
বিশ্বাস কর একটি বারো
তোর কথা ভুলিনিকো!

বলতে পারো কনকলতা
এখন কেমন আছে;
সুগার, প্রেসার, থাইরয়েড
এসব কি তাকে ধরেছে?


কনকলতা হঠাৎ করে
ভীষণ উগ্র সাজে।
বন্ধু ও জুটে গেল
কিছু আজে বাজে।
তার যে কত প্রেমিক
দেখাতে সে ব্যস্ত;
সহজ সরল ভালবাসার
অকালে হলো অস্ত।
সকাল বেলা
স্কুল থেকে ফেরার পথে;
সাইকেলেতে চেপে
একটা ছেলের সাথে।
সন্ধ্যে বেলা
কোচিং কামাই করে;
অন্য আর এক ছেলের সাথে
এগলি সেগলি ঘোরে।
বেশতো ভাল কনকলতা
সুন্দর তোর প্রতিশোধ।
আঘাত গুলো প্রত্যাঘাতে
হবেই হবে শোধবোধ।

তুমি ধনী কেমন করে;
তোমার কি আছে টাকশাল।
একদলের সবকিছু লুটে
আর একদল হচ্ছে মালামাল।

আমি তখন অন্য পাড়ায় থাকি;
কনকলতার বিয়ে!
ওর বাবা নিমন্ত্রণ করে গেল
বিয়ের কার্ড দিয়ে।
অনেকটা পথ হাঁটার বাকি
যাওয়া হয়নি আর;
লোকের মুখে শুনতে পাই
কনকলতা জমিয়ে এখন
করছে সংসার।

তারপর
বহুদিন বাদে
একদিন দেখা হল
কাঠ ফাটা রোদে।
কনকলতা কনকলতা
একি সেই মেয়ে;
কানামাছি খেলে ছিল
যে আমাকে নিয়ে।
মুটিয়ে গেছে
সঙ্গে ছেলে স্কুল ব্যাগ কাঁধে।
পাশ কাটিয়ে বেড়িয়ে যেতে
কোথায় যেন বাধে!
মুচকি হাসি;
ছেলেটার গাল টিপে।
জিজ্ঞাসু শিশু দৃষ্টিতে
পা থেকে মাথা অবধি
নিচ্ছে আমাকে মেপে!

কনকলতা বলে;
-ইনি তোমার মামা হয়!

ভালোই লাগে নিত্যনতুন
হরেক পরিচয়।

অনেক চ্যানেল
এখন ডিস এন্টেনা
কাক বসে না
দূরদর্শন
কেউ দেখেনা!





খোঁজ

বিকালবেলা সময় পেলে হাঁটতে বেরাই!
টালিগঞ্জ, লেক গার্ডেন, বাবুঘাট, মাঝের হাট, কিংবা
অচেনা কোন স্টেশন; চুপটি করে বসে থাকি ।
মানুষ দেখি জীবন খুঁজি! কে কাকে ভাঙ্গাবে।
কে কি বেচবে এই চলছে দুনিয়া ময়।
মানুষ ছুটছে কেউ স্থির নেই। আর ছুটছে সময়।
কেউ হোঁচট খেয়ে পড়ে যাচ্ছে আবার উঠে ছুটছে।
কেউ বা আর উঠে দাঁড়াতে পারছে না;প ৃথিবী থামছে না।
ট্রেন আসে ট্রেন চলে যায় ভিড় হয় ভিড় ও কমে যায়।
পাশে এসে বসে মুখে মেছতার দাগ;
কিংবা চুলে কলব করা, অথবা কানে হেডফোন তরুণী;
আপন মনে হাসছে কাঁদছে !
এ এক রঙ্গালয় বিনা টিকিটে দেখি নাটক।

আমার মাটির শরীর মাটি হল জীবন বৃথাই গেল;
বেচার মত কিছুই পেলাম না।

মেসেজ আসে এক টাকায় একশ কোটি টাকা
জেতার সুযোগ। মোবাইল টা আর সাথে নিই না।
স্বপ্ন ফেরি করে ফেরে স্বপ্নচোরে রা।

স্বপ্ন খুঁজছে মানুষ, প্রেম খুঁজছে মানুষ,
শরীর খুঁজছে মানুষ, টাকা খুঁজছে মানুষ,
সম্মান খুঁজছে মানুষ, চাকরি খুঁজছে মানুষ,
গদি খুঁজছে মানুষ, ভিটে খুঁজছে মানুষ,
একটা মন ;
এক টুকরো আশ্রয় খুঁজছে মানুষ।
মন্দির, মসজিদে ভগবান খুঁজেছে মানুষ!
ভূত খোঁজার মতো। নাকি তন্ন তন্ন করে
চোর খোঁজার মতো!

বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডে খোঁজ চলছে কয়েক টুকরো
সরিষা দানার মতো গ্রহ-উপগ্রহে
অতি ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র প্রাণের।

আমি খুঁজছি নিজেকে রোজ নিত্য নতুন করে।
আত্মা খুঁজছি আমি। নিজের ভেতর ডুব গেলে।

আর যখন তা পেয়ে যাব; স্টেশনের অর্ধ নগ্ন
কালো তেলচিটে ছেঁড়া জামা প্যান্ট পরা
ডেব ডেব করে চেয়ে আপন মনে
বিড়বিড় করা পাগল টা আর আমার
কোন প্রভেদ থাকবে না। এখন ওরও তাড়া
নেই আমার ও তাড়া নেই। সেদিন ওর মত
আমারও হারাবার কিছু থাকবে না।
আর বাড়ি ফিরতে হবে না ;
পৃথিবীটাই একটা বড় সংসার হয়ে যাবে।

কে কোথায় যাচ্ছে আসছে, কে কি খাচ্ছে,
কি করছে, সব থেকে দৃষ্টি শক্তি সড়ে এসে
সুষুম্না কান্ড বেয়ে ঢুকে পড়বে সুপ্ত কুলকুন্ডলিনীর
ভিতর। জাগ্রত যে দৃষ্টি আর নড়বে না!
তখনি হয়তো পেতে পারি আমি অবিচ্ছেদ্য অনন্ত।
এখন যা পাচ্ছি সবি খোলামকুচি।

এ পৃথিবীতে সবাই পাগল তফাৎ শুধু
কেউ বুঝতে পারে আর কেউ বুঝতে পারে না।

রোজ আমি সেই দিন টার অপেক্ষা করি;
যেদিন ভুলে যাব আমি কে;
কোথা থেকে আসছি; কোথায় যাব।




বিচিত্রবীর্য

মনের উপর এক বিন্দু পড়ে গেলে
হৃদপিন্ড ফুটো হয়ে যেতে পারে হয়তো;
মেঝের ওপর পরলে অ্যাসিডের মত
পোড়া দাগ হয়ে যেতে পারে ।
অন্তর্বাস ভরে যায় ছোপ ছোপ দাগে।
পায়ের কোথাও এক বিন্দু শুকিয়ে কাঠ
হয়ে গেলে খুঁটে দিলেই সেটা ঘা হবে অনিবার্য।
জীবনের যত টনটনানি ঝনঝনানি;
খাতায় কলমে সৃষ্টির পরতে পরতে
লক্ষ কোটি শব্দের ভিতর একটি ওঙ্কারে।
সৃষ্টির আদি কাল থেকে ব্রহ্মাণ্ডে পরম
ব্রহ্মে মিশে। মিটিংয়ে মিছিলে
দৌড়ে লড়াইয়ে কিংবা একটা টুকরো
শান্তির জন্য ধ্যান মগ্নতায়! নেতিয়ে পড়া
কিংবা চাঙ্গা। সমস্ত সত্তায়, উন্মেষে পতনে!

রাত্রি দিন পৃথিবীর বোঁটা সহ স্তন দুটো
যে মুখের ভেতর পুরে বসে আছে!
ইচ্ছে মত দাঁত, নখ, চোখ, জিভ, ঠোঁট
দিয়ে খেলে চলেছে।

সেও আর কেউ নয় ; মহাভারতের বিচিত্রবীর্য।
ড্রাইভার; চালিকা শক্তি।






নেশা

ঢাক বাজছে ! পটকা ফাটছে! পুজো! আলোর রোশনাই;
তবু জীবন টা অন্ধকার লাগছে কিছু করতে পারছিনা;
কিছুই করা হয়ে ওঠেনি!
আমাকে কারণবারি সেবন (মদ খেতে) করতে লাগে না
এমনিই মাতাল। এতো প্রকারের নেশা আছে আমার!

জানি আপনাদেরো অনেক নেশা।

পৃথিবীতে এমন নেশা করুন যাতে আয়ু ও সৌন্দর্য
দুইয়ই বৃদ্ধি পায়। মানুষ তারিফ করে আপনার নেশার।

শুভ শুভ দীপাবলী আপনাদের জীবন সুখ সমৃদ্ধিতে ভরে উঠুক।







এক গোবেচারা লোকের গল্প

লোকটার সোয়া দুই কাঠা জমির ভিতর
ছ-ইঞ্চি পাঁচিল ঢুকিয়ে দিল প্রতিবেশীরা ।
লোকটা কোন প্রতিবাদ করেনি ।
যেমন প্রতিবাদ করেনি বেগার খেটে
যেতে ; কিংবা সরকারি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে
চিকিৎসার নামে ডান চোখের বদলে
বাম চোখে ভুল করে অস্ত্র প্রচারে ।
লোকটাকে দেখলে আমার বড় করুণা
হয় ।ভোটের দিন ভরা রোদে উদোম
মাথায় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকে ।
ব্যালট বাক্সের কাছে গিয়ে শোনে তার
ভোট পড়ে গেছে ।






-কেডা দিল ?

লোকটা একবারও ভাবে না।
দেখে না দিন বদলের কেয়ামতের স্বপ্ন।
দেখেছে স্বাধীনতা ; দেশভাগ ;কংগ্রেস
জামানা ; বাম জামানা ; কত কি ।
যারা দু নয়া ভাড়া বাড়ার জন্য ট্রাম পুড়িয়েছিল
কলকাতার রাস্তায় তারাই যখন সরকার হয়
ভাড়া বাড়ায় দু টাকা ।
যারা পার্লামেন্টে প্রতিবাদ করেছিল সরকারি চেয়ার
টেবিল ভেঙ্গে, পাবলিক প্রপার্টি তচনচ করে,
পুলিশ কে ক্ষমতাসীন সরকারের পোষা কুত্তা বলে
মুখে কালি লেপে দিয়েছিল।
তারাই আজ ক্ষমতায় এসে বলে;
সরকারি গাফিলতিতে রোগী মারা গেছে বলে
হসপিটাল ভাংচুর করা যাবে না। আইন আনছি।
তোমার বাড়ি জমি বেচে ক্ষতিপূরণের টাকা তুলে নেব।





আর যার কিছুই নেই?

পাড়ার টেম্পু মাস্তানের মত হয়তো বলবে দুটো
কিডনি খুলে বেচে দেব। দেখ কেমন লাগে।

পুলিশ আজ অত্যন্ত নিরপেক্ষ!এটাই জোক অফ দ্যা ডে।

রাজা আসে রাজা যায়
উলু-খাগড়ারা একি তিমিরে গড়াগড়ি খায়।

রক্ত মাংসের মানুষ এত নির্জীব হয় কি করে!
হিংসা নেই; নেই প্রতিশোধ পরায়নতা ।
ভগবানও দুবেলা পূজা আরতি না পেলে সে কি
ভগবান থাকে? পাথরেও তো আবহ-বিকার
হয়।

অনাহার,মহামারী;বউকে ভোগ করে বাবুরা পয়সা দিয়ে ;
মহাজন আপাদমস্তক ক্রোক করে তাকে ।
লোকটা শুধু ভোগ করে দুঃখ তবুও খিচরে যায় না।
নিদেন পক্ষে খিস্তি মেরেও ভাগ করে না ; দুখের বোঝা ।
যখন ওর ছোট ছেলেটিকে পুলিশ ভ্যান এসে
তুলে নিয়ে গেল মাওবাদী বলে ;ও বলল "বেশ
করেছেন "এমন টাই যেন স্বাভাবিক ছিল!



আমি মানুষ

কেবল সুপ্রভাত ও শুভ রাত্রি বলা বন্ধুরাই ফেসবুকে বেশি।
কি ফর্মাল মানুষগুলো। বেঁচে থাকার তাগিদে আমিও ব্যস্ত তবে এতটা ফর্মাল নই।
মানুষ গুলোকে দেখতে ইচ্ছে করে। শব্দের স্পর্শে ইচ্ছে করে ছুঁতে;
উপেক্ষা করে যন্ত্র বাক্সের বন্দী দশা। আমি তো যন্ত্র নই। আমার ঘুম পায় খিদে পায়;
অনুভূতির সিক্ততায় হাবু ডুবু খেয়ে ইচ্ছে করে ভালবাসতে।
আমার একটা হৃদপিণ্ড আছে অবিশ্বাস আর সন্দেহের ঢিল এসে লাগলে টুকরো
টুকরো ও হয়ে যায়। ফেবিকুইক দিয়েও আর জোরা লাগেনা।
যন্ত্রও বিকল হয় আমি তো মানুষ।

আমার হাত পা লিভার। চোখ দুটো লেন্স। মস্তিষ্ক মেমরি। হৃৎপিণ্ড হার্ড ডিস্ক।
আমাকে যন্ত্রের সাথে তুলনা করতে পারো। তবে যন্ত্র বলও না। ভগবান ছাড়া;
আমাকে বাজানোর যন্ত্রী নেই এ পৃথিবীতে। আমাকে সাজানোর মত নেই প্রকৌশলী!
আমার যন্ত্রণা গুলো তাই ভোলানো যাইনি। যন্ত্রের কোন যন্ত্রণা নেই।
সে একই ছাঁচে উৎপাদন ক্ষম ক্রমান্বয়ে!

মানুষের সর্বোত্তম, অতুলনীয়, ক্লাসিক যা কিছু রোজ রোজ জন্মায় না।
আমি মানুষ জেরক্স মেশিনের মত রিপ্রোডাকটিভ নই।




মুখে গামছা বেঁধে রাজনীতি! বেশ হয়েছে।

লোকটা একটি বারো বলল না;
-বাবু গো তোমরা যে বলেছিলে গরিব থাকবে না ,
তোমরা যে বলেছিলে বেকার থাকবেনা, তোমরা যে সাধু বেশে
বলেছিলে পরিবর্তন!ক্ষমতায় এসেইত বে নাকাপ বেড়িয়ে এলো চোর।
মানুষের সঞ্চয় লুট হলো! ভাগবাটোয়ারা করে খেলে তোমরা।
আমরা ডেঙ্গুতে মরছি মশা মাছির মত আর তোয়ালে মুড়ে যত্ন
করে ঘুষের টাকা রাখছে মেয়র। মানুষ আর কুকুর ছাগলে
কোন প্রভেদ নেই! বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও;বেটি বেশি বাড়াবাড়ি করলেই
খতম করে দাও। গৌরী লঙ্কেশ।রাজনীতি মুখোশ ছাড়া কে করেগো বাবু?






লোকটা একবারও এ প্রশ্ন করল না।

প্রতিবেশীরা ভাবল তাসের ঘরের মতো এবার ভেঙে পড়বে
লোকটার সততার অহংকার !যাদের মান নেই তারাই মানহানির কথা ভাবে।
লোকটার কোন প্রাপ্তি অপ্রাপ্তির কামনা নেই ;নেই আক্ষেপ।
লোকটা ভীষণ উদাসীন তার ভবিষ্যতের প্রতি। ভবিষ্যৎ কে দেখেছে;দেখেছে
অতীত। বর্তমানেও তার ছায়া। এত সহজ এত সরল আমি আর কাউকে দেখিনি
পৃথিবীতে। জটিলতার কোন ঘ্রাণ নেই তার জানা। লোকটা আমার কাছে এক
গোবেচারা মানুষ এর সংজ্ঞা ।

একদিন দেখি সে লোকটা আমারই মতো মুখ খুলল। চাইল চালাক এই পৃথিবীর
সাথে সব সম্পর্ক থেকে ছুটি। শঠতা ছাড়া এরা আর কিছুই জানে না ।
সহজ ভাবে যখন মুখ দিয়ে জল খাওয়া যায়;এরা নাক দিয়ে খাবে।
নিঃশ্বাস নেবে নাকের বদলে মুখে।এটাই নাকি আধুনিকতা। হেঁচে কেশে একাকার।
তবুও কেউ থামছে না ।কারণ দুর্বোধ্য!

ঠাণ্ডা মাথায় খেজুরে পিরিতের অছিলায় লোকটাকে শাসাতে এলো কয়েকজন ।
বলল ;
-তুমি বড় প্রাচীন ।সকলের জীবিকা বদলেছেনাপিত পুজো করে ।বামন চুল কাটে।
গোয়ালা ঘানি ঘোরায় । কলু দুধ দোয়।

লোকটা বলল;
-সে দেখেছে সকল কেই একি বৃত্তি-নিতে।চুরি!সবাই কম বেশি মল উদগিরন করে চলেছে
মলদ্বারের বদলে মুখ দিয়ে।পায়ু-তো খেতে পারে না তাই বাতকর্ম ছাড়া
তার আর কোন কাজ নেই।মানবতার লিঙ্গ বিকৃত কামে খইতে খইতে বিলুপ্তপ্রায়।

কোমল লোকটাকে হঠাৎ করে কেমন কঠিন বলে মনে হচ্ছে আমার ।
মনে হচ্ছে সে জাগছে ; যেমন জেগেছে সিঙ্গুর,নন্দী গ্রাম,জঙ্গল মহল, নকশালবাড়ি ,তেলেঙ্গানা !
যেমন জেগেছে ভিসুভিয়াস।