মৌ
মধুবন্তী
শীত মানে
শীত মানেই হলুদ গাঁদা
বসন্ত রাগ,মাতাল হাওয়া
শীত মানেই ঠোঁটের সাথে
ঠোঁটের বাড়ি; ঠকঠকানি,
গম্ভীরাতে শ্যাম
প্রসাদের তবলার বোল,
মধ্য রাতে কৈলাশখানি
শীত মানেই বুকের ভেতর
অশ্ব খুরের উথাল-পাতাল
উলটো বাতাস খেয়ালি রাগ, বেখেয়ালের টানাটানি
শীত মানেই গাছের পাতার
কান্নাকাটি টুপুস করে ঝরে পড়া ;
উদোম গায়ে
ন্যাংটো শাখায়
বরফ গুলোর বাদুর ঝোলা
শীত মানেই কফি বারে এক
ডলারে কফি কেনা,
কফির ভিতর চুমুক দিয়ে প্রেমিকাকে-’হ্যালো’ বলা
শীত মানেই আজগুবি সব জামা-জুতা-
জ্যাকেট-মোজায়
দেহটাকে
আগাগোড়ায় মুড়িয়ে রাখা
শীত মানেই করোটিতে রোদের
ছায়া, মেঘের মায়া
মাথায় হুডি, চোখে মুখে শীতল বাতাস খামচে ধরে
শীত মানেই তুষার পাতের
রুদ্র রোষে পাগুলো সব
বুটের ভেতর বন্দী কারা
জলের নিতাই জলদস্যুর পথ হারিয়ে
বরফ স্তুপে ঘুমিয়ে থাকা
শীত মানেই অথৈ আকাশ- উপর
থেকে সংগীবিহীন,
গভীর গহীনবরফ ঝরা
ঘন্টার পর
ঘন্টা ধরে
একলা একলা দেহের ভেতর দোলা দেয়া
হিমাংশু তার তাপ নামিয়ে লবন
খেয়ে সবার মাথায় দিচ্ছে টোকা ।
শীত মানেই ঘরের ভেতর
উষ্ণ হাওয়া ; মংগোলালোক
সুযোগ পেলেই লম্বা রাতে দুই শরীরে আগুন
ঘষা
একের ভেতর অনেক কিছুর
হালকা হালকা চুমুক দেয়া
শীত মানেই জীবনের এক
মোহন বাঁশী
সব কিছুতেই ভেঁপু বাজা !
২
বাংলার মাঠে বাংলার ঘাষে
পড়ছে ঝরে শিশির
এই আমাদের হেমন্ত ঋতু
আনন্দ কিষাণ-কিষাণির
সকাল আসে শিশিরে ভিজে
কড়ারোদ নিয়ে হাসি মুখে
মা-খালা-দাদি-নানি পিঠা
বানায়
মাটির চুলায়, গান গেয়ে গেয়ে।
পাড়াতুতো বোন, খালাতুতোসই
ঢেকিতেপাড়েতুন
খেজুরের রসে ভেজানো
চিতুই
খাবারের
পড়ে ধুম।
গাছুরিয়া গাছ কাটে রোজ
বিকেলে
রসের হাড়ি বাঁধে গাছে
ফিকে রঙ-রাব হয় রস অল্প
জ্বাল দিলে
তাজা গুড়ের স্বাদ এখনো
জিভে
লেগে আছে।
আকাশে বাতাসে শীতের কাপন
নাচে
বাংলার মেয়ে আমরা সকলে
পিঠা খাবার শখ সবার মনে
আছে
যদিও আছি আমরা দূর
প্রবাসে।
৩
শীতের দিনে শীতকন্যা
শীত নিয়ে আসে
খেজুর রসের কথা ভাবি
দূর প্রবাসে বসে।
শীতের দেশে শীত কন্যা
জ্যাকেট টুপি মুড়ে
সকাল হলেই দৌড়ায় কাজে
পিঠা পুলি ছুড়ে ।
থ্যাংস গিভিং এ আমরা খাই
টার্কি, গ্রেভী, পাম্পকিন
পাই
আরো খাই ডেজার্ট রকমারি
তারই সাথে পিঠা পুলি
আনন্দে যোগ করি।
ইংরেজী হোক বাংলায় হোক
নবান্নের উতসব
হেমন্ত আনে শিশির ধোয়া
শীতের কৌরব
শীতের বাতাস শীতের বাতাস
আমার ঘরে এসো
খেজুর রস আর ম্যাপল
সিরাপ
প্যান কেক দিয়ে খেয়ো
শীতের বাতাস তোমার সাথে
বন্ধু আমায় করো
দুই দেশের দুই কন্ঠে
এবার
পিঠার গান ধরো ।
৪
আইলো এইবার পিঠারও দিন
কে কে খাইবি বল
সোনার দেশের সোনালি ধান
করেছে মাঠ উজ্জ্বল
খেজুর গাছে বসায় সবাই
মাটির কলস খানি
ভরলে রসে সকাল বেলায়
উঠানে দেয় আনি
ভাপা পিঠা, কুলি পিঠা
চিতুই পিঠার বাহার
পাকন পিঠা সাজে বসে
জামাই করে আহার
বিবির জন্য বিবিখানা
ছাইয়ের মধ্যে পোড়ায়
উপরে নিচে পোড়ে পিঠা
বৌমাপোড়ে খোলায় ।
গ্রামে গ্রামে নানা জনে
বসায় পল্লী গানের আসর
সেই আসরে পিঠা বাঁটে
গ্রামের হরিহর ।
বৌ ঝিয়েরা যদিও পায় না
গোটা পিঠার স্বাদ
বাপের বাড়ির নায়র পায় না
কে করে আহলাদ ?
ফুঁসে ওঠো পিঠার মত
ওগো নারীকুল
যুগের পর যুগ চলে যায়
ভাংগো এবার ভুল
শীতের পিঠা তুমি ও খাবে
নিজের অধিকারে
গ্রামের চিত্র বদলে দাও
নতুন আচরণে।
৫
শীত এলো এই কানাডায়
সবাই পড়ছে খুব চিন্তায়
কোথায় পাবে খেজুরের রস
পিঠা খাবে -পুলি খাবে এই
তাদের শখ।
শীত এসেছে পশ্চিমা দেশে
উত্তরথেকে ভেসে ভেসে
শীত আসলে গরম গেলো
সবুজ পাতার বিয়ে হলো।
ঠোঁট ফাটা বুড়িমাখা
শীতের চামড়া
অবাক দুই চোখে চেয়ে দেখি
আমরা ।
হোমলেস শুয়ে থাকে
রাস্তায় চিৎপাত
বরফে ঢেকে থাকে পুরোটা
ফুটপাত
তবুও স্বাধীন তাহাদের
চিত্ত
যদিও নাই তাহাদের কোনই
বিত্ত
তাতে কি আসে যায় ?
তারা উদার আকাশ খায়।
এর নাম স্বাধীনতা ,
উন্মুক্ত পৃথিবীর আহবান
শীত হোক গরম হোক
পায় প্রকৃতির সন্মান ।
৬
শীতের পাখি
তুমি বাংলার কন্যা
কুমারী
শীতের সকাল
তুমি শিশিরে ভেজা নাচো
ত্রিতাল
শীতের দুপুর
আমন ধানের পরো গো নূপুর
শীতের বিকেল
তুমি হীরার মাথার লম্বা
চুলে কল্যাণীতেল
শীতের সন্ধ্যা
বিকেল থেকেই রাত্রি তুমি
অসামান্যা
শীতের রাত
শরীরের খেলা উষ্ণতা আর
অনুরাগ
শীতের শুভ্র ভোর
পুর্ণ যৌবনা তুমি
নও শিশু কিশোর
শীতের প্রথম প্রহর
কনকনে শীত হীম ঠান্ডা
রোদ্র প্রখর
শীতের মধ্য দিন
মাথার উপর সুর্য তবু শীত
বাজায় বীণ
শীতের সারা বেলা
সবার চোখেই ভাসে গ্রামের
মেলা।