রীনা
তালুকদার
গোলাপের গাছে
প্রতুষে কুয়াশায় ভরে আছে
সবুজ মাঠ
ব্যায়ামের ভঙ্গিতে
গাছেরা আছে নুয়ে
জড়াজড়ি ভালোবাসা বাসি
গোলাপের বাগানে ফুটেছে
সুগন্ধি গোলাপ
কখন কে কাকে দিবে তুলে
সেই ভাবনায়
গোলাপ আর গাছে লেগেছে
বিজয়ের পাঠ।
বিজয় বহুদূর ...
এখন ছুঁতে পারে না শীতল
হৃদয়
ইচ্ছের কাছে দেখা মেলে
না
চৌরাশিয়ার মধুর বাঁশী
মুক্ত ছড়িয়ে ছিটিয়ে
আনাচে কানাচে রাশি রাশি
খোঁজে না ডুবুরী সুগভীর
অনুরাগে
অচেতন ঘুম নেই
প্রশান্তিময় দু’চোখে
কীসের অস্থিরতা উতলা করে
যায় ?
বুঝি না কিছুই ইলেকট্রন
প্রোটনের ধর্ম
মনের মালায় শাসনের বেড়ি
সাইবেরিয়ান প্রবাসী পাখি
আলাপে প্রলাপে বলে বেড়ায়
বুর্জোয়াইহোক আর
প্রলিতারিয়েত পরিবারে
স্বাধীনতা সহজ নয়তো
যাপিত জীবন বায়োস্কোপে
দেখো
মাঙ্গলিক বিজয় এখনো
অদূর সুদূর...বহুদূর।
বিজয় কত দূর ...
তুমুল লড়ছি এখনো
যত্রতত্র
ঘরে বাইরে নিজের সাথে
নিজে
নেইতো কেউ কোথাও এমন
তপ্ত বুকের সাথে বুক
মিলিয়ে
বুঝে নিবে যত বুকের
ব্যাকুলতা
এখানে নেইতো স্বাধীনতা
স্বাধীনতা
বন্ধ দুয়ার অন্ধ মনে
ভালোবাসা
গুমরে কাঁদে সমতল থেকে
হিমালয় ছুঁয়ে
বেদনার নীলে বাড়ছে বলি
রেখা
দেখা হবে প্রচার করা বিজ্ঞাপনে
হয় না দেখা
কেউ বুঝে না কর্ণিয়ায়
অতি জলের চাপ
হৃদপিন্ডটা ব্যথাতুর
হামেশা লাফ ঝাঁপ
ঝোঁপ ঝাড় অন্ধকারের
পর্দা সরিয়ে
সন্তর্পণে এগিয়ে চলা
সুদূরের দিকে
বণিকী ধর্মের দেয়াল
পুস্তুক জুড়ে
পথ এঁকে দেয় কলসির ঘাট
পর্যন্ত
মক্তবের পাঠ
পর্যন্ত চলতে পারো
বিজয় কতদূর দেখা হবে
স্বাধীনতা ?
বিজয় কি ফিরেছে ঘরে
এ কোন্ বিজয়ের সাধ
গ্রহণ করেছি জিহ্বায়
আমার কথাই বলতে পারিনা
আমি
মুখ থেকে শব্দ বেরোবার
আগেই
অজস্র দাণবীয় হাত
প্রসারিত হয়
আমার জিব্ কাটার জন্য।
শ্রাবণের বৃষ্টিকে বলতে
পারি না
থামাও তোমার বুকছেড়া কান্না
শরতের মেঘ বিচ্ছিন্ন মনে
এপাশ ওপাশ করে হাঁপিয়ে
ওঠে।
ক্ষেতের শস্যের হলুদাভ
রঙ
চুরি হয়ে গেছে অসাবধানে
মটর শুটি ছড়ায় না
সুঘ্রাণ
এখানে আসে না বন্য ঘু-ঘু
কেবলই পরাধীন মাঠ
বিস্তারিত হয়
এ কোন্ বিজয়ের উচ্ছাস
সর্বাঙ্গে শৃংঙ্খলিত
লেবাস
বঙ্গগিরি খাতের এ ভূ-ভাগে
কেবলই কি সংগ্রাম করা
মননে স্মৃতিসৌধ আঁকা
নয় মাস যে বিজয় ছুটেছিল
প্রান্তরে প্রান্তরে
সত্যিই সে কি ফিরেছিল
বাংলার ঘরে
কখনও কোথাও দেখেছে কি
কেউ তারে ?
দেখা হবে
দেখা হয় না তবু
ঘুরে ঘুরে বেহায়া
ষ্টেশনে পৌঁছা
হবে হবে দেখা বিজয় চিহ্ন
দেখা
আশায় প্রশান্তির শান্তনা
বাণী
আকাশে বাতাসে শব্দ
তরঙ্গের
নিঃশব্দ নিঃশ্বাসের
দমবন্ধ দাপাদাপি
করুণ কষ্টের কাল যাপনের
কাল হয় না শেষ
ধোঁয়াটে কুয়াশা জমা না
দেখা মিরাকল চশমার কাঁচে
আটঘর খুরিয়ানা’র রসনার ইলিশের স্বাদ হয় না জানা
বেআক্কেল শূন্যতায় খাঁ
খাঁ সুবজ বাংলো
বিহবল চোখের মিলনে
গলাগলির বেলাজ আবীর
করতলের আকুল আমন্ত্রণে
চেতনালুপ্ত ¯œায়ুকোষ
কেবলি খড় নাড়া ফুঁ দিয়ে
শীত তাড়ানো
বলার জন্য বলা দেখা হবে
... দেখা হবে
দেখাটা সাইবেরিয়ার অতিথি
পাখি
ভ্রমণের আকণ্ঠ তৃষ্ণা
বুকে
ঘোড়দৌড় মৌসুম পালাবদল
অপেক্ষায় অপেক্ষায়
হাড় কাঁপানো শীত তাড়ানো
কম্বলের আশায়
খরাজাগা মন দেখা হবে
ধীরে . . .
মহাকাল ধৈয্যের উঠোনে
থাকো বসে
ঐ যে দূরে দেখা যায়
বিজয়ের বাতিঘর।
নোট : আটঘর খুরিয়ানা-
চাঁদপুরের
প্রাচীন মৎস্যবন্দর আটঘর
খুরিয়ানা।
এখানে সেরা মানের ইলিশ
মাছ পাওয়া যায়।
একাত্তরের মৃত ভ্রুণ
বুকের ভেতর কুসুম বনে
লাল গোলাপের রেণু ছিল
ফুটবে বলে আশায় আশায়
মুক্ত আকাশ দৃষ্টি ছিল
সেই রেণুতে পড়লো ছোঁবল
একাত্তরে
নয়টি মাসের সব দিনেই
কুমারী পুজোর আরজি ছিল
ঠিক যেখানে চেয়েছিলো -
সেখানে নয় অন্য কোথা
ভিন্ন কোনো খানে-
দেশ লুটেরা সঙ্গে নিয়ে
হেঁটে গেলো
মেঠো গাঁয়ে শিশির ভেজা
আল পথে
সেনা বুটের তলায় ডুবেছিল
নবীন দুর্বা ঘাস গুলো
নোনা শাকের পাতারা সব
চুপসে জল
ঢুকলো গ্রামে সেজে বাঙাল
লেজ গুটানো চাটুকার
কাঙাল
উর্দি পরা বন্ধু ওদের
গোঁফে
কেপ হাটিং ডগের লেজ
বাংলা মানে বর্ণমালায়
ছিল ভীষণ তেজ
একাত্তরে কঠিন শপথ জীবন
বাজি
ভয় করেনি বঙ্গ মানুষ সব
দিয়েছে ত্যাজি
গোয়াল ভরা দুধেল গাভী, পুকুর ভরা মাছ
আম-কাঁঠালের
বাগান-জল-স্থল ও চর
পিতা-মাতা-কন্যা-জায়া-স্বামী-পুত্রধন
হানাদারের পিশাচ থাবায়
জন্মেছিল ভ্রুণ
সে জননী বীর মাতা
স্যালুট তার খুন
একাত্তরের ভ্রুণ মৃত হলো
যারা
অমর তারা; শহীদ তারা
ওরাও প্রাপ্য দেশ জনতার
বীরত্বের সম্মান
শহীদের তালিকায় থাকবে
দেশপ্রেমিক
চিরঞ্জীব-চিরঅক্ষয়-চির
অম্লান।
বিজয় কী
দুর্ভাগা দেশ তুমি এ
কেমন
বিজয় দিলে বাঙালীকে
সবুজ প্রকৃতি দিয়েছে
আঁচল বিছিয়ে
পূব আকাশে নতুন
সূর্যোদয়
এক বুক রক্তের অক্ষরে
লিখে দিলো মুক্তির গানে
তোমারই মাটি পদাঘাতে
পিষ্ট করে
পাঁজরে জ্বালায়
নিউক্লিয়াস বোমা
লক্ষ লক্ষ প্রাণের
বিনিময়ে
যারা ক্ষ্যান্ত হয়নি আজও
ষড়যন্ত্রের গোপন
কুঠুরীতে বিষবাস্প ছড়ায়
বাংলার নদী-জল করছে
দূষিত
প্রাণে প্রাণে হিংসার
দাবানল ছড়িয়ে
ধর্মটাকে পুঁজি বানায়
তবু কী তুমি দেখতেই
থাকবে ?
তাই বাংলায় বিজয় এলে
বিজয় কী ? কেবলই প্রশ্ন জাগে মনে
বিজয় কী কেবল চোখে চোখে
ডিসেম্বর এলে পোস্টার
আঁকা
ব্যানার নিয়ে মিছিল করা
লাল সবুজ পতাকা কপালে
বেঁধে
বক্তৃতা শোনা; বিজয় কী
মুখে মুখে বিজয় বিজয়
বলায়
সীমাবদ্ধ হয়ে থাকবে
নাকি প্রকৃতই সমুখে
এগিয়ে যাবার
দৃপ্ত প্রত্যয় হিসাবে
কাজ করবে ?
স্বাধীন চেতনায় উজ্জীবিত
করবে
প্রতিটি স্বাধীনচেতা
বাঙ্গালীকে
বলোনা মুজিবের দুর্ভাগা
দেশ
তবে কী তোমার অভিলাষ ?
বিজয়া
বিজয়া আমার বন্ধু
উচ্ছল শুভ্র বলাকা হাসি
যেনো পড়ন্ত রোদে
নিমন্ত্রিত অতিথি
ডাগর কৈশোর কালে নূপুর
মাত্র
এতটুকু বয়সে পরেছে এক প্যাচে
লাল পেঁড়ে শাড়ি
সিঁদূরে ঢেকেছে মাইল
মাইল পথ
দেখেই মনে হতো সে লালপরি
বড্ড আড্ডাবাজ ; ঘুর ঘুরে স্বভাবী
পাশের গাঁ বলে লাপাত্তা
সব
কীসের আত্মীয় স্বজন
শ্বশ্বর বাড়ী
ওসবে ওর কোন লেনাদেনা
নেই
বিদ্যালয় আর পাড়ায় কাটে
উচ্ছৃংখল ডাংগুলি প্রহর
মুক্তবাবুর কথা জিজ্ঞেস
করলেই
বলত ও লক্ষ্মীছাড়া বাঁদর
কোথায় জানিনে জানিনে
এক দিন এলো মিছিল
সংগ্রামী দাবানল দাউ দাউ
জ্বলে ওঠে বাংলার শহর
গ্রাম পাড়া
রেসকোর্সের গান শুনতে
গিয়ে
মুক্তবাবু হারিয়ে যায়
চিরতরে
সেই থেকে অনেক অনেক বছর
বিজয়া এখন সিঁদুরহীন
কেবল লাল শাড়ীর বদলে
পেয়েছে
সেই এক প্যাচে পরা
ধবধবে একখানি সাদা থান।
জয় বাংলার বিজয়
বিজয় এলো জয় পরাজয়
স্বপ্নলোকের ছবি
বাস্তবে তার কথায় আঁকা
হাজার কাব্যের কবি
বিশ্বব্যাপী নির্যাতিত
বিপ্লবীরা গান গায়
বিসর্জনের বিনিময়ে
স্বাধীনতার স্বাদ পায়
জয়বাংলার ঐ মন্ত্র মুখে
অনেক প্রাণের ক্ষয়ে
অধিকারটা ফিরে পেলো
সার্থক শোক বিজয়ে
দেশে দেশে বঞ্চিতদের
জয়বাংলা আজ হাসে
দূর্বলের কণ্ঠে বেজে চলে
দুঃখ জয়ের আশে।
বিজয়
একাত্তরে দুঃখ কষ্টে
বীভৎস রোজনামচায়
বিজয় কী এমনিতেই
এসেছে এই বাংলায়
মুক্তিসেনার সাহসী
মিছিলে
বাজলো রণতূর্য
বুদ্ধিজীবীর খুনে রাঙা
লাল টক টক সূর্য
লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে
পেলাম একটি দিন
বিজয় আমার মায়ের ভাষা
বাজায় আশার বীণ।