শাশ্বতী
সরকার
রত্নাকর
ধর্ম আমাদের শিখিয়েছে
প্রথমেই
‘রাম’ ‘রাম’ বলতে
সেটাও খুব একটা
স্বাস্থ্যকর নয়
‘মরা’ বলতে বলতে ‘রাম’ বলে
উঠলেই যথার্থ বাল্মীকি
হওয়া যায়।
আজকাল বৃদ্ধ রত্নাকরেদের
দেখি
‘মরা’ শব্দটির প্রতি প্রবল ঝোঁক
বুঝলাম, এ জীবনে তাদের আর
বাল্মীকি হওয়া হয়ে উঠল
না।
ও আগ্রাসী ঢেউ
আগ্রাসী ঢেউ,সমস্ত নাও তুমি
পরদ্রব্য হরণেই তোমার
আনন্দ
আহা!বড়ই ক্ষণিক তোমার
জীবন
তাই এত লোভ, এত ঈর্ষা
নাও, যতটা নিতে পারলে
তুমি শান্ত হও , ততটাই নাও
তারপর মিলিয়ে যেও কালের
গর্ভে
আমার সাধনা অচপল,অতলের জন্য
তিনি আসবেন, জানি
নিশ্চয়ই তিনি আসবেন।
বন্যাপ্রসঙ্গে
যে রোমান্টিকতায় তাকে
আমরা ডেকেছিলাম
আমাদের সৃষ্টির উৎস হবে
বলে
সে এসে দেখাল তার ভয়ংকর
করাল রূপ
বুঝলাম, সৃষ্টির প্রেরণা হবার যোগ্যতা সে হারিয়েছে
সে নিজেই এখন চরম
অনিশ্চয়তার কবলে
তাই শিখে গেছে কেমন করে
গরীবের ঘরবাড়ি
ছারখার করে জিতে নিতে হয়
ঈশ্বরের দিল
সে এখন ঈশ্বরের বাগানের
পোষা চাকর
সে এখন হারিয়ে ফেলেছে
তার সেই গোপন
জাদুদণ্ডটি।
নীল তিমি
কারো কারো জীবনে প্রেমিক
বা প্রেমিকা নীল তিমি হয়ে আসে
যত তুমি রক্তাক্ত হও
ততটাই উল্লসিত হয়ে ওঠে তিমির হৃদয়
কেননা সে জেনে গেছে তার
মারণ নেশায় জর্জরিত তুমি
নীল হতে হতে হতে হতে
এগিয়ে চলেছ সেই চূড়ায়
যেখান থেকে তোমার আর
ফেরার কোন উপায় নেই
একদিন না একদিন তুমি তার
উদরস্থ হবেই।
আহারে নীল তিমি! তুমি
শুধু বিষই দিতে জানো?
সারাজীবন ধরে তুমি শুধু
শিখেছ বিষেরই ব্যবহার?
অমৃত চেনোনি তুমি?এসো,আমি আজ
তোমাকে শেখাব
অমৃতের ব্যবহার।নীল তিমি,যত তুমি বিষ দেবে সবটুকু
নেব আমি,তোমার বিষের ভান্ডার শেষ করে ধীরে ধীরে
অমৃত ভরে
দেব।স্তন্যদায়িনী বসুন্ধরা আমি,আমিও
জানি
প্রলয়ের পর কেমন করে
ভরিয়ে দিতে হয় শূন্য জনপদ,
শুষ্ক মরুভূমি।এসো তবে
নীল তিমি,বিষের ভান্ডার!
এসো এই বেলা, চুমোয় চুমোয় তোমার দুই চোখে
ভরে দেব ভালবাসা।ঝেড়ে
ফেলে সব আত্মগ্লানি
জ্ঞানচক্ষু উন্মীলিত
হোক্,ধীরে ধীরে নিজেই চিনতে শিখো
অমৃত ও বিষের ফারাক।
প্রায়শ্চিত্ত
মুছে ফেলো, যা কিছু আছে নির্মম হাতে সব মুছে ফেলো।
যা কিছু স্মৃতি, হৃদয়জারিত কিছু সত্য উচ্চারণ, কিছু বিশ্বাস
মুছে ফেলো সব। পারবে কি
মুছতে সেইসব ভেসে যাওয়া
অবাধ্য কবিতারা, যারা গেয়েছিল নতুন দিনের অসম্ভবের গান?
যারা রক্তে দিয়েছিল দোলা, যারা দিয়েছিল তোমাকে বিশ্ববিধাতার
সম্মান? জানি পারবে না, সত্যের বন্ধন ছিন্ন করা যতটা সহজ
ভেবেছিলে ততটা সহজ নয়। তাই তৈরি হও, তৈরি হও সে অবিরত
দুঃখের জন্য যা তোমাকে
দেখাতে পারে একমাত্র মুক্তির পথ।
নত হও, নত হতে শেখ হে দুর্বিনীত, একমাত্র নারীশক্তিই
তোমাকে পৌঁছে দিতে পারে
সেই উচ্চতায় যেখান থেকে
পড়ার কোন ভয় নেই।মহাকালী
তাঁর দেহে সমস্ত অন্ধকার
শুষে নিয়ে তোমাকে দেবেন আলোর সন্ধান।হে অশিষ্ট বালক,
এখনও সময় আছে, ক্ষমা চাও।ক্ষমা চাও সেই সত্যের কাছে
যে একদিন তোমায় আলোর পথ দেখিয়েছিল।