বৃহস্পতিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০১৭

সিলভিয়া ঘোষ



সিলভিয়া ঘোষ

কল্লোলিনী উর্মি তুমি

দুর্নিবার জোয়ার-ভাঁটার স্রোতে বেয়ে
চলো তুমি, দেশ কাল মানোনা কল্লোলিনী উর্মি তুমি
এপাড় ভেঙে ওপাড় গড় তুমি,প্রতিবাদ গড়ে তোল
আপন নিয়মে,
এক লাইনে দাঁড় করিয়ে দাও ধনী-গরীব
যুদ্ধে-বনে-স্থলে কখনো ফল্গু কখন অগ্নি হয়ে ভাসিয়ে দাও তোমার স্রোতের বেগে
সেই বেগ আমাকে ছুঁয়ে যায় কোন উদাসী মনখারাপের দিনে,
একলা থাকি যখন নিভৃতে নিজের টিনের রাজ প্রাসাদে কিম্বা কাছের কোন কুঞ্জবনে
যদি তুমি ভুলে যাও এইভেবেই তোমার স্রোতের টানে ভেসে চলি এদেশ ওদেশ
কখনও তুমি যদি মনমরা থাকো
তোমার শীতল ছায়ায় নিজের হৃদয় জুড়িয়ে থাকি শান্ত মনোহরে
তোমাতেই শিখেছি জীবনের বাঁচার মানে
ফুল ফোটাতে জেনেছি তোমার ঘাটের কাছে,
বাগানে বাগানে...






ডিপ্রেশন

একটা কাজ চাই
যে কোন কাজ
বেডশিট কাঁধে ফেরিওয়ালা,
কিম্বা লাল , নীল, সবুজ, হজমী লজেন্স হকারি,
দশ টাকায় তিনটে পেন বিক্রির সেলসম্যান
সে সব নাহলে  নিদেন পক্ষে নাইট গার্ডের একটা চাকরি
সারা রাত খেঁটে খুঁটে এসে ক্লান্ত শরীরে একটা বস্তির
ঝুপড়ির ঘরে গা এলিয়ে  শুয়ে পড়বো,
দু চোখে তখন শুধু নেমে আসবে কাল ঘুম,
স্বপ্নরা ভেসে যাবে তিস্তার জলে
শুধু একটা কাজ চাইযেকোন কাজ
বাইরে অঝোর ধারায়  ধূসর বৃষ্টি নামলেও,
রাস্তা পার হতে আনমনে একটা হাত উঠবে না তোর উদ্দেশ্যে ,
নিঃশ্চুপ রাতে  রূপালী জ্যোৎস্না মেখে তোর মুখটা বেড়ার জানালায় ভাসবে না...
একটা কাজ চাই  , শুধু একটা কাজ
তোকে ভুলে থাকতে দেবে , এমন একটা কাজ
মেঘলা আকাশে মনে পড়বে না
বৃষ্টিতে  আধাআধি ভেজা দিনগুলোর কথা,
ভাসিয়ে দিলাম তাকে আমি
'মেঘ পিওনের ব্যাগে রাখা মন খারাপের দিস্তায়'






কাগজের নৌকা

প্রতি বছর খোয়াই এর কাছে যেতেই
বিষাদের এক চিত্র ফুটে ওঠে
তখন পলাশ, শিমূল, অমলতাসেদের বিদায়বেলা
তবুও  মাঝে মাঝে লালে  লাল হয়ে থাকা গাছেদের গা
থেকে ঝরে পরে আনন্দ -বাহার
:
খাড়ির ধারে সবচেয়ে ফ্যাকাসে হয়ে থাকা
ঠিক সেই  'মুখোমুখিদাঁড়ানো গাছ দুটোতে 
খানিক  সময় হাত বোলাতে থাকি
দুটো মানুষ দূরে দাঁড়িয়ে দেখে যায় , এসব
:
তারপর, কিছু সময় নিস্তব্ধ  সবকিছু
আরো  কিছুটা সময় গেলে, সব আগের মতো
তবুও বুকের   ভিতর  শূন্যতা ........
:
কুড়ি বছর ধরে তোমাকে ছুঁয়ে আছি
সামান্য কিছুটা  সময় তোমার জন্য বরাদ্দ
রেখেছি আজও.....
:
হঠাৎ  বৃদ্ধ  কাঁধে  নব যৌবনের হাত
বলিষ্ঠ কন্ঠে সে  বলে,  'সব ব্যথা ভোলা যায় না
জানিচলো আজ দুটো নৌকা ভাসাই অজয়ের জলে ,
দুজনের নাম লেখা থাক সেখানে'........






অজানা পথ

যে পথ দিয়ে  তুমি  চলে গেলে
কোন সে সুর  বাজিয়ে গেলে!
সেখানে কি তোমার মতো
মাটির সুর আর  বাউল যতো !
 সেথায় কি  সব পথের পাশে
মাটির ঘরে তুলসী মঞ্চে , পিদিম জ্বলে?
কোন সে রঙের সুর্যি  সেথায়
রাঙিয়ে দিয়ে যায় বরাবর !
ছোট্ট খুকী ঘুমের মধ্যে
কথা বলে তার বাবার সনে






কৃষ্ণ গহ্বর

সীমার মাঝে অসীমের হাতছানি
নিত্য অনিত্যের দ্বন্দ্ব সেখানেই জানি
তবুও সকল আমিত্বের মোহ কাটিয়ে
ওজঃ খন্ডের মায়া থেকে মুক্ত হতেই হবে
একদিন সকলেরে

*
মরণ তুই যে আমার মাধব তোর  কাছেই
যাব  একলা আমি  অভিসারিকা রাধিকার বেশে
সেদিন  আমায় আলিঙ্গন  করিস
পরম ভালোবেসে

*
'মৃত্যুই সত্য' এই চির জাগরূক বাণীকে
স্বাগত জানিয়েছি 
পঞ্চভূতে  বিলীন নিঃস্পন্দিত দেহে
অগুরু চন্দন শোভে 
গমন  করি  চল 
আজ কৃষ্ণ গহ্বর পরলোকে

*
আদি থেকে অন্তে
মহাকালের ডঙ্কা বাজে  অনন্তকাল
যেখানে , তিমিরঘন উৎস স্থল
সেখান  থেকে বিচ্ছুরিত অরুণিমের সন্ধানে
অবিনশ্বর আত্মার পরিভ্রমণ ঘটে

*
হিংসা দ্বেষ ক্লেদ স্বার্থপরতার চিহ্ন যেখানে
পায় না ঠাঁই সেই নন্দনকানে
সুখ বিলাসে গা ভাসিয়ে থাকা অমরাবতীর তীরে
শুনেছি সর্বদা না কি সদানন্দের মেলা বসে

*
গভীর চুম্বনে  আপন করে নে এবারে
আমি নিঃস্ব আজ, রিক্ত বাহু বাড়িয়ে
রয়েছি তোর দিকে, সকল তাপ ঘুচিয়ে

নিশ্চল শান্ত করে দে,মরণ রে