বৃহস্পতিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০১৭

শ্রাবণী সিংহ



শ্রাবণী সিংহ

হলউইন রাতে

একদিনে জীবন যতটা ঘোরে, পৃথিবী তার অর্ধেকও নয়।পাশ ফিরে শুলে
এখনও বেজে ওঠে বিয়ের রাতের বিস্‌মিল্লাহ সানাই।   

দেবতা থেকে দূরে যাই,
অবহেলিত প্রার্থনাগুলো উপলব্ধি শেখায়।

ক্ষয়ে যাওয়া বিমর্ষ দাঁতের এনামেল ,
শব্দগুলো উচ্চারণে হ য ব র ল আসে।

হেমন্তের নির্বীজ হিম, ,নিয়ন অন্ধকারে নড়ে চড়ে বেড়ায়
হলউইন রাতের আত্মারা।

আপাততঃ  প্রেম ও শত্রুতা থেকে দূরে সরে যেতে চাইছি,
কিছুটা নিজের কাছে...
নিজেকে ডেকে জেনে নিই ভালো আছে কি না।  এতো আমারই একান্ত।






আলোয় ফেরা

উৎসবের সন্ধ্যায় বৃষ্টি এক জলজ্যান্ত অভিশাপ!


অথচ একদিন
বৃষ্টি মানে ছিল  দীর্ঘ মরচেফুলের জানলায় সন্ধ্যার প্রতিবেদন,
বৃষ্টি মানে ছিল অপেক্ষা-নির্ভর কিছু সহনশীলতা...
বৃষ্টি মানে জিরেনিয়াম-গাঁদার ঝোপ
অসম্ভব ভাবে দুলতে থাকা
---কিছুটা  আশা
         এবং নিরাশায়!

পোড়া বাজির গন্ধ উড়ে উত্তুরে বাতাসে।
শ্যামাপোকার ছাই কার্নিশেওপাশটায় কে?
ছিদ্রহীন অন্ধকার ঝুলে আছে
আলো জ্বালো হে আলো আলো
কোন্‌ ডাক ফেরাতে পারে আলো কে জানে?
ওই দুরের, ওই মফস্বলের ক্ষেতে  জালিকুমড়োর ঘুম
কবিতার কথা মনে পড়ে
কবিতা লেখার মত ব্যর্থ আয়োজন
আজ অনির্বার্য হয়ে পড়ে।






আমন ধানের হাসি

বামনের চাঁদ ছুঁয়ে আসে সবাই, আমি ব্রাত্য হয়ে থাকি।
এই ছুঁয়ে থাকার হাতগুলো অদ্ভুত আলো দেয়
জ্বরগ্রস্ত
গরল
কথাদের বলি শস্য হও।

তোমার নীরবতাকে ভাবি  পাখির  সম্মোহন
মনে হয় আজও বুঝি প্রতীক্ষাতেই আছ।।

পুরনো টিনের তোরঙ্গে কিছু  জলহাওয়ার চিঠি,
লণ্ঠনের চিমনিতে জাল বুনে গেছে বুড়ো মাকড়সা,
ধুয়ে মুছে সাফ রাখি...

রিপার যন্ত্রে কাটা পরছে আমন ধানের হাসি
এসো নাহয় কার্তিক কার্তিক খেলব দুজন।






এতিমখানার সন্ধ্যা

এতিমখানার বুকে সন্ধ্যা নামে।
এই শহরে গাছেদের সব জানি, সম্পর্কের কিছুই জানি নে।
মালসার ভিতর কেঁপে ওঠে অজাচারের ভ্রূণ ।

আবার এসেছি। বোহেমিয়ান কষ্ট চেপে রাখি
কি করে চেপে রাখি  বল তো? এক পুল শূ ন্য তা...

নাড়কেল নাড়ু হাতে ঘুরে বেড়ায় লক্ষ্মীছাড়া শৈশব ,
ডাইনিং টে্বিলে পড়ে আছে এঁটোকাঁটা
ডাষ্টবিন খুঁজে পায় অবশেষে।

সবটাই মেকি, একদিন পূর্বজ যারা
সবাইকে নিয়ে চলার কথা ভাবত, আজ তারাই বলে
   একা থাকার জন্য তৈরী হও।






এবং জন্মান্তর

অতঃপর
মৃতদের তারা হওয়া,
তারাদের নাবিক হওয়া হতাশার বন্দরে ...
জেনেছ কবিতার আসল রঙ কি?
যার নাম ক্ষয়ে যায় জলের আঘাতে, সে কি ঢেউ?
যে ঢাকা- চোখে অন্ধকারে বহুদুরবর্তী তারাদের রঙ জী র্ণ হয়ে যায়,
সে কি প্যারালার বিভ্রম?

জলের কাছে একা বসে থাকা সন্ধ্যার ঋণ,
ঋণাত্মক ভাবনাগুলো  জুড়ে যায় সাদাপাতার ক্যানভাসে ,
  কবিতা
         আসলে এক নিখুঁত প্রক্রিয়া
ভিনজন্মেও কবিকে জীবিত রাখা।