অগ্নিশিখা
দীপান্বিতা
বাগেশ্রী
পরিত্যক্ত বাড়ির মত
শ্যাওলা ধরা হৃদয়ে
আজ আর নেই কোন কোলাহল
ডুবেছে সে অন্ধকারে।
বিবর্ন দেওয়াল থেকে তার
খসে পড়ছে চুন বালি।
মাকড়সার জাল আর জং ধরা
দরজার
ক্যাঁচক্যাঁচ আওয়াজ
বুঝিয়ে দেয়
বহুদিন এ পথ মাড়ায়নিকেউ।
ধুলো পড়া আসবাব থেকে
উঁকি দিয়ে যায়
রোদ ঝলমলে দিন।
হঠাৎ আসা দমকা বাতাস
বয়ে নিয়ে আসে দম বন্ধ
করা ভ্যাপ্সা গন্ধ।
দেওয়ালের গায়ে গজিয়ে ওঠা
স্মৃতির বট
ছড়িয়েছে তার শিকড় অনেক
গভীরে ।
দেওয়ালে ধরা ফাটলটাও
বড় হচ্ছে আস্তে আস্তে
তার ই সাথে।
একদিন সেই গ্রাস করবে
সমস্ত বাড়িটাকে।
ফার্ন আর মসেরা যেটুকু
জায়গা করেছিল দখল
অস্তিত্বের লড়াইয়ে আজ
হার মেনেছে তার কাছে।
তবু সেই আজও অব্যাহত
রেখেছে সৃষ্টির ধারা,
ফল ধরেছে তাতে।
তার ই জন্য আজ ও আসে
প্রানের ছোঁয়া
অশরীরী দের ভীড়ে।
একদিন যাদের কলরবে
মুখরিত হত এই মহল
তারা কিছুতেই যায় না
ছেড়ে
আজ ও ভীড় করে রাতে,
মুষল ধারে বৃষ্টি নামে
স্যঁাতসেঁতে হয়ে ওঠে দেওয়াল।
প্রতিরাতে সেই স্যাঁতস্যাঁতে দেওয়ালে
ধাক্কা খেয়ে বাতাসে
প্রতিধ্বনিত হয়
তাদের আর্তনাদের
বাগেশ্রী ।
(বাগেশ্রী হল মধ্য রাতে গাওয়া একটি রাগ)
লালবাতির অপেক্ষায়
মাথার মধ্যে ঘুড়ির সুতোর
মত
জটপাকানো শিরাউপশিরারা
বদলাতে দেয় না চিন্তার
অভিমুখ।
রক্তকনিকায় মিশে থাকা
অনুভূতিরা
আজ লিপ্ত হয়েছে এক গভীর
ষড়যন্ত্রে
হৃৎপিন্ডকে থামিয়ে দেবে
বলে।
রসের উৎস্রোতের মত
লবনাক্ত জল ছুটে আসে
উর্দ্ধপানে বাঁধভাঙ্গা উচ্ছ্বাসে
প্রাকৃতিক নিয়ম কে তুড়ি
মেরে উড়িয়ে দিয়ে.....
কষ্টের জমাট বাঁধা পিন্ড
অবরুদ্ধ
করেছে অক্সিজেনের পথ
স্মৃতির মিছিলে যানজট
হৃৎপিন্ডের শহরে
নিথর দৃষ্টি নিবদ্ধ থাকে
ট্রাফিক সিগন্যালে.....
লালবাতির অপেক্ষায়।
নিজের সাথে একা
প্রতিরাতে মুখোমুখি বসি
নিজের সাথে।
নিকোটিনের ধোঁয়ার সাথে
মিশে যায় প্রেমের বাষ্প।
অ্যাশট্রে তে জমা হয়
একরাশ অনুভূতির ছাই।
গ্লাসের মধ্যে
ভাসতে থাকে অশ্রুর বরফ।
স্মৃতির সরনী জুড়ে বাজতে
থাকে প্রতারনার বেহাগ।
মনের পোড়া আলোয় ফ্রেঞ্চ
ওয়াইনের
মাদকতা জাগায়
হারিয়ে যাওয়া
চুম্বনের ফসিল।
হঠাৎ অবরোধ
হেরে যাওয়া ভাবনা আর
জোর করে দাবিয়ে রাখা
ইচ্ছা গুলো
মাঝেমাঝেই বিরোধী দলের মতো
মিছিল করে মনের পথ ধরে ।
নানান দাবি দাওয়া নিয়ে।
যত দিন যায়
ওদের সদস্য সংখ্যা বাড়তে
থাকে।
সংগঠন আর ও মজবুত হয়।
ইদানীং ভেঙ্গে যাওয়া
স্বপ্ন গুলো ও
যোগ দিয়েছে
ওদের দলে।
হতাশার সাথে কথা চলছে।
সে ও হয়তো যোগ দেবে খুব
শিগগির।
ভেঙে যাওয়া প্রেম
এখন বিরোধী দলনেতার
আসনে।
তাই সে থাকে
সবমিছিলের একেবারে
সামনে।
ওদের মিছিল এলোমেলো করে
দেয়
আমার প্রতি দিনের
স্বাভাবিক জীবন যাত্রা ।
জানিনা ওরা কবে ,কখন
হঠাৎ অবরোধে
থামিয়ে দেবে জীবনটাকে।
তার ই অপেক্ষা এখন।।
কথা ছিল
শুধু কথা ছিল,কথা ছিল,
আর কথা ছিল
সে চাকরী পেলে
একটা নীল জামদানী কেনার
কথা ছিল।
শাড়ি কিনেছিল
সে উঠেছিল অন্য কারো
শরীরে।
আমার শরীর এখন নীল
বেদনায় ভরা।
বাইক কিনলে আমার পিছনে
বসে
লেপ্টে থাকার কথা ছিল
এখন শুধু বাইকের পিছনে
নয়
সারাক্ষন তাকে লেপ্টে
থাকে
অন্য কোন নীলাম্বরী।
তার সব কবিতা গানে
শুধু আমার থাকার কথা ছিল
তার কবিতায় এখন
নতুন নতুন গন্ধ।
কোথাও আমার ফসিল টুকুও
নেই।
অনেক দুরের নাম না জানা
গাঁয়ে
কথা ছিল কাঁচা মাটির ঘর বানাবে।
আমারই ভালবাসার সমাধি
ফুঁড়ে
উঠেছে তার অট্টালিকা।
প্রতিদিন দেখি প্রাসাদের
কার্নিশে
নিপুন প্রেমের খুনসুটি।
আমার গায়ে ছোঁয়ানো
হলুদের
অপেক্ষা করার কথা ছিল
এখন জীবনটাই ঝরা পাতার
মত হলুদ।
আমার জন্য তার শিউলি
বকুল বেলির
সুখ আনার কথা ছিল।
এখন সে ই আমার অসুখ হয়ে
গেছে।
আই সি ইউ তে শুয়ে আছে একটা সম্পর্ক
বেশ কিছুদিন ধরেই ভুগছিল একটা সম্পর্ক।
কাল গেছে আই সি ইউ' তে
কম্পলিট হার্ট ব্লকেজ নিয়ে।
টান টান উত্তেজনায় কাটছে প্রহর....
রক্ত গেছে অনেকটাই,
হয়তো আরো যাবে বোতল বোতল...
ধার করে চলছে শ্বাস,
তবু শোনা যাচ্ছে সিস্টোল ডায়াস্টোলের মৃদু আওয়াজ........
লা.....ভ(ব)......ডা.... ব
মাথার কাছে
স্ক্রিনে স্পষ্ট না হলেও এখনও
ভেসে উঠছে তার হৃদয়ের ছবি।
করোনারি আর্টারির পথ পুরোপুরি বন্ধ করেছে
কিছু জমানো অভিযোগ,ক্ষোভ,দুখ আর অভিমান
প্রবাহিত রক্তের সাথে মিশে থাকা অনুভুতি ধাক্কা খেয়ে
ফিরে আসছে বারবার
যাচ্ছেনা দখিনাঅক্সিজেনও।
আগেও দুবার ফিরেছে সে এরকম ই
করোনারি আর্টারির ব্লকেজের
বাইপাস সার্জারি
করে।
আর হয়তো ভেন
পাল্টেও উন্মুক্ত হবেনা
হৃদয়ের অবরুদ্ধ পথ
একটুকু ভালোবাসা আর বসন্ত বাতাসের প্রলোভনেও..........।