মঙ্গলবার, ২১ নভেম্বর, ২০১৭

রত্নদীপা দে ঘোষ



রত্নদীপা দে ঘোষ

মৃত্যুসংগ্রহ
  

মৃত্যুর সকাল ধরে

পুনরায় বেঁচে উঠছি
এস্রাজের চমৎকারে
শুয়ে শুয়ে দেখছি
... আরামের জাতিস্মরে আঁচের মুদারা
কেদারায় এক পাড়া কলকল
পিয়ানোর থেকে খুব বেশী দূর নয়

দানাপানির দিনমান

তেমন কষ্টকর
লাগছে না কো আর

বেঁচে উঠছি সাদাকালো দাবায়
বেঁচে উঠেছি রোগা-মোটা হাওয়ায়
বেঁচে উঠতে হয় পাখিমেয়ের
কুহুফুলে, ঝাঁকড়া চুলে ...
ঝুঁটিবাঁধায়





মৃত্যুর ভেতরে আলোর মথ। ঠোঁট জিভ। ডানা।
ওরা আশনাই করে। সোহাগ বাজায়। রীতিমত বিবাহ। ধূমধাম
আতসের পাড়। তাদের বহুমুখী বেনারসি আর দ্যুতিগানের বাসর।
উল্লাসে তিরতির। হলুদটুনিতে টগবগ।

মৃত্যুর চোখ থেকে যে মুগ্ধজল। তার লোনাটুকুই।
মানুষকে ভালো বাসার নেপথ্য। মৃত্যুর কপালে যে চাঁদ।
তার টিপ থেকেই। সিঁদুরদানের পল্লব। সিঁথি এইটুকুই।
সিঁথিতে ভোরে ওঠা মৃত্যুর হাত,






এখন মৃত্যু-আহত মাথাভর্তি দেব্দারুর শেকল,
স্নায়ুতন্ত্রে বিছিয়ে বসেছে ঝাউদস্তানা
বিতোফেনগুলি সরু সরু নাচ্ছে অথচ
কত্থক কইছেন না মগজের ঘুঙ্ঘুর .
যে কেউ দেখলেই এখন বলবে ...
আরে ,একে তো রোগে ধরেছে...
মহাসমুদ্ররোগ ধরেছে...
বাঁচবে না বেশিদিন

হাড়-মাস-অরণ্য মজ্জার পুষ্করিণী
ছড়িয়ে দেবে মৃত্যুর ঘাটে
আঘাটায় ...






এতো মৃত্যু। তাই মোরে যাই। মৃত্যুর স্তন থেকে। উড়ে আসে। বাস্তুসাপের দুধ।
অদ্ভুত সৎ। যেন মা। পর্বতের গরদ জড়ানো, খঞ্জনির ঢিপিতে বসে মা গাইছে। ঘুমপারানিয়া। পারানির চরকি। পথের ঝর্ণাঘোড়া। দূর থেকে লাফিয়ে আসছে পৃথিবীর উন্মাদ বজরা। মাটি আর জেটির। জাহাজসন্তান।
জোনাকি বোঝাই এই যে তাম্রপাতার মা।
সেই তো মা। এতো ভোর। এতো এতো আলোর জ্বালানিচুলা। হিরণ্ময়। 
কাহিনীর গোলপাতায় এতো মৃত্যু। তাই এত কুসুমব্যাগ্র লন্ঠন। মধুপাত্রে বেঁচে থাকা। 






আমাকে চরাতে এনেছ। মহাকালে রেখেছ বিভোর।
জানি। একদিন নাম্বে আমার সামনে। রথের গোধূলি থেকে নাম্বে।
ঊষাহীন প্রদেশে। তোমার চোখের পাথর গলিয়ে দেবে আমার নথ। কানপাশার 
জ্যোতি। ছুরিচাকুর অস্ত্র দিয়ে কাটবে আমার শস্যসীতাহার।

কান্নার কাঁধে শিকার দুলিয়ে তুমি বাইসন ছড়িয়ে দেবে আকাশে।

আমাকে চরাতে এনেছ। অশ্বত্থের কলিজায় বাঁশীসহ বাজাতে এনেছ।
জানি। ফিরিয়ে নেবে। যেদিন সংসারের কোয়ায় ভরপুর। দুপাশের চুমকি।
ফুরিয়ে যাবে বুকের বালিকাবুনো মত্ত-সারঙ।