নন্দিনী
পাল
জাহাজ
নোঙর ফেলেছি কিছুদিন
দাঁড়িয়ে আছি হাঁটুজলে
একটা একটা করে সমস্ত
সামান খালাস করে
একদিন ছেড়ে যেতে হবে
তীর
সে কদিন না হয় কিছু
দেওয়া নেওয়া হল
একদিন আসবে ডাক ওই দূর
দিগন্তের পাড়ে
জলের উপর সময়ের দাগ ফেলে
ভেসে যাব কোনও এক
নিরুদ্দেশে
সেই দাগ ঢেউয়ের রেখায়
ছুঁয়ে যাবে বালুচড়
আকাশের বুকে কালো ধোঁয়া উড়িয়ে
লিখে যাই শেষ কিছু গান
জাহাজ ছেড়ে যায় বন্দর
শেষ বারের মত ভেঁপু বেজে
ওঠে
বলে যায় আবার আসব ফিরে
ফিরতে তো আমাকে হবেই
আজও যে কিছু জিনিস পড়ে
রইল
কোনও এক বন্দরের পাড়ে।
স্বর্গ-মর্ত
গাছ থেকে পাতা ঝরে পড়বার
আগে
কোনো এক অদৃশ্য কৌশলে
লেগেছিল গাছের ডালে
গাছ থেকে পাতা ঝরে পড়বার
পর
নিঃস্তেজ হয়ে পড়ে আছে
মাটির উপর
এই দুইয়ের মাঝে পাতাটা
সচল হয়েছিল কিছুক্ষণ
সে কথা কেউ জানে না,
না গা্ছ, না মাটি
মুক্তির আনন্দে হেলতে
দুলতে পাতাটা নেমেছিল
স্বর্গ থেকে মর্তে
ওই যে নিথর শরীরটা ফুল
চন্দনে ঢাকা
কাল ছিল আর আজ নেই
ছিল আর নেইয়ের মাঝে বহে
যাওয়া ক্ষণ
সে শুধু সেই জানে
যে মুক্তির আনন্দে হেলতে
দুলতে চলে গেছে
মর্ত থেকে স্বর্গে
সত্যিই কি আলাদা কিছু
আছে
স্বর্গ ? মর্ত?
না কি শুধুই বৃত্তাকারে
ঘুরতে থাকা একটা পথ
আর বারবার ফিরে আসে
শুরুর বিন্দুতে
স্বর্গ মর্ত সব একাকার
শুধু আমরা চোখের জলে
পিচ্ছিল করি সেই পথখানি ।
হিমশৈলী
চরাচর অন্ধকার নিঃস্তব্ধ
নিশীথ
হিমশৈলী আমি ঘুমিয়ে আছি
জলের গভীরে
বন্দী আমি বহুকাল
জলের জানালা ভেঙে বেরোতে
চেয়েছি কতবার
কিন্তু পারিনি
ঘুম আমার ভাঙে না যে
আমি জেগে আছি আধোঘুমে
কিম্বা ঘুমিয়ে আছি আধো
জেগে
মাথার ভিতর একটা শব্দ
করে অনুরণ,
যাবজ্জীবন ক্ষণ,প্রতিক্ষণ
এ শিকল কাটবে কখন? কখন? কখন?
নিঃসঙ্গ অন্ধকুঠুরিতে
জলের ঘুলঘুলি
তার ভিতর দিয়ে স্বপ্নের
রোদ আসে
আমি জেগে উঠি স্বপ্নের ভিতর
তারপর আসে জলপরী,
সঙ্গে আনে কামনার মাছ
তারা আমাকে ঘিরে ধরে,
স্পর্শ করে আমার দেহ
আমি আবার ঘুমিয়ে পড়ি
জলের গরাদ ভেঙে আমার ঘুম
ভাঙাবে কে?
তাই তো আমি আজও বন্দী
সূর্য তুমি সপ্তরথী চড়ে
এসো আমার কাছে
তীব্র রশ্মির শরে ভেদ
করো আমার হৃদয়
শুষে নাও আমার চারপাশের
শীতল অন্ধকার
আমার গলিত শব মিশে যাক
সমুদ্রবক্ষে
আমার সমাধিতে
অথবা বাষ্পায়িত হোক,
তোমার নীল বিস্তারে
আমাকে কর মুক্ত
আমি পাই স্বাধীনতা তোমার
আলিঙ্গনে।
মৃত্যুগন্ধ
সে যে গন্ধহীন
তবুও তাকে ভরিয়ে তুলেছে
ফুল,
চন্দন আর ধূপের সৌ্রভ
বারুদের কটু গন্ধটা
এতকিছু দিয়েও ঢাকা যায়নি
জীবনের রং যখন শাদা
তখন তিনরঙের পতাকাটা আর
আকাশে ওড়ে না পত্পত্ করে
কফিনের মধ্যে সমস্ত
স্বপ্ন আজ বন্দী করে
শেষ পেরেকটা ঠোকা হয়ে
গেছে
গানস্যালুটের গগনভেদী
ধ্বনিও ঢাকতে পারে না সিঁদুরের হাহাকার
অশ্রু তখন গড়িয়ে পড়ার
রাস্তা না পেয়ে
মাঝপথে শুকনো স্মৃতিকথা
আত্মীয় পরিজনের ছায়ায়
মৃত্যুগন্ধ আটকে আছে।
খেলা
খেলাটা শুরু হয়েছিল ঠিক
তখনই
যখন নাভিপদ্ম ফুটেছিল
জলে।
খেলাটা চলছে,
রাত যেভাবে খেলে সূর্যের
সাথে
অথবা দিন যেভাবে লুকোয়
জ্যোৎস্নাকে
ঠিক সেভাবেই, সকলের অগোচরে খেলাটা চলছে
একটা কুণ্ডে ধরে রাখা
সময়
প্রতি মুহূর্ত বাজি
রাখছে, জেতবার-
একটা হার মানে খেলা শেষ
কুন্ডের ভেতর থেকে
বেরিয়ে আসা প্রতিটা ক্ষন
আমার হাতের মুঠোয় আমি
পুরে রেখেছি
তবুও আঙুলের ফাঁক দিয়ে
গড়িয়ে যাচ্ছে
একটু একটু করে
শেষ ক্ষনটুকু চলে গেলে
কুন্ড থেকে বেরিয়ে আসবে নীল জিন
আস্তে আস্তে ঢুকে পড়বে
শরীরে
প্রভুর আদেশে তুলে নেবে
হৃদপদ্ম
এটাই তো ছিল খেলার শর্ত
হারের বদলে দিতে হবে
ফুটে থাকা হৃদকমল
নীল হাত ডাঁটিটা নিয়ে
পালাচ্ছে
আমি ছুটব তার পিছনে
ওটা কে? এ তো আমি...না,
এ আমার নিথর শব
ঠিক তখনই বুঝতে পারব
খেলাটায় আমি হেরেছি
সেদিন,
যেদিন খেলাটা শুরু
হয়েছিল
মাঝে জেতার ক্ষনগুলো, আসলে পেতে রাখা গোপন ফাঁদ
কেননা কিস্তিমাত তো সে-ই
করবে।