মৌ মধুবন্তী
চিরকুট কৌতুক
বিরহ তোর কাছে কৌতুক ছিল
রোজ রিকশায় করে ঘুরতে
গেলে
মাঝে আমি বিরহ দিতাম
ইঞ্চি খানেক।
রিকশাওয়ালাকে সাক্ষী
রেখেই বলতিস,
কবুল বলা প্রেমিকা আমার,
রিকশাভাই, আজ আপনি সাক্ষী,
বলুন তো আমাদের দুজনকে
মানায় কেমন?
রিকশাওয়ালা দুহাত তুলে যেই
দোয়া
দিতে যেত,রিকশার চেইন পড়ে যেতো-
তুই তখন দস্যু, তুই তখন চোর- ডাকাত,
কেড়ে নিতি আমার বিরহ-
কেড়ে নিতে নিতে
আমার সমস্ত আমিকে
দৈন্যতার চোরাবালিতে
গেঁথে রেখে এখন আর
কারো ভালোবাসায় চেইন
তুলে দিচ্ছিস।
আমি আর রিকশা চড়িনা।
পায়ের নীচে ধুলো সাক্ষী, ইট সাক্ষী
জোছনার সাতসীকা সাক্ষী,
এই শহরের সব রিকশার চেইন
পড়ে গেছে।
ভালোবাসার রিকশা এখন
হাওয়ায়
ওড়ে।
আমার হৃদপিন্ডে বিরহের
চাকা ঘুরছে অবিরাম।
বড়াল বেদনা
বড়াল, আমাদের রাতগুলো ছিলআলো,
জলের রং ছিল মৌসুমী সং
মাজা,সাজা।
আমরা দুজনচিত হয়ে
আকাশের দিকে
চেয়ে চেয়ে
হরতন ঘুরাতাম,
তুমি আচমকাই বলতে, উপুড় হও।
ঘাড়ের গংগায় নাক ডুবিয়ে
জল পান
করতে। এতো এতো জল,ঢকঢক
ঢকঢক গিলে ফেলতে।
বিশ্বব্রমান্ডের যাবতীয়
নিষেধাজ্ঞা
উপুড় হয়ে পড়ত, তুমি পাঁজরে
ঢেউয়ের বাড়ি দিয়ে হাঁক
দিতে, উঠে
আসো যৌবনোদ্যত মানুষের
আজ্ঞা ভংগ করে।
উঠে আসো বরষার জলের মত,
বেপরোয়া।
আমিতো বেপরোয়া উঠে
এসেছিলাম,
তুমি কোথায় ভেসে গেলে
নিষেধের ডিংগি বেয়ে?
আকাশে আকাশে খোঁজ
আকাশকে জিজ্ঞেস করি, বড়াল কোথায়?
আকাশ বলে,খুজে দেখ, মেঘের
অক্ষি গোলকে।
মেঘ তো নেই
কোথাও কোন মেঘ নেই।
এ কেমন প্রহসন?
এ কেমন ঘোর লাগা তামাশা।
বাতাসে মুখ ঘষি,নাক ঘষি,যদি
গন্ধ পাই।
তোমার রোমকুপে রোমকুপে
ঘিরে ছিল যৌবনের
দু:সাহসী গন্ধ।
এখন বাতাস দম বন্ধ করে
রাখে
আমি মৃত্যুর মত স্তব্ধ!
লেক হুরন
হুরন লেকের পাড়ে
অনভ্যস্ত চাঁদ ডুবে
গিয়েছিল
সুর্যরশ্মি খুলে দিয়েছে
গেট
আমি খুলে দিয়েছি দ্বার-
দুয়ার
সিংগিং বিচের দিকে
তোমার ট্রাক বাঁক নিতেই
হ্রদের সাথে হৃদয়ের
সংঘর্ষ হয়।
চিরদিনের খোলা গেটে তখন
অন্তহীন অপেক্ষার
ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকাই জীবন
নামের
পতাকা উড়াল।
কখন যুদ্ধ শেষ হবে?
বিস্তৃত অভিধান
ইদানিং ধার,জমিদার
বিক্ষিপ্ত ফুটপাত, মাটিতে চাঁদের
রক্তপাত,
কবেকার কোন বেলা,ডুব দিয়ে হয়েছে অতীত,
কোথাও ঘুমিয়ে আছে জমিন
পতিত।
কাঠ ফাটা রোদ, মেঘে ঢাকা প্রবোধ,
সমাজের গায়ে দেয় ধাক্কা,
কত মানুষ অকালেই পায়
অক্কা।
পটলের পেট চিরে
মৃত্যু কি লুকিয়ে থাকে
পটলের পেটে?
নইলে মানুষ কিভাবে পটল
তোলে?
সকাল জেগে ওঠে
রাত ভোর হবার আগে ঘুমায়-
ফেসবুক নির্ঘুম নিয়োজিত
মানুষের সেবায়।
এভাবেই দিন যায়, রাত কাটে
সনেট কবিতাও
আজকাল যেখানে সেখানে
নাচে
ফেসবুক করিনি বলেই জানি
রাতভর ঘুমিয়ে কাটিয়েছি
আমাদের রক্তজবার মত দিন
ছিল
রাত ছিল ময়ুরকন্ঠী
একথা যতবার লিখতে চেয়েছি
শব্দেরা উদাস হয়ে গেছে; থেমে গেছে
বিনির্মীত বাক্যের
পথচলা।
এতো কথা ছিল আমাদের,
সময় গড়াতে গড়াতে পড়ে যেত
নদীর জলে
তখন নদী বলে দিত, তোমরা এবার থামো,
ওদিকে গেলে ডুবে যাবে,
সেদিকে গেলে চরে আটকে
পড়বে
দুজনে মিলে ভূ-মধ্যসাগর
হও,
আমিও সময়ের সাথে গড়িয়ে
পড়ি।
আমাদের এখন সংগমকাল
নদীর কথা শুনে, আমরা চমকে যেতাম,
থমকে যেতাম না। আমাদের
আগামিদিনের
জোতিষ্কমন্ডলীরা
কে কোথায় স্থাপিত হবে,
আমরা চন্দ্রাবতী
কুলদ্বীপ আর নভোমন্ডলের
সুত্র নিয়ে মেঘের ভাঁজ
করতে ব্যস্ত হয়ে যেতাম।
মাঝে মাঝে তোমার আংগুল
মেঘের ভাঁজে কোমল পরশ
খুঁজতে গিয়ে পথ হারাত।
আমি খিলখিল হাসির
সাংকেতিক পথ বিছিয়ে দিতে
দিতে চলে যেতাম দিগন্তের
ওপারে, বাতাসের মাঠ পেরিয়ে,
বসতাম গিয়ে আকাশের
কার্ণিশে।
তুমি ভয়ে উতকন্ঠায়
চিতকার করে বলতে, নড়ো না, পড়ে
যাবে।
আমি অবাক হতাম। পড়ে
কোথায় যাব?
সবই তো পাড়া প্রতিবেশী।
তুমি অবুঝের মত কিন্নর
ঢেউ তুলে
তোমার সুরেলা কন্ঠে
চিতকার করতে করতে,
একদিন এসে বসলে আমার
পাশে,
আকাশের কার্ণিশে।
উপর থেকে দুজনে উপুড় হয়ে
দেখলাম,
ফেলে আসা পৃথিবীর চাদর;
সেই চাদরে ফুটে থাকা
হাজার হাজার ফুল,
সব আমাদের রক্তজবা।
হঠাত এক দমকা হাওয়া এসে
ধাক্কা দিলো তোমার পীঠে,ঘাড়ে,মেরুদন্ডে,
তুমি উল্কার মত উড়ে গেলে,
মিলিয়ে গেলে অদৃশ্য
দেবতার গনগনে আগুনে।
সেই আগুনের তাপে আমি
পুড়তে থাকি
অন্তহীন এই বিরহের পথে।
আজ আর কোন কথা নেই।
সময় এখন নীরব, নিস্তব্ধ, গহীন
বালুর চর।