বিপ্লব
গঙ্গোপাধ্যায়
কোথাও যাওয়ার ছিল
কোথাও যাওয়ার ছিল, ভুল রাস্তা গন্তব্যবিহীন
এলোমেলো কোনদিকে গেছে
খুঁজতে খুঁজতে
বারবার বদলে গেছে পায়ের পাতার ছাপ
এখানে এসেছি
দশটা পঞ্চাশের বাস
প্যাসেঞ্জার বমি করে চলে
গেছে, অদৃশ্য
হয়েছে দূরে
গঞ্জের দিকে।
কোথাও যাওয়ার ছিল
পথের বিরহে একা
পায়ে পায়ে ঢুঁড়ে যাই ধুলো।
বিরহ
প্রতিটি অক্ষর আজ
অহংকারী
একবারও কথা বলল না
এ বড় শীতের দিন, রোদ প্রার্থনার স্বর
পাতা খসে
উদাসীন উড়ে যাচ্ছে শূন্য
খাতা
বসে আছি ঘাড় নীচু জ্বর
কেবল বিছানা জুড়ে দহন
প্রবাহ
মাইল মাইল জুড়ে উসখুস
সাদা কাগজের স্তুপ
নিরক্ষর।
মৃত্যু
সে যদি আয়নার দিকে তাকায়
তাহলে দেখবে তার হৃদপিণ্ড উগরে
দিচ্ছে কেউ
আর বেদখল হয়ে যাচ্ছে
নিজস্ব অবয়ব
হাতের জায়গায় হাত নেই
পায়ের জায়গায় পা
চরিত্রের জায়গায় চরিত্র।
তবু কেউ কড়া নাড়ছে
কেউ চীৎকার করে বলছে – ঠিক তোমার মতো দেখতে
একটা লোক জলের দিকে
তাকিয়ে শূন্যতা শুষে নিচ্ছিল
তাকে দেখেছো ?
একটা জলাশয় গিলে নিচ্ছে
সম্পুর্ণ মানুষকে
তার পোশাক পড়ে আছে
ধানক্ষেতের উপর।
তুমি কিছু ফেলে যাচ্ছো
তোমার হাতের মধ্যে
মায়ারাস্তা,
অতিক্রম করে চলে এলে
রাস্তার দুপাশে কিছু
গাছপালা, ধানিজমি
রন্দ দিয়ে তুমি তাকে
আগলে রেখেছ এতকাল
শস্যের স্বপ্ন নিয়ে প্রেম লিখে রেখেছো দেওয়ালে।
দেওয়াল অক্ষত নয়
ভেঙে যায় অক্ষরের ছাদ
জল পড়ে
বন্যা ভাসিয়ে নেয় পায়ের নিস্তব্ধ ছাপ
শস্যলেখা মাঠ।
তুমি কিছু ফেলে
যাচ্ছো
তোমার বিরহ, ব্যথা ,দীর্ঘশ্বাস বাতাসে উপুড় হয়ে আছে।
রেখা
জন্মের ভেতর দিয়ে যে পথ
তার অনুভূমিক রেখায় এসে
দাঁড়ালে তুমি দেখতে
পাবে আমার করতল
হাত ছুঁয়ে দেখো
গ্রহান্তরের দিকে চলে
গেছে তার অমলিন রেখাগুলি