সম্পাদকীয়
বাঙালি
মানেই সাহিত্যের প্রতি একটি বিশেষ আবেগ, এমনই ধারণা আমাদের অধিকাংশ মানুষেরই। কারণ আমরা আবেগপ্রবণ জাতি। আমাদের
মননবৃত্তিতে আবেগেরই প্রাধান্য মূলত। আর তাই আমাদের বাংলাসাহিত্যে এত মাসিক
পত্রের আধিক্য। সাপ্তাহিক থেকে বাৎসরিক
সাহিত্যপত্রের বরণডালায় লালিত হয় বাংলাসাহিত্য। শতাব্দীপ্রাচীন এই পরিসরে প্রায় ধুমকেতুর
মতই আবির্ভাব নেট দুনিয়ার হাত ধরে বাংলা অনলাইন ব্লগ ম্যগাজিনের। এবং এরই
পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের বঙ্গসমাজে ঘটে চলেছে এক নিরব বিপ্লব। নেট যুগের পুর্বে
সাহিত্যচর্চা মুলত কেন্দ্রীভূত ছিল সাহিত্যিকদের মধ্যেই। কারণ সম্পাদকের মনোনয়নের
উপর নির্ভর করত কারুর লেখা প্রকাশের ভবিষ্যৎ। ফলে সম্পাদকের মনোনয়ন স্বভাবতঃই
সাহিত্যগুণ সম্পন্ন লেখার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু এরই মধ্যে নেট জগতের
আবির্ভাবের হাত ধরে মূলত ফেসবুক এবং ব্লগকে কেন্দ্র করে বাংলা সাহিত্যের পরিসর
বৃদ্ধি পেয়ে গেছে বহূগুন। এই যে নিজের স্বাধীনতায় নিজেই নিজের লেখা প্রকাশ করার
উপায় এসে গেছে প্রত্যেকের হাতের মুঠোয়, এবং সেই লেখার প্রতিক্রিয়াও পাওয়া যাচ্ছে তাৎক্ষনিক, এতেই লেখার বিষয়ে উৎসাহ উদ্দীপনা অনেককেই নিয়মিত লেখালিখিতে টেনে আনছে
প্রতিনিয়ত।
আগে
নামীদামি সাহিত্যপত্রে লেখা পাঠিয়ে বসে থাকতে হত কবে সে লেখা প্রকাশিত হবে, বা আদৌ হবে কিনা জানতে। প্রকাশিত হলেও জানা যেত না পাঠকের
মতামত;
ফলে অনেকেই ভেতরে ভেতরে লেখার সুপ্ত বাসনা নিয়েও অধিকাংশ
সময়েই লেখালিখি থেকে দূরবর্তীই রয়ে যেতেন আজীবন। আজ কিন্তু তারাই এই নেট জগতের হাত
ধরেই তাদের সেই সুপ্ত বাসনার বহিঃপ্রকাশের পরিসর পেয়ে যাচ্ছেন হাতের মুঠোয়। এখানেই
এই ফেসবুক এবং ব্লগ বাংলা সাহিত্যচর্চার পরিসরটাকেই এক লাফে অনেকটাই বাড়িয়ে দিয়েছে
বলা যেতে পারে।
কিন্তু
প্রশ্ন হল এইযে, যে কেউই
সাহিত্যচর্চায় অংশগ্রহন করতে পারছে এতে বাংলাসাহিত্যের কতটা উন্নতি ঘটবে।
সাহিত্যজগতে বেনজল ঢুকে যাওয়ার সম্ভাবনাই বা কতটা? সাহিত্যের উৎকর্ষতায় সত্যিই কি এই নেট দুনিয়ার সদর্থক ভূমিকা থাকবে? এর একটা সহজ উত্তর এই হতে পারে যে, ফলেন পরিচয়তে। অর্থাৎ আজি হতে শতবর্ষ পরে বোঝা যাবে আসলেই
কতটা সুফল ফলল এই ঘটনায়। কিন্তু কি দেখছি আমরা ঠিক এই মুহূর্তে? বর্তমান বাংলাসাহিত্য কতটা এই ফেসবুক বা ব্লগ নির্ভর? এর উত্তর খুব সহজ, একটুকুও নয়। তবে কি এতক্ষন আমরা অযথাই বাগারম্বর করলাম? না তাও না। তবে? আসলে এখনো সত্যিকারের সাহিত্যচর্চা সেই প্রচলিত পথেই এগিয়ে চলেছে। যারা সেই
সাহিত্যচর্চার সাথে জরিত তারা প্রচলিত ধারাতেই প্রবাহিত রাখছেন তাদের সাধনা। কিন্তু
তবুও এতদিন সাহিত্যচর্চা যে সীমিত পরিসরের ঘেরাটোপেই বাঁধা ছিল, বর্তমানের নেট বিপ্লবে সেই ঘেরাটোপের সংকীর্ণ পরিসরটুকু
অনেকটাই দূর হয়ে গিয়েছে। যার তাৎক্ষনিক
ফলস্বরূপ, সেই আগে যারা সাহিত্যচর্চার অঙ্গনে স্থান পেত না, তারাও নিজের ভালোলাগার একটা নিজস্ব স্থান করে নিতে পারছে।
এই চিত্রটি বিভিন্ন ব্লগ সাইটে ঘুরলেই অল্পবিস্তর চোখে ধরা পড়তে বাধ্য। আর এইখানেই
ঘটে গিয়েছে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন। না এখন বাংলা সাহিত্যচর্চা আর সীমিত পরিসরে
আবদ্ধ নয় পূর্বের মতো। এখন অনেকটাই উন্মুক্ত পরিসরে ডানা মেলে উড়ছে বাংলার
সাহিত্যসরস্বতী।
না হয়ত
একটু বাড়াবাড়িই হয়ে গেল, হয়ত ঠিক উড়ছে
নয়,
হয়ত হামাগুড়িই দিচ্ছে, কেননা নেট সর্বস্ব এই সাহিত্যচর্চার বয়স এখনো নেহাৎই তার প্রথম শৈশবেই পড়ে আছে; তবু ঘটে গেছে একটা বিরাট পরিবর্তন। সেই পরিবর্তনের হাত ধরে
হয়ত অচিরেই উত্থান হবে নতুন প্রজন্মের নতুন ধারা, যারা এই ব্লগ ও ফেসবুকের মাধ্যমেই
পুষ্ট করতে থাকবে ভবিষ্যতের বাংলাসাহিত্যের ধারাটিকে। যে ধারা প্রচলিত
সাহিত্যধারার সাথে হাত ধরেই চিনে নিতে থাকবে তার সাহিত্যিক রাজপথের পথ চলার মূল
চলনটুকু। কিন্তু তার আগে অনেক উত্থান পতনের পর্ব পেরোতে হবে তাদের। অনেক ঝাড়াই
বাছাইয়ের পর্ব পেড়িয়ে তবেই হয়ত যথার্থ ভাবে
হাত মেলানো সম্ভব হবে সাহিত্যের মূলধারার সাথে। তাই ব্লগ সাহিত্যকে অবহেলা
করে নাক উঁচু মনোভাব পোষন করে নয়, সাহিত্যের মূলধারার
কান্ডারীদেরও এই বিষয়ে সচেতন হয়ে বন্ধুত্তের হাতটি বাড়িয়ে দিতে হবে নবীনতর
প্রজন্মের এই নবতর ধারাটির দিকে। তবেই হয়ত বাংলাসাহিত্যের ক্রমবিস্তৃতর পরিসরটি
যথার্থ ভাবেই পুষ্ট হতে থাকবে সাহিত্যের উৎকর্ষতায়। এবং যার সুদূরপ্রসারী ফল ফলবে
সাহিত্যপ্রেমীই শুধু নয়, সাহিত্যবোধ
সম্পন্ন মানুষের সংখ্যাধিক্যের পরিসংখ্যানেই। আর যে কোনো দেশেরই যেকোনো ভাষার
সাহিত্যের পক্ষেই তা একটি বড়ো সুখবর। তাই নেট নির্ভর এই ব্লগসাহিত্য বাংলা
সাহিত্যের পক্ষে যে আশীর্বাদ স্বরূপ একথা নির্দিদ্ধায় বলাই যায়। শুধু অপেক্ষা করতে
হবে আর বেশ কিছুদিন, যতদিন না ব্লগসাহিত্য তার শৈশব ও বাল্যদশা পেড়িয়ে পৌঁছিয়ে
যাবে তার পুর্ণ যৌবনে। ততদিন আসুন তাকে যত্ন করি সযত্নে।
হ্যাঁ
ব্লগদুনিয়ায় মাসিক কবিতাউৎসবের আবির্ভাবও নেট বিপ্লবের সূত্র ধরেই। এবং মাসিক
কবিতাউৎসবের কবি সদস্যরা সকলেই মূলত এই নেটসাহিত্যেরই কাণ্ডারী। যদিও অনেকেরই
সৃষ্টিমুখের অন্যতম অভিমুখ সনাতনী ছাপা পত্রিকার পরিসরেও বিস্তৃত তবুও তাঁদের
সৃজনশীলতার প্রধান পরিসরই আজ মাসিক কবিতাউৎসবকে ঘিরে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে বিকশিত হয়ে
উঠছে। আর এইসূত্রেই আমাদের এবারের নিবেদন “বিরহ ও মৃত্যু” বিশেষ কাব্যসংকলন। কবিতাউৎসবের
এবারের উদ্যোগে আমরা যে বিপুল সাড়া পেয়েছি, তাতে সত্যিই আমরা অভিভুত। আমাদের
সাধ্যের অতিরিক্ত কবিতা চলে আসায়, অনেকের কবিতাই আমরা এই সংকলনে রাখতে পারিনি।
তাঁদের প্রত্যেকের কবিতাই আমাদের পরবর্তী সংখ্যায় প্রকাশিত হবে। আর এই প্রসঙ্গে
খুবই দুঃখের সাথে আমাদের স্বীকার করতেই হচ্ছে, অনেকেই এমন ফর্ম্যাটে কবিতা
পাঠিয়েছেন, যে সেগুলি আমদের পক্ষে গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। সব উদ্যোগেরই কিছু
দূর্বলতাও থাকে। যেহেতু এটি একটি অনলাইন উদ্যোগ, তাই কিছু প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতার
কারণেই সবরকমের ফর্ম্যাটেই কবিতা গ্রহণ করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই
আমন্ত্রণলিপিতে উল্লিখিত ফর্ম্যাটে কবিতা পাঠালেই একমাত্র কবিতা প্রকাশ সম্ভব। এবং
এই সাথে আরও একটি কথা জানানো দরকার, অনেকেই মনে করেন কবিতা পাঠিয়ে দিলেই প্রকাশিত
হওয়ার কথা। না বন্ধু, খুবই দুঃখের সাথে জানাতেই হচ্ছে যে এমন অনেক লেখাই আসে যা
কোনভাবেই কবিতা হিসাবে প্রকাশের উপযুক্ত নয়। কিংবা কবিতাউৎসবের মানের সাথে
সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। সেইসব ক্ষেত্রে আমরা সত্যই নিরুপায়। তাই কবিতাপ্রকাশ সবসময়ই
সম্পাদকমণ্ডলীর মনোনয়ন সাপেক্ষ।
কবিতাউৎসবের ফেসবুক পেজ :
https://www.facebook.com/amaderkobitautsov/ কে লাইক করে ফেভারিট করে
রাখলে কবিতাউৎসবের যাবতীয় তথ্য ও বিজ্ঞপ্তি সরাসরি আপনার ফেসবুক ওয়ালেই দেখার
সুযোগ ঘটবে। এই পেজেই কবিতাউৎসবে প্রকাশিত কবিতাগুলিও নিয়মিত প্রচারিত হয় লিংকসহ।
এবং এরই সাথে কবিতাউৎসবের ফেসবুক গ্রুপ:
https://www.facebook.com/groups/kobitaautsov/# এ জয়েন রিকোয়েস্ট পাঠালে গ্রুপের সদস্য হিসাবে
গ্রুপের ওয়ালে আপনার কবিতা ও কবিতা বিষয়ক মূল্যবান মতামত সরাসরি পোস্ট করে সকল
সদস্যদের সাথে শেয়ার করেও নিতে পারবেন। গ্রুপের পিনপোস্টে এই বিষয়ে সুস্পষ্ট
নির্দেশাবলীও দেওয়া আছে।
এছাড়াও কবিতাউৎসব গুগুল কমিউনিটি:
https://plus.google.com/u/0/communities/117144176931778027450
তে সরাসরি জয়েন করে একটি সম্পূর্ণ ওয়েবসাইটের মতো
সুযোগ গ্রহণ করতে পারেন। এখানে আপানার কবিতা পোস্ট করার সুবিধা ছাড়াও আপনার নিজস্ব
সাহিত্য ব্লগের লিংক নিয়মিত ব্যবধানে প্রচারের সুবন্দোবস্ত ও অন্যান্য একাধিক
বিভাগে আপনার যোগদানের সুযোগ রয়েছে। রয়েছে সুস্পষ্ট নিয়মাবলীও।
***কবিতাউৎসবে লেখা পাঠানোর সাধারণ নিয়মাবলী:
১) স্বনির্বাচিত স্বরচিত ৫টি প্রিয়কবিতা পাঠাতে হবে
২) অভ্র বাংলা হরফে টাইপ করে একটি এমএস-ওয়ার্ড ফাইলে এটাচ করে
৩) কোনভাবেই পিডিএফ ফাইল ও বিজয় ফন্ট গ্রহণযোগ্য নয়
৪) একটি প্রফাইল চিত্র
অতি অবশ্যই আবশ্যক
৬) পাঠানোর শেষ দিন প্রতি বাংলামাসের ১লা তারিখ
***কবিতাউৎসবে প্রকাশিত কবিতার স্বত্ত্ব লেখকের নিজস্ব।
কবিতাউৎসব
আপনার সৃষ্টিশীলতার প্রতি ঐকান্তিক শ্রদ্ধাশীল থেকে সবরকমের সহযোগিতার বিষয়ে
সাধ্যমত অঙ্গীকারবদ্ধ। কবিতাউৎসবের সাথে থাকুন কবিতাউৎসব আপনার পাশে রয়েছে সবসময়।