মঙ্গলবার, ২১ নভেম্বর, ২০১৭

সৌমী শাঁখারী



সৌমী শাঁখারী

শেষবিদায়
জলাশয়ের ওই ডুবে যাওয়া তীরটা,
যেখানে বিসর্জনের শেষ পদরেখা ছুঁয়েছে---------
একাকী রাতের চোখের ভাবনায় আরো অতলে তলাবে,
তলানীর পাত্র দেখবে শত শত বিরহের জমায়েত।

হৃদয়ের উপচানো দুঃখের-ই নেই আশ্রয়,
বাঁচতে হয় শত জনমের আঘাতে-----------
সর্বোপরি ইতিহাসের শুকনো পাতার মর্মরে করুণ ক্রন্দন,
অহরহ সাহস যোগাবে ভালোবাসার গানবেলার আসর সাজিয়ে।

মলিনা মুখায়ববে দেবীপক্ষের নক্ষত্রমালায় গমন,
চাঁদের হাসিতে অম্লান আহ্বান শায়িত---------
জীবনের ভাগ্যগাঁথা ঝরে যায় ঝরা ফুলের পাপড়িতে,
মৃত্যুর অমর্ত্য আলোক ডাক তো দেবেই শেষবিদায়ে!!!





বোধহয় এভাবেই জন্ম

জীবনের প্রহেলিকা.........
বোঝা বড়ো দায় বন্ধু।
ভালোবাসা এখানে ভাবের আকাশে তলিয়ে........
বাস্তবে আতলান্তিস শৈবালের সিন্ধু।
কখনো তা বেজায় উচ্চকিত মার্গের ধ্বনি,
প্রবাদ প্রতিম কাঞ্চনজঙ্ঘার মায়াবী আলোয় মোড়া।
রোদটি তখন, সকল‍ ব্যথার প্রলেপে জীবনদায়ীনী!!!

কখনো ‌আবার দেরাদুন পাইনের মুগ্ধ দৃশ্য,
আড়মোড়ায় আলমোড়া উষ্ণতার আবেদন জাগানো।
মুসৌরীর বাঁকে ছোট্ট নদীটি তখন খুশিতে বৃষ্টি মেয়ে,
তুমি ভালোবেসে নাম রেখেছিলে রিমঝিম।

নেহাৎই তুষার ঝড়ে লাধাকের গ্রাম নিশ্চিহ্ন,
নিঃসীম রক্তপাত পুরো হৃদয়ের গিরিখাত জুড়ে।
মেঘ ডাকা বৃষ্টি,আজ সেখানে দুরুদুরু বুকে.........
লিখে রাখে অসম্পূর্ণ পরিচয় পর্বের সংলাপের অংশ।
চোখেতে শাওনের ঋতু থেকে যায় বছরভর।
অপরূপা ধন্যি মেয়ে সে...............
মৃত্যুর সাথে মিশেও ঝরে তোমার আমার বুক বেয়ে!!!!

চাঁদনী রাত তখন নিজগুণে একাকিনী,
শরীর ঢেকে রাখে অতীতের ঝরা পাতায়।
তুমি দেখতে পাও না তা, তাঁর তিরতির কান্না........

....নদী হয়ে সকল বিসর্জিত অনুভবের বোধহয় এভাবেই জন্ম।





রঙ

মৃত আলোর খাঁজে রাত জাগে
অর্ধনিমিলিত নেত্রে
হারানো আপনজন তখন বহুদূরে
স্মৃতির চিতাকাঠে দাউ দাউ করে জ্বলছে
মনে উড়িয়ে দিচ্ছে একরাশ ছাই রঙা শূন্যতা
সুবর্ণচরে পড়ে রয় ধূসরিত জীবনের অস্থি
ভৌগোলিক ব্যাখ্যায় যদি সবুজ চারায় জন্ম নিই
পাহাড় তলে বসে চিরযৌবনা নদীটির প্রেমিক হবো
এ কাহিনীর কিছুটা তাও সরল অর্থ বয়ে যায় স্রোতে
ঢের ভালো মনুষ্যত্বকে মরতে দেখার চেয়ে
স্পর্শকাতর সম্পর্ককে মিথ্যে স্পর্শে ভাঙ্গার বিনিময়ে
চুম্বন তখন গরল পান করে হয় নীলকন্ঠ
শিরায় শিরায় ঢেকে রাখে অসম্পূর্ণ জীবমিষা.......
বিষুবরেখায় উষ্ণতা বেড়ে যায় গোলাপের
স্নিগ্ধ রূপে না জানি অজানা রাগের লাল উষ্মা
শরীরটা মনের ক্যানভাসের বিবর্নতায় শুকায়
রামধনুও তুলি হারা কোনো মনমরা আকাশ
শুভ রংদোলের মর্যাদা খুঁজতে মরিয়া---------------





মনে রবে কিনা রবে আমারে

এতো ভালোবেসেছি কেনো......
আবেগের একটানা মুষলধারা বৃষ্টিতে।
ভেজা চোখ কোনোদিন শুকাবে কি?
ভাবিনি রিমঝিম তালের আলাপচারিতায়।

জানি আর কখনো ভাবতে চাও না,
মনখারাপের রাতে শ্রাবণের জড়িয়ে ধরা.......
নদীর বাঁকে হারিয়ে ফেলেছো অনুভূতি,
এক কালবৈশাখীর ক্যানভাসে ঝড়ের আঁকা ছবিতে।

তোমার কঠোর কথা.........
স্মৃতির পাল্লা বন্ধ করতে লাগছে অদম্য জোর।
মনের সাথে টানা হ্যাঁচরাতে ক্লান্ত আমি,
দূরবর্তী মেঘেদের ডাক আসতে যদিও অনেক দেরি।

মনে করাতে চাই না সাঁঝসকালের অন্তরঙ্গতা.....
পাখিদের ঠোঁটে উড়ে গেছে সেই ইতিহাস।
তোমার স্বর্গ দুয়ারে যদি অবহেলায় পড়ে থাকে পারিজাত ফুল..........
ভালোবেসে তুলে নিও তাকে......
মর্ত্যালোকে যে অপরাধে দন্ডিত আমি,পরলোকে সেই আমিই, নয়তো তোমার ভুল!!!!!

....ভালোবাসা স্বর্গীয় অনুভুতি বোধহয় সেইজন্যই‌ বা।





প্রেম-----তুমি কি শুধুই যন্ত্রণার?

সেই গল্পটা বলা দরকার.........
যেখানে ঘন লাল কৃষ্ণচূড়ারা,
     হুহু বাতাসে গান লিখেছিলো।
ফাগুনিয়া মনের চৌকাঠে প্রেম ছিলো
নবাগত অতিথি।

সীমারেখা ডিঙিয়ে আমিও ছুঁয়েছিলাম তাকে.........
কৃষ্ণচূড়ার সুরকে তুলে,
                        এলোচুল কবরীতে।

অনেক বছর পর.................

খুলে দেখি আহ্লাদী চিঠিটির ভাঁজে ভাঁজে.….......
গোপন কান্নারা লক্তিম পাপড়ি মেলে তাকিয়ে।
ফুল তারা হতে পারে নি সেদিন........
ছিলো কুঁড়িতেই বিভ্রম।

চেনা পরিধিতে প্রেম বুঝি চিরায়ত অচিন...........
আঘাতের নদীতে ভেসে গেলো কে কতোখানি,
দেখে না পিছন ফিরে।

ভালোবাসার লজ্জা শুধু কৃষ্ণচূড়ার পাতার আড়ালে.........
কে বলে বৃষ্টিতে ভেজা মানা।
কেউ তো ঢাকতে আসেনি আমায় রাতদিন......
দুহাতটি বাড়িয়ে দিয়ে,সোনা।

বিষম ক্ষতচিহ্ন দেহ নিয়ে প্রেম ছিন্নভিন্ন..........
হাঁটার পথে এক সমুদ্র জল।
মন্দার মাধুর্য সেখানে ঢেউ সেজে দাঁড়িয়ে...........
দুষ্মন্ত প্রেমিক বেশে।

গড়িয়ে পড়ে আবেগে খসা পাপড়ির আবডাল...........
শুকনো, ঝুরঝুরে কাগজের নৌকা হয়ে।

আপামর প্রেম বুঝি অবলুপ্তির খুব প্রিয়!!!!!