মঙ্গলবার, ২১ নভেম্বর, ২০১৭

মৌমিতা মুখার্জী



মৌমিতা মুখার্জী

ভুলিস যদি
------------------

তুই যদি ভুলতে চাস তবে আকাশকে বলব
শরতের সোনা রোদ মাখা টুকরো  টুকরো মেঘগুলো
ট্রাসবিনে রেখে আসতে-
                 হয়ত তৃষ্ণার্ত কেউ খুঁজছে....

তোর জন্যে যখন রাস্তার মোড়ে, গলির মুখে
চেয়ে থাকি, নোনা ফাটলেও কচি পাতা হাত নাড়ে ইশারায়
পড়ন্ত বেলায় ভাটির একহাঁটু কাদায় কোথায় মিশে যায়
কে জানে-

ছয় ঋতুর আর কয়েকটাই তো বাকী
তোর সাথে কি আজ প্রকৃতির আড়ি...
 কেন বলবি আমায়-
একমুঠো কাঠচাঁপা রাখা আছে
তোর নাম করে;
ভেজা রোদের আশায় তারা উজানমুখো হয়-
চোরা স্রোত নিভে গেছে আলোর মালায়....

প্লাস্টিকের আগুন ফুল দেখে কোকিলটা
গলা ছেড়ে গেয়ে চলে-
জানত না পলাশ গাছটা কবে বিষ খেলে....
ওরা কেউ ঋতুচক্র বদলাতে চায়নি....



জরিপ
---------------------------------------
সে এক পোড়া সাঁঝের বেলা
ছাই এর গায়ে গায়ে ভেজা মাটির আঁকড়ান;
কাঁঠালচাঁপার গর্ভ জুড়ে সুগন্ধির কান্না।
মেঘ ঢালা ঘন কুয়াশার চাদরে রাত নামে
নাটমন্দিরে।
পূরবীর সাতসুরের রঙে মেঘলা আকাশে
অপরাজিতার নীল উপুড় হয়েছে......
সোনালী কদম ফুলের ঠোঁটে
সদ্যফোটা রক্তজবার কত কি
এসে কানাচে কানাচে জড়ো....
নাচঘরে একশো মোমবাতির ঝারে
আলো দিলেও অন্ধকূপ -
জানলার ঘষা কাঁচে লেগে
বারবার ফিরে আসে মরচের দাগ-
খড়খড়ির পাশে।
সময়ের নিত্যকার অভিনবত্বে
আশা-নিরাশার অভিযোজন;
রাত ফুরোলে.... ছোপধরা গুল্মলতায়
জলের ফোঁটাগুলোয়,
আধবোজা রোদের লুকোচুরি।




যে ভুলতে চায়
-----------------------
যে আজ তোমাকে ভুলতে চায় তার পাশে দাঁড়াও....
নতুন পথে যে এগোল তার সামনের পথে ধুলো সরিয়ে দাও-
দেখো যেন তোমার ছায়া
ওই ধুলোকণায় মিশে মুছে দেয় পুরোনো সবকিছু;

সে যেন ফিরে যায় পড়ন্ত বেলার সাথে-
                        ভাঙা মেঘের খাঁজে
ভাঙনের সুরে মিশে ডানায় ডানায়....

দূরে চেয়ে থেকো ক্ষুদ্রকণায় মিশে,
দুই কিংবা তিন স্তর পেরিয়ে-
দেখবে আকাশছোঁয়া মেটিওর থেকে মেটিওরাইটস
সকলেই মিলেছে কণায় কণায়;
তবু বিধাতার লিখনে বাঁধা
কক্ষপথীয় অসীম আবর্তন-
মায়ার আগলে....
ফেলে আসা পথে....ঋতুরাজকে স্মরণ।




ফাগুন তোর বনমালী
---------------------------------
বনের আগুন হারিয়েছে দশ দিশায়-
চিলতে ফাটল দাবানলের শিখায়.....
পলাশ শিমূল আনমনে সুর বাঁধে
বাগদেবী আজ শ্বেত-গোধূলির সাজে।

ভোরের আলোয় অস্তরবির সাজ-
দিগবলাকা ছন্নছাড়া আজ;
অপ্সরী দল বীণার ছন্দ ভোলে
বাঁশরী তুমি কি সকালেই যাবে চলে?

বনমালী দেখ সন্ধ্যারতির থালায়,
জুঁই করবী ফাগুন আবির মাখায়
গোলাপের সাজি অপলক শূন্যতায় -
সুগন্ধি পোড়ে.... উদাস বাউল গায়।

চল বনমালী একলা ডিঙি বেয়ে-
নীলচে বনের আগুন খুঁজি গিয়ে....
ঢেউয়ে ধরে দাবানলের ফাটল
আছড়াবি তুই পুড়িয়ে সিক্ত আঁচল।

বাঁশীকে সাধিস একতারারই তালে,
পূর্ণিমারাতে রুপোলী অলঙ্কারে
সাজব আমি বাগদী মেয়ের ছাঁচে-
ঝিনুকের মালা দিবি তো আমার গলে?




ওঠাপড়া
-----------------------------------------
মনকেমন আজ লাল পাহাড়ি চোখের কোনায়
বালুর পাড়ে-
সাঁঝ সকাল আর দিন ও রাতে
খুঁনশুটি নেই; ভীষণ ফাঁকা রোদের ঝলক
টুকরো মেঘে,
টিলার ওপর বনশাই তায় -- লাজুক মেঘের
বৃষ্টি মেশায়  সুরে সুরে....
পথ বেঁকেছে ঘন গাছের সবুজ নেশায়-
বউ কথা কও গাছের ঘেরায়....  চিলেকোঠায়
ইলশেগুঁড়ির গন্ধ খোঁজে;
দিন নিভিয়ে মাঠের ধারে সুয্যি ফেরে....
ফুলে ফুলে কানাকানি সাঙ্গ তখন
এক নিমেষে-
সবকিছু তো একইধরন....  বদলায় না শূন্যতলে--
তবু কেন ছাওয়াস না আর মনের ভেতর
সেই সে লয়ে-
ওঠানামাই ধ্রুবক কেন বলতে পারিস
তেমনি করে?