নির্মল
রায়
শেষ প্রলাপ
সন্ধ্যা নামলে, রূপোলী আগুন ঝরলে
তোমার খেলা সাঙ্গ হলে,
ঘরে ফিরে এসো।
তোমার জন্য এককাপ চা
আছে।
ভাগাভাগি করে চুমুক
দেবো।
একটু কমবেশি হলে,
বেশ কিছুটা ঝগড়া করে
নেব।
শরীরের উত্তাপটাও
ভাগাভাগি করে নেব।
তোমার খেলা শেষ হতে রাত
গভীর হলেও
ঘরে ফিরে এসো।
তোমার জন্য ভাতের থালা
নিয়ে
প্রদীপের আলোয় অপেক্ষা
করবো।
দুজনেই প্রদীপের আলোয়
মুখোমুখি বসে
খুব তাড়াতাড়ি খেয়ে নেব।
কেননা,
বিছানাতে একটা বালিশ, একটা কম্বল।
ভাগাভাগি করে নেব দুজনের
ওম!
তবু তুমি ঘরে এসো,
যদি খেলার বেলা ফুরায়
এসে ভোরে,
তোমার প্রিয় শিউলি
যদিওবা যাবে ঝরে!
আমি কুড়িয়ে রাখব আঁজলা
ভরে।
তুমি এসে,
তার প্রথম সুবাস নেবে
আমারই হাত ধরে,
তারপর!
নিশ্চয়ই ভাববে, আর ভাববে!
“আর
ফিরবো না অপ্রেমের খেলা ঘরে।”
হলুদ স্বপ্ন
আমার জন্য এতটুকুও জীবন
নয়,
ভানুসিংহের শ্যামের মত
মৃত্যু রেখে দিও।
আমি আকন্ঠ পান করে
নীলকন্ঠ হয়ে যাব।
আমার জন্য কোনও প্রণয় নয়,
ওথেলোর ঘৃণা রেখে দিও
একচিলতে।
নিজেই হলুদ দড়ির
পাকদন্ডী বেয়ে উপরে চলে যাব।
আমার জন্য ছাতিম তলার
সন্ধ্যা নয়
অন্ধকার কাঁটাঝোপের
সন্ধান থাকলে জানিও।
অপেক্ষার কাঁটায়
রক্তাক্ত হলেই জানিয়ে দেব।
আমার জন্য তোমার সৌন্দর্য
নয়,
তোমার মায়াময় মুখের
ছায়াটুকু রেখে যেও।
আমি একতাল কাদা দিয়ে
তোমাকে বানিয়ে নেব।
আমার জন্য কোনও স্মৃতি
রেখ না!
আমার কাছে মরাই ভর্তি
সোনালী স্মৃতি আছে,
গ্রীষ্মের হাতপাখা, বর্ষার ছাতা,
শরতের নীল আকাশ,
গঙ্গাফড়িঙের সবুজঘাস।
আর বসন্তের জন্য?
তোমার দেওয়া সুন্দর
হেমলক গাছের কিশলয়।
বসন্তের নতুন পাতা!
শেষ হলে, আবার হেমন্ত আসবে। ভরে নেব।
--------------*-------------
খন্ডিত
জীবনে একবারই জুড়ে ছিলাম
অনিন্দ্য আনন্দে
মাতৃজঠরে!
তারপর বারে বারে খন্ডিত
হয়েছি
নিয়তির নির্মম নীরব
কুঠারে।
মাত্র কয়েকমাস, কয়েক দিন বাদে
খন্ডিত হলাম মায়ের থেকে,
প্রথমে ক্রন্দনের শব্দ
দিয়ে
জঠর থেকে খন্ডিত হয়ে
পৃথিবীর বুকে!
নিয়তির অলঙ্ঘনীয়
নির্দেশ!
তাই ক্রন্দিত হয়ে
দ্বিখণ্ডিত,
জানি না তা কি অভিশপ্ত,
নাকি চিরস্মরণীয়
সুষমামণ্ডিত!
তারপর বারেবারে খন্ডিত
জীবন
কখনও বা বেদনার ভারে,
কখনও বা বিচ্ছেদের
অভিঘাতে
বিস্বাসহীনতার নিষ্ঠুর
হাহাকারে।
কখনও বা খন্ডিত
প্রেমহীনতার
সুচতুর কাব্য বাক্য
বিন্যাসে,
কখনও নিশ্চুপে নির্লজ্জ
খন্ডিত আবার
স্বার্থপর উদ্দাম সুখের
উপন্যাসে।
অজস্র খন্ড হয়ে লন্ডভন্ড
পথের ধুলায়
খন্ডিত শত শব যদিও এখনও
নিশ্চুপ,
একবিন্দু অশ্রু ঝরেনি
খন্ডিত চোখে
হয়নি যে শেষ দেখা নিয়তির
নিস্পাপ রূপ।
বারেবার খন্ডিত হাজারো
স্বপ্নের
রক্তস্রোতের অকাল
গর্ভপাতে,
জুড়ে গিয়েও দেখেনি সে
স্বপ্নের আলো
কোনও এক রোদ্দুর ঝলমল
প্রভাতে!
খন্ডিত লাখো বাক্যের
উচ্চকিত উপন্যাস,
দ্বিখণ্ডিত বা
ত্রিখন্ডিত উচ্ছ্বাসের সব নির্যাস,
ভেসে যায় কত শত শব
নর্দমার পাঁকে,
নিয়তি আজ নিশ্চুপে মৃত
আত্মার ছবি আঁকে।
-------------*--------------
অমিত্রাক্ষর
আমিতো অমিত্রাক্ষর রয়ে
গেছি
হয়তো বা আছি তারাদের
কাছাকাছি!
হয়তোবা আছি সাগরের নীল
জলে,
উত্তাল জীবনের সীমা ছেড়ে
বিস্তীর্ণ অঞ্চলে।
হয়তো বা আমি পথ খুঁজি
চোরাবালির বুকে
চিরকাল ঘুমোতেই চাই
সেখানেই ঢুকে!
আমিতো ঘ্রাণ নিই মৃত
স্মৃতির অঙ্গনে
যদিওবা ফুলেল স্বপ্ন
অতীতের বর্তমান প্রাংগণে!
আমিতো বকুল শিউলি খুঁজি
স্মৃতির সুবাসে
অতীতের অদৃশ্য ছোঁয়াতে
আমার বসন্ত আসে।
আমিতো সাগরের বুকে ভাসাই
সাম্পান,
সেখানেই গাংচিল, হাজারো কঙ্কালের স্থান।
###
আজ নয়, কাল নয়,
বহু যুগ পরে
কক্ষচ্যুত হতে যদি পার, এসো ফিরে ঘরে।
চেনা সুখ, চেনা দুঃখ,
চেনা সব কিছু
চেনা স্পর্শ, চেনা মুখ সবই আছে পিছু।
কভু কি হারায় অতীত? বর্তমান যদিও মধুর
বহু যুগ খুবই কাছে! নয়
তো অতীব সুদূর!
--------------------------*------------------------
পানসে পানসি
ভাঙছি এবং ভাঙছি,
গড়তে গিয়ে ভাঙতে ভাঙতে
কিছুও কি গড়ছি!
গড়ব বলে গড়তে গিয়ে
কাদাই কেবল মাখছি!
ছুটছি কেবল ছুটছি
ধরতে গিয়ে ছুটতে ছুটতে
কেবল পিছিয়ে পড়ছি!
উঠতে গিয়ে গায়ে আবার
অনেক কাদা মাখছি।
সরছি কেবল সরছি
জীবন থেকে সরতে গিয়ে
একটু করেই মরছি।
সরতে গিয়ে মরতে গিয়ে
মরণ স্মরণ করছি?
দেখছি কেবল দেখছি
বহুদুরের স্বপ্ন কুসুম
আকাশ থেকে দেখছি।
দেখতে গিয়ে আবছায়াতে
পাপড়ি হয়েই ঝরছি।
বুঝছিনা কি বুঝছি
বুঝতে গিয়ে বোঝা হয়ে
সত্যিটাকেই খুঁজছি।
খুঁজতে গিয়ে গুলিয়ে গিয়ে
সত্যি মিথ্যার সাথে
জুঝছি।
উড়ছি আমি উড়ছি
নীলের বিষে নীল হয়েই
নীলের মাঝেই ঘুরছি।
ঘুরতে গিয়ে বিষম ঘোরে
বুঁদ হয়েই যে পড়ছি!
জুঝছি কেবল জুঝছি
অসত্য আর প্রবঞ্চনায়
সত্যটাকেই খুঁজছি।
খুঁজতে গিয়ে তলিয়ে যাব
সেটাইতো আজ বুঝছি।
বাক্যগঠন সহজ বুঝি
বিন্যাস তার ভীষণ জটিল!
বণ্য মনের নাগাল পেতে
সাদা কালোয় জীবন কুটিল।
কথার হরেকরকম ফারাক
অর্থ বোঝা বিষম জ্বালা,
কখন কি যে পানসে লাগে
চিহ্ন খুঁজি সারা বেলা।