মঙ্গলবার, ২১ নভেম্বর, ২০১৭

অদিতি চক্রবর্তী




অদিতি চক্রবর্তী

পেন্সিলস্কেচ

তোর সাথে খুব ঝগড়া ছিলো
ভাবও তেমন গলায় গলায়
রাত ফুরোতেই বাত ফুরাবে
আন্দাজে কি সব ভাবা যায়!
ক্লাসের ঠিক শেষ বেঞ্চি
জানলা পাশে সবুজ বালক
আড়চোখে চায় দুই বিনুনী
একটেরে খুব? কিন্তু তা'হোক
আজকে কেবল বোবা প্রহর
জীবন মাপে নাড়ির গতিক
সর্বস্বান্ত কন্দ মূলে
তুইও তো আছিস প্রাসঙ্গিক।
দ্বিচারিতা তোর স্বভাবে
আমার ভাগে জোর ঠকাস্
সেলিব্রিটি তুই'টা খবর
নোংরা, এঁটো আমার বাস।
আবার যদি ঠুনকো দাবী
তোরই কাছে দাখিল দি,
ছিঁড়কুটিতে উড়িয়ে দিবি?
পেন্সিলস্কেচ মুছবে কি!





মঁসিয়ে

এখন বুঝি ছলনা কোথায় আছে
স্বামী এবং প্রাক্তনী দুই'ই আমার কাছে
আরো আছে অযোগ্য এক অনভিজ্ঞ লুডো
ছক্কা চালতে পুঁট ফেলে দেয় 'শিরোমণি ঠুঁটো'
নিজেই তখন পাখি হলাম দক্ষিণা বাতাসে
চমকপ্রদ উড়ান ডানায় প্রবল টিয়ার গ্যাসে
মাঠ পাল্টে বোহেমিয়ান এরিনাতে ঘোরা
ফুচকাজলে স্নান সারলেও চোখ কোনে মস্করা
আবাসনের বাসন যেমন সম্পর্কিত দাস
ঠিক তেমনি তুক করেছি তাক করতে তাস
খুব চেয়েছি তুলকালাম হোক খুদের শালপাতায়
রাত ক্রমশ পিছলে যেতেই মঁসিয়ে বদান্যতায়।






চোরাটান

ট্রেনে উঠে জানলাম,সেও নাকি নৈহাটি যাবে
এদিকে ফেরেনি একবারও
মত্ত রয়েছে এক মাসিমার তালক্ষীরে
দুধ আর ক্ষোয়ার হিসেবে।
চোখাচোখি হয়নি এখনো ভাগ্যিস্
মাফলারে কান থেকে মুখ প্রায় ঢেকে
খবর কাগজ খুলে শুনতে থাকি,
নাগাড়ে যা বলে চলে বাক্যবাগীশ।
মুখ তার যতখানি বলে যায়
দুল দুটি তারও বেশী সায় দেয় কথায় কথায়।
ভাবখানি যেন, ঘরে গিয়ে শাড়ি ছেড়ে
আরো কিছু ফরমাস পাবার আগেই
তালক্ষীর বানিয়ে সে তাক লাগাবেই
শুধু তার পরিবার কেন?
প্রতিবেশী সুজনের প্রৌঢ়া মা'কেও
বিলকুল হেরে গেছি সুজনের কাছে মানলাম এও
নেমে যাবো আগের স্টেশন।
জানবেনা কোনোদিন এতোখানি চোরাটান
জিতে যাবো এক স্টেশনের গোত্রহীন অসহ্য পরিত্রাণ।






ব্রেকআপ

শহর জুড়ে প্রেম ভেঙে যায় রোজ
স্মৃতিকাতর চোখ ছোঁয় ব্যলকনি
উপেক্ষারা মুখশুদ্ধির কৌটো
ভাষায় বৃথাই অঙ্গীকারের ধ্বনি।
ফুটব্রীজে কার ছায়া সরে যায় যেন!
মায়াবী হলুদ হ্যালোজেন মাখামাখি
কি নাম! কি নাম! সতেরোটা মুখ ভাসে
ডাল থেকে ডালে খেলেছে কতই পাখি।
নৌকা ভিড়িয়ে সেজেছে যখনই জেটি
ঠিক তক্ষুনি নদীতে ঢেউ এর ফণা
ডুকরে কেঁদেছে গভীর নিন্মচাপ
আলাপী নদীকে সাগরও চিনলোনা!
সরাইখানার শিলান্যাস শুনেছ কি?
এসক্যালেটরে মাটিমাখা দুটি পা?
মানুষ জন্ম সুলভ কবিতা খেলা
কসরতে তাতে ছন্দ তো মেলেনা।
এই শহরে প্রেম ভাঙে তাই রোজ
কেননা কবিকে ব্রাত্য করেছে সময়
অবসরে আছে বই এর কুমারী মলাট
আবেশিত দিন টাল খায় ঘরময়।






মাঙ্গলিক
****************
ওই বাড়িতে কাঁপা শ্বাস ফেলে সাদা সিঁথির দল
ওই বাড়ির নামটা মাঙ্গলিক
সঠিক সত্যি কেউ জানেনা পরখ চায়না বলে
ভেঙে গেলে আহত মনের ভিত
ও বাড়ির চৌকাঠে আটকায় শীত।
শোনা যায় ফিসফাসে ভাগ্যের গণ পরিহাস
দেখা হোক, ফিরে দেখা হোক--
তৃতীয় প্রহর শেষে ঘুমোবার ছলে এপাশ ওপাশ।
ওই বাড়ি মনখারাপের
শিকের গরাদ আর ঠনঠনে শুকনো উঠান
বাউরি বাতাস এসে এলো করে ঘোর লাগা দীর্ঘপ্রহর
আফসোস,শুধু আফসোস,বিবশ মথের মতো পড়ে থাকে ঘটমান।
যাকে আর্গল খুলে খুব কাছে টেনে নেওয়া ছিলো
ঈষৎ কোঁকড়া মোটা চুল ব্যাকব্রাশ
সময় অকালে তার আয়ুটুকু নিয়ে, একরাশ পরমায়ু সিঁথিতে রাঙালো।
মা, দিদা,ফুলিমাসি, রাঙাদিদি, মিতা
সাদা সাদা ফুলদল লিখছে কবিতা।
অথচ পাঁচিলের ওপাশের গল্পটি আলাদা রকম
বাগানের ঘাসগুলি মখমলি,ছোট করে ছাঁটা
হলদে ডানার প্রজাপতি বাণির্জ্য বাতাসে বেশ আঁটা।
এবাড়ির চিলেকোঠা ওবাড়ির কার্নিসে হাঁটে

যদি অতীত বৃষ্টিদিন ভিজিয়ে বিলীন করে গাঢ়তম ছাঁটে।