শ্যামশ্রী
রায় কর্মকার
কে বলে নগণ্য তুমি?
প্রতিটি নগণ্য জুড়ে
ব্রহ্ম ও বিরাট।
ভাবনা প্রগাঢ় হোক,
সুখ ও দুঃখ দোলাচল জীবন
বিভ্রাট-
মুছে যাক এইসব,
মুহুর্তের লেনদেন গণ্ডী
বেঁধে থাকা-
কিছুই অমৃত নয়...
তবুও যে কি অমৃতময় এই
বেঁচে থাকা...
তুমিই আকাশ বায়ু শব্দ আর
শব্দহীনতা
নিরন্তর জলধারা জায়মানা
জীবনের কথা
মৃত্যুর ফাঁস খুলে
উঠে এস, অনাবিল আলোময় ভূমি-
নিরুক্ত থেকোনা আর...
অগ্নি হও অগ্নি হও অগ্নি
হও তুমি।
ওঁ মধুবাতা ঋতায়তে
ওই দেখো উড়ে যায় কেউ
সীমানা ছাড়িয়ে যায়
বিষণ্ণ মেঘেদের দিনে
হে বীজবাহক, তুমি তৃপ্তির মন্ত্র বলো
অনন্ত নদীর জলে বসে
ওঁ মধুবাতা ঋতায়তে...
তৃপ্ত হোক দেশকাল তৃপ্ত
হোক সমাজসংসার
অনন্ত উড়ান দেখো ওই দাগ
রেখে যায়
ধোঁওয়ার কুণ্ডলী বাসনা
পুড়িয়ে দিল আগুনের স্রোতে
এত যে উজ্জ্বল শিখা দেখি
আজ নদীর এপারে
ওরাও মায়ার মতো,একদিন সব নিভে যাবে
যেসব স্মৃতির কণা পড়ে
আছে পালকের ভারে
তারাই বাঁচিয়ে রাখে ফেলে
যাওয়া আলো
ওদের দুহাতে ধরো, সেইসব ক্ষণস্থায়ীতা
চমৎকার মায়াময় হয়ে থাক
নক্ষত্রের মতো।
ছায়াযাত্রী
বিরাট গাছের নীচে
নির্ভার খড়ি ওঠা লোক
গাছের বিষণ্ণতা ওর গায়ে
ঝরে পড়ে গেল
গাছের পিছনদিকে ইঁটাকার
একখানা বাড়ি
অদ্ভুত ঘোর লাগে,বাড়িখানা ভেসে চলে যায়
নির্জন জ্যোৎস্নায় খাঁ
খাঁ করা যুবতীভ রাতে
বাতাসে ডিঙার মত হলুদ এক কৃকলাস
চমকে থমকে থাকে
চঞ্চল ঘাসে
এমনই শূন্যদিনে হু হু
করে উড়ে যায় ছায়াটে মানুষ
বাদামি বিরাট ডালে দোল
খায় একগাছা দেহ
গলায় কণ্ঠী,তার কপালে তিলক
দেহের পায়ের কাছে কারা
সব মাথা কুটে মরে
ভয় হয়,এই বুঝি মুক্তির ডাল খসে যাবে
ব্যথাহীন দেহ থেকে খসে
যাবে স্বর্গের ডানা
এমন এক অযাচিত উছলানো
ভালোবাসা দেখে
হে আহুত, ভাবছ কি ফেরবার কথা?
তোমার শোনার নয়
আমি কি বলেছি বলো বিরহ
বিষাদ মোহময়!
এসব কি বলে কেউ!
এইসব গর্ভ যন্ত্রণা
শব্দ প্রসব করে, যে শব্দ আর কারও নয়...
আমি কি চেয়েছি কিছু
মায়াযান অলীক সংলাপ?
কতবার বুঝিয়েছি কাছে
দূরে নয় কিছু নয়,
রোদরাগ মরে এলে একটি
শ্বাসের দাগও বুঝে নিতে হয়
সবইতো হারিয়ে যাবে
আঙুলের ফাঁকে
কাকভোর জ্যোৎস্নারা
জেটিঘাট ঘাসের উঠান
তোমার চুলের বনে ছড়িয়ে
ছিটিয়ে থাকা হৃদয়ের দাগ
বুকের ভিতর থেকে হু হু
করে ডাক দেয় জলডাকা পাখি
তোমার শোনার নয়
তোমার শোনার নয় সেইসব
কথা।
একবার দুহাত বাড়াও
একবার দুহাত বাড়াও,
হিমের বিছানা থেকে এই
শেষবার উঠে এস,
একটু পরেই এসে ছুঁয়ে
যাবে আগুনের শীষ,
আর শুধু একবার দুই চোখ
দিয়ে ছুঁয়ে দেখি,
আর শুধু একবার ডাকি নাম
ধরে,
আর শুধু একবার খুলে দাও
দৃঢ়বদ্ধ মুঠি,
ওই হাতে দুটো হাত রাখি।
দরজায় ভর দিয়ে দাঁড়িয়েছে
বিষণ্ণ সময়,
চৌকাঠ দিয়ে আজ অবিরাম
শুধু যাওয়া আসা,
অজস্র পদক্ষেপ আর কিছু
ধুলো পড়ে আছে,
তোমার পায়ের ছাপ আঁকা
শুধু কাগজের গায়ে।
অগ্নি হও হে মানুষ