তমোঘ্ন চট্টোপাধ্যায়
কবিতা উৎসব
নন্দন চত্বরে তখন সন্ধ্যে নেমে এসেছে
চারিদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আলোকিত,
কবিতার আত্মীয়স্বজন
শিশির মঞ্চ ততক্ষণে ভিজে গেছে
হাজার-হাজার কবিতার শিশির বিন্দুতে।
কিন্তু কবিতা কোথায়?
যেন সব্বাইকে নেমন্তন্ন ক'রে নিজেরা
আসতে ভুলে গেছে বর-বউ
হঠাৎ দেখি আঁতেল ভিড়কে নিতান্ত বেপাত্তা
ক'রে নিরালা দ্বীপ বানিয়েছে তিনটে
ধুলোমাখা
শিশু
খিলখিল ক'রে হাসছে; গড়াগড়ি খাচ্ছে
যা-ইচ্ছে তাই করছে...
ওদের হাত ধরে নন্দনে নেমে এল
দায়হীন,রঙহীন, প্রত্যাশাহীন সহজ-সরল
কবিতার পুরুষ আর নারী
সিগারেট দিয়ে মূর্খামির মুখাগ্নি
করলাম আমি
মরসুমি খবর
শীতের খবরে এ-শহর আরও উষ্ণ হয়ে ওঠে
গরম কফি এবং তুমি লেগে থাক ফাটা
ঠোঁটে
আমি ভীষণ শীতকাতুরে;আদুরে আগুন তুমি
কিছু অনুভূতি ফুলের মতো,বরাবরই মরসুমি
এমনি তুমি দোলনচাঁপা; কেলেণ্ডুলা
শীতে
বব ডিলান না, তোমায় মানায় রবীন্দ্রসংগীতে
কৃষ্ণকলি, আমার জন্য যত্নে বোনো
উল
তুমিই বলো, এ-শীতকে কি বসন্ত বলা
ভুল
ভুল তো আমার হতেই পারে, শুধরে দিও
তুমি
সুখী হতে কে আর না চায়; সুখ-ই তো
মরসুমি।
শব্দহীন
দু'দিন ধরে সারা মন তোলপাড় করে
খুঁজেছি। সবক'টা তাক, আলমারি
তোশকের তলা - তন্নতন্ন করে খুঁজেছি।
পাইনি। কিচ্ছু পাইনি।
আমার ঘরে একটা শব্দও নেই...
সজ্ঞানে নিজেকে দেউলিয়া ঘোষণা করছি।
আত্মসমর্পণও বলা যেতে পারে একে।
কিন্তু এটাই সত্যি, আপাতত, আমি অক্ষম।
আপনারা, দয়া করে, কয়েকটা শব্দ
ধার দিন আমাকে,যা নিয়ে সান্ত্বনার
হবিষ্যি
তুলে দিতে পারি সন্তান হারানো মা'র
হাতে;
অথবা সেই স্ত্রীর হাতে, যার ভালোবাসা
সতীর দেহের মতো ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়ে
আছে
হিংসার মৃত্যুপীঠে...
নইলে আমি মুখ দেখাব কেমন করে!
আচ্ছা,ওরা যদি বলে হত্যাকারীর মৃত্যু
না-হলে
শেষ হবে না কালাশৌচ;নিয়মভঙ্গ হবে
না;
হবে না মৎসমুখ
আমি কী করব?
যদি আমার মনে পড়ে যায় নৃশংস
হত্যাকারীর অসহায় মা'র মুখ?
ওরা যদি বলে প্রতিশোধ চাই - হত্যা
করো;
খুনের বদলে খুন
আগুন দিয়ে নেভানো যায় আগুন?
ভিক্ষা চাইছি;
আমাকে কিছু শব্দ দান করুন।