শনিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০১৯

উজান উপাধ্যায়


উজান উপাধ্যায়

ক্ষমা জল

জলের ভিতরে শুয়ে আছি, প্রথম কবে নেমেছি এখানে হরবোলা জানে। কত বিচিত্র কন্ঠে তার একতারা বাজে-সুরের যে এত রঙ-

 জলের ভিতরে নড়ে ওঠা শৈশবের চুপিচুপি লিখে ফেলা হিমলগ্ন ছায়া তার ভাষ্যকার হয়। এর আগে জানাও তো সম্ভব নয়-আমার শরীর থেকে মলাটের মতো একে একে যত্ন করে গড়ে রাখা পৃষ্ঠার অন্তর্কথন খুলে যায়।

এই ভোরে সবচেয়ে প্রিয় যন্ত্রণা ধুয়ে ফেলে আগুনের রাগ, আবার বৃষ্টি এলো বলে কাল সারারাত খানখান করে তছনছ করে গুঁড়োগুঁড়ো করে আমাকে হত্যা করে ফেলে এসছে জন্মমোহনায়- বলেছে নতুন করে মিথ্যের শঠতার, হিংসে ধ্বংস আর জড়তার শ্লোক শিখে সাপলুডো ছক শিখে কামুক শিকারী হয়ে এসো-

এই জলে তাদের জন্য ক্ষমা মিলিয়ে দিলাম।

ঘুম থেকে উঠে ওরাও ভাবুক-

এ নেহাতই আরও এক অকাল বৃষ্টির কোমল সকাল-

ওদের অপাপবিদ্ধ করে গড়ুন, ওহে মহাকাল।

আমি একা ডুবে ডুবে প্রার্থনা করি, ভালোবাসা ওদের বাঁচাক- পাখিদের যা করার এখনই করুক, নদী মাটি আকাশ জঙ্গল-

মঙ্গল মঙ্গল মঙ্গল-

পৃথিবীর সবচেয়ে শুভাকাঙ্খী গ্রহ সেই হোক।






বোধিসত্ত্বের অবাধ্য বোধ

কাল ঠিক এমন সময়ে উৎসবের তাপমাত্রা অনেকটাই আলাদা হয়ে ছিলো, এমনকি বৃষ্টির ভাবসাব স্পষ্ট ছিলোনা।
আজ ঠিক একই সময়ে গাছের পাতায় ফোঁটা ফোঁটা বিষাদ লেগেছে  বলে জলবায়ু উৎসবান্তে বন্ধ চোখে বুঝে নেয় দগ্ধ কুয়াশা।

মুখোমুখি হয়ে গেলে দূরন্ত দিন আর আলসে ছুটির মেঘ, মানুষের অসহায় উল্লাসে আশঙ্কিত ক্ষয় বেপরোয়া পুড়ে চলে তিমির বিলাসে।

তবুও আলোকিত বৃত্তদের পরিধিতে আমাদের স্বস্তি অন্বেষণ, আমাদের মুক্ত সুখ আমাদের ভ্রষ্ট স্বরে ভাসে।







সীমানা পেরিয়ে

প্রেমিকারা কতটা গভীর
নদীরা জানেনা।

পৃথিবীর ওষ্ঠভাঁজে কতটা নীলাভ বিষ
আকাশের শব্দকোষে লেখা নেই সেই উৎসমুখ।

লিখে রাখা ভিজে খামে
আমাদের যৌথ জেগে থাকা।

রাত্রির বুক থেকে আদুরে মেঘের খেয়া,
মাঝিও শরীরে মাখে বেআব্রু জল --

কতটা গভীর হলে নারী
শোনা যায় শব্দহীন প্রবহমানতা।

অশান্ত স্রোতের পেটে প্রান্তিক সুখ,
অতৃপ্ত দেবতার মতো সঙ্গমে নেমে আসে
অশালীন আলো, আলোর তো বস্তু নেই,
তবুও শরীর তার - সেখানে যে খাদ তত্ত্ব
গোটা হিমালয় তাতে গলে যায়
-আলোর গর্ভে বাস,
শব্দের শূন্যজ ঘ্রাণ --

ঘুমিয়ে গেলেই শবদেহ হয়ে পড়ে দৈবী আলোর স্তূপ -
লীন হয় দেহজ পানীয়।

এত আবছায়া যদি আসে রহস্যময় রাতে,
তবুও ঝড়ের মতো ভেঙে পড়ে নৌকাজন্ম, মাটির স্তন্যে-
ভেতরে যে গাছ মৃত্যুর কাছাকাছি -
তারই উন্মত্ত ইশারায়
গোপন অশ্রু তোমাকে  সাহসী করে, বেপরোয়া করে।

ভালোবাসা উচ্চারিত হলে
তবেই তো জলে ভাসে কাঁপতে থাকা আলোরস,
তবেই তো ছুঁয়ে ফেলা হৃদয়ে হৃদয়।

নদী ও হাওয়ায় চড়ে, নারীকে নাব্য করে-

পুরুষের ঘুমন্ত কাঁধে পরিযায়ী পাখি
দেশান্তরের বাস্তুভিটা এঁটো করে দেয়
মায়াবী সৌষ্ঠবে।

পেশি ও শিরায় কিভাবে বয়েছে স্নেহ ,
রতিক্রিয়া শেষ হলে
জোনাকির মৃতদেহে চাঁদের অনুকম্পা
পরিমাণ বুঝে তবেই বেঘোরে মরে।

নক্ষত্রের বুকের ভিতরে
অপার্থিব বিছানা পেতেছে শিলালিপি।

নারীরা গভীর বলে
সব মেঘে বৃষ্টি আসে না।

উপযুক্ত স্পর্শ পেলে কান্না গড়ায় হিমবাহে
প্রেমিকা প্রেমিক ভোরের চুম্বন পেতে
ক্রমাগত সবুজ হয়ে যায়।