শনিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০১৯

তন্ময় ধর


তন্ময় ধর

পাথর ১

স্খলিত ঈশ্বরের শরীরে আরো একটু মাংস দিলেন অগুস্তে রেনোয়া। আয়নার ভিতরে নীচু হয়ে বসল তোমার রক্তের গন্ধ। শাদা একটি সাপের চোখ থেকে অভিনয়দৃশ্য সরতে লাগল। ততক্ষণে আঙুলের হাড়ে কাঁটা বিঁধে গিয়েছে। তার অনেক নীচে উপকথার জন্মান্ধ এক গাছ আবার পূর্ণতার গল্প বলছে। পাতা চিরে রোদ পড়ছে তোমার কপালে।

কপালের বিন্দু বিন্দু ঘাম থেকে একটা রঙ সরে যাচ্ছে স্মৃতিহীনতার দিকে। রেনোয়ার অসাড় আঙুল থেকে চমকে উঠছে রেইনডিয়ার মানুষের রক্তাক্ত হাত। ক্রিস্টা থেরেটের আপেল আস্তে আস্তে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সময়ের পাশে তুমি উজ্জ্বল ছুরি রেখে দিচ্ছো। দর্শকের পাশ থেকে উড়ে যাচ্ছে শাদা মথ।

হত্যার পরিকল্পনা থেকে তুমি অনেকটা সরে এসেছো । সতীর ঠোঁট থেকে অদ্ভুত কমলা একটা রঙ টেনে এনে তোমার কন্ঠনালীতে রেখেছেন নন্দলাল বসু। দেহখন্ডগুলো নিয়ে বোবা এক প্রেমকাহিনী লিখছো তুমি। মাংসের ভেতরে আমাকে একা দাঁড় করিয়ে রেখেছেন প্রত্নতাত্ত্বিক।








পাথর ২

আমার দেহতত্ত্বে ক্রমশ হালকা হচ্ছে গগনেন্দ্রনাথের নীল রঙ। বারবার আমাকে ছুঁয়ে ফেলছে তোমার মৃত্যুর বুদবুদ। বহু বহু আলোকবর্ষ দূরে দু’টি তীব্র ছায়াপথে দু’টি ক্ষীণ নক্ষত্র খসে পড়ছে। অদৃশ্য এক বর্শাফলকের শব্দ আস্তে আস্তে ফুটো করে দিচ্ছে আমার অন্ধকার।

অন্ধকারের অনেক নীচে বাতাসের অভাবে ছটফট করছে আদিম প্রাণীর পায়ের শব্দ। তোমার ঘুমন্ত নখের সামনে চুপচাপ এসে দাঁড়িয়েছেন রামকিঙ্কর। রাধারাণীর বুকে ভারী হচ্ছে আলো। তোমার স্বপ্নের ভেতর রক্ত চেটে তোমারই মৃত্যুগুহায় ফিরে যাচ্ছে সাপ।

সাপের শেষাংশ থেকে অদৃশ্য এক সুখ ঘুমিয়ে পড়ছে জীবনে। উরু থেকেই মাংস নিয়ে যাচ্ছেন এক অদৃশ্য জাদুকর। জাদু শুরু হচ্ছে দেহের আয়না ও আলোয়।







পাথর ৩

শাদা রঙের ভেতর হলুদ এক আলো খুঁজছেন ভিনসেন্ট ভ্যান গঘ। জলের ভিতরে নড়াচড়া করছে শীতঘুম ও নিকোলাস রোয়েরিখের চোখ। শীতল খাদ্যের সামনে তুমি ও আমি দ্বিধাগ্রস্ত। জলস্তর থেকে হু-হু করে নেমে যাচ্ছে আমাদের স্মৃতি ও বিস্তৃতি।

তোমার জিভ ও জন্মরহস্যের ছবি আঁকছেন অন্ধ বিনোদবিহারী। স্মৃতিহীনতার নীচে মাংস জমা হচ্ছে। রক্তের গন্ধে বারবার সতর্ক হয়ে উঠছে শ্বাপদের দল।

এসবের ভেতরেই ঘুম আসছে। আর ঘুমের ভেতর থেকে তীব্র তুলাপিঞ্জি ধানের গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে আমাদের অভিনয়ে।