শনিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০১৯

অনির্বাণ চৌধূরী


অনির্বাণ চৌধূরী

সময় সন্ধানে

কিছু কবিতায় আমি; পড়িয়েছি হাতকড়া
কিছু কবিতা; ক্ষুরধার তরবারি
কিছু কবিতায় আমি; আমাকে দিয়েছি ধরা
এবার ‘সময়’ লেখাটা ভীষণ’ই; দরকারি ।

সময় মানে তো; জীবনের খতিয়ান
যুদ্ধে নিহত; স্বপ্নেরা ধরাতলে
দুই ক্ষত্রিয় ... মহীয়সী, মহীয়ান
দুজনাই বেঁচে সময়ের জাঁতাকলে ।

টুকরো সময়ে, দুজনেরই ভাগ চাই
দুজনেরই চাই দখলের অধিকার
সময়ে সময়ে, গৃহযুদ্ধ লেখা তাই
সময় মানে এক ভয়ানক কারাগার ।

এ কারাগারে আমি; এই তো ঢুকেছি সবে
তুমি সমঝোতা; দিলখোলা বাতায়ন
সময় ঘেরা; ঐ পরিখা পেরুতে হবে
আজ হৃদয়ের লাফ; দেওয়া বড় প্রয়োজন ।

সময় পেরিয়ে; চলে যেতে হবে দূরে
ছিঁড়ে পড়ে থাক; কবিতায় ভরা খাতা
কয়েদি কোনো প্রেমিক গাইবে সুরে
পরাজিত প্রেম; ট্রা-লা যুদ্ধে কচুকাটা ।

তুমি যুদ্ধে জিতেছো; প্রেমের’ই অভাবে
যদুবংশ ছিলো; ভগবানেরও অজানা
টিকে থাকাটাও যেন; যুদ্ধ নানাভাবে
সময়টা কেবল; জিতে যাওয়া সুলতানা ।

হে সময়; তুমি ঠিক কোথায় রয়েছো থেমে ?
খুঁজে চলেছি তোমাকে এ হারেম ও হারেমে ।।









ভালবাসা মানে

ভালবাসা মানে,
মুক্তো খুঁজে, তোমায় পরিয়ে দেওয়া দুল
ভালবাসা মানে,
কোলে মাথা গুঁজে, স্বীকার করা ভুল।

ভালবাসা মানে,
তোমার জিনে চিরদিন আলাদীন
ভালবাসা মানে,
ফুলে বেলুনে, চমক্ জন্মদিন।


ভালবাসা মানে,
ঘুম কি জানে? কেন অনলাইন মিছে?
ভালবাসা মানে,
ব্যাগের খোপেতে অ্যালপ্রাজোলাম আছে।


ভালবাসা মানে,
টুবু-টুবু মন টুবাইয়ের সাথে চিয়ার্স
ভালবাসা মানে,
কাকুর শাসন, লড়াকু চোখে’তে টিয়ার্স।


ভালবাসা মানে,
প্রথম দেখা, “মন নেই কোন কাজে”
ভালবাসা মানে,
চিলেকোঠা জানে, এ’ছাদে ও’ছাদে সাঁঝে।


ভালবাসা মানে,
সকলের মাঝে ... কানে কানে বলা : "অ্যাই !"
ভালোবাসা মানে,
আড়ালে গোপনে, ঠোঁটে রাখা টিপ সই !


ভালবাসা মানে ...
দুরাত কেঁদে অভিযোগ অভিযোজন
ভালবাসা মানে,
আড়মোড়া ভেঙে, ভোরের মেসেজে মন।


ভালবাসা মানে,
“সখী নিভৃত যতনে আমার নামটি নিও”
ভালবাসা মানে,
“দিও-গো আমারে, চরণ ধরিতে দিও”।


ভালবাসা মানে,
অ্যাকচুয়েলি ভার্চুয়্যাল অভিমান
ভালবাসা মানে,
বুকের বাঁ’য়েতে, জ্বলছে অনির্বাণ।।







প্রিয়তমাসু

প্রিয়তমা, তুমি জানো?
আজো এই দেশের অফিসগুলিকে,
এক একটা টর্চার সেল মনে হয়,
ছেলেবেলার এন-সি-সি’র ক্যাম্প মনে হয়;
সুপ্রভাতি প্রতিটি কায়দায়, হায়নার পাশবিক হাসি আর—
আর পাশের বড় টেবিলওয়ালা ঘরটা’য়
ধর্ষকের চিৎকার শুনতে পাই;
লজ্জায় আমার মাথা নিচু হয়ে যায়।



প্রিয়তমা, তুমি জানো?
ঠিক বেঁচে থাকার জন্য নয়’গো!
পাড়া প্রতিবেশীদের গর্বে ভেসে থাকার জন্য
হাতে খড়ি হয়েছিলো আমার মাঘী শুক্লা পঞ্চমী’তে;
তুলে দেওয়া হয়েছিলো বেয়নেটের ডগায়,
ওরা নির্মমভাবে হত্যা করেছে আমার শীতের সকাল
ক্ষত বিক্ষত করেছে গরম লেপের তলে রাখা কলম
ইচ্ছে মৃত্যুর পরেও শান্তিতে ঘুমোতে দেয়নি—
লিখে রাখা কবিতাগুলোকে।
স্বাধীনতার এত বছর পরেও, ওদের বিষাক্ত নিঃশ্বাসে,
আজও কি শীত-বর্ষা-বসন্তরা আসে?



প্রিয়তমা, তুমি চলে এসো, আমার কফিনে
অনির্বাণ হ’য়ে জ্বলে থেকো, গলে পড়া মোমে
প্রিয়তমা তুমি চলে এসো রোদের মিছিলে
কবিতা শ্লোগানে গানে অফিস অঞ্চলে
প্রিয়তমা, তুমি হেঁটে আসো লাল আঁচলে
দলীয় পতাকা হবে, অফিস দখলে।
প্রিয়তমা তুমি চলে এসো বৃষ্টি বাদলে
শান্তি শুকিয়ে নেব, মাথা রেখে কোলে।



প্রিয়তমা, তুমি এসো, লাল শাড়ি পরে
উন্মুক্ত পিঠের পোস্টারে লিখে দেব—
অফিসে ন্যূনতম একটা কবিতা লেখার অধিকার চাই।
টেবিলে টেবিলে বই’দের জন্য তাক্ চাই।
সকালে নিয়ম করে কবিতা পাঠ চাই।
আর অফিসে আমার প্রিয়তমা চাই।



তুমি বিশ্বাস করো প্রিয়তমা —
জরায়ুতে ঘুমিয়ে থাকা আমাদের সন্তান
স্বপ্নের চোখ দিয়ে জানবে, আমরা আপোস করিনি।
তার জন্য মালিক মুক্ত এক অফিস গড়তে,
রাস্তায় নেমে এসেছি।



অপেক্ষা করো প্রিয়তমা,
মাস শেষ হলে পড়ে,
বুক পকেটে কবিতার বই নিয়ে যাবো
প্রতি মাসে চার-ফর্মা।
দরজা খুলেই জড়িয়ে ধরবে তুমি
জামার বুকটায় খামছে ধরবে
ছিঁড়ে পড়ে যাবে বোতাম।
চোখ দুটোতে গোল পাকিয়ে বলবে—
— ওম্মা ! খোকার টিউশন ‘ফিজ্’য়ে’ ইস্কুল,
একটা কবিতা চেয়েছে গো! আর তুমি তো গোটা !
করতলে ঠোঁট ঢেকে দিয়ে কথা কেড়ে নেব আমি; বলব:
— আমার সোনা’টা!



দু’বাহুর আঁকশিতে আঁকড়ে আমায়, গ্রীবা তুলবে উন্মুখ,
আর ঠোঁট ফুলিয়ে ঢঙ দেখিয়ে বলবে
—- চাকরীটা ছেডো’না কখনও প্রিয়!



তখনও খামছে আছো জামাটা,
বুকের কাছে, যেখানে কবিতা।


ইতি ......
নীরবতা।