হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়
চেনা নামে
চেনার মতো চেনা গলায় ডেকে উঠতো
নাম
সবাই চিনতো, আসলে চেনা যেত
মাঝরাতে যখন বাড়িটা গান গেয়ে উঠতো
তখন আরও স্পষ্ট হয়ে উঠতো চেহারা
চৌকাঠের আলোয় পড়া যেত বংশ পরিচয়
ভোরের গান চিনে চিনে আসা যেত অনেকটা
পথ
সুরের গায়ে নাম লেখা ছিল হাজার জনপদ
এখন সে চৌকাঠের কোমর গেছে ভেঙে
জানলা দরজায় কোনো গল্প নেই
চেনা মুখ কোন ভোরে ছেড়ে গেছে জামা
চেনা নামে আজ আর বেঁচে নেই কেউ
চেনা চেনা সব ইতিহাস চেনা পথে চলে
গেছে দূরে।
আগুনপাতা
ফুলের হাত ধরে ছড়িয়ে গাছ
পৃথিবীর একটা বিশেষ কোণ
জানলা দিয়ে চোখ রাখলে
একটা পুরোনো খোলা বই
পাতায় পাতায় অক্ষরগুলো
গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে ঝরে পড়ছে
রাস্তার ধুলোয় ধূসর পাতা
সবুজ উঠে গেছে কোন কালে
অপর পাতায় তখন যুদ্ধের আয়োজন
মাঝ দুপুরে জড়ো হচ্ছে ক্ষোভ
মালিকের দৃষ্টির বাইরে
এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেলা জল
অসহ্য আবহাওয়ায় জমছে ধুলো
আর জাগবে না জেনে শেষ পেরেকর জন্যে
হাতুড়ির তাল ঠিক করে নেয়
একটা হাওয়ার ঝাপটা ----- উল্টে
যাবে আগুনপাতা ।
বৃষ্টিগান
অনেকক্ষণ ধরে রাস্তাটা খালি ছিল
হঠাৎ করে খালি হয়ে যাওয়া নয়
কারও আসার খবর যেমন আগাম জানা যায়
এই রাস্তার চারপাশের মানুষজনও জানত
সবাইকে জানিয়েই তাই বৃষ্টি এল
যতজন বৃষ্টি আসার খবর জানত
তার অর্ধেকেরও অনেক বেশি মানুষ
বৃষ্টিকে ঠিক ঠিকভাবে চিনত না
যারা চিনত একমাত্র তারাই জানত
এই বৃষ্টি অনেক অনেক দিন আগেকার
ফেলে
আসা বৃষ্টি
তাই বৃষ্টিপথে আজ যারা হেঁটে হেঁটে
আসছিল
তাদের দেখে মনে হচ্ছিল বৃষ্টিজলেই
যেন ডুবে আছে
অথচ বৃষ্টিপথের দুধারে যারা দাঁড়িয়েছিল
যাদের বৃষ্টিগানে গলা মেলানোর কথা
তারা বৃষ্টিফোঁটা কি পরিমাণ বাড়ির
বারান্দা ভেজাচ্ছিল
তার পরিমাপ নিয়ে খুব ব্যস্ত ছিল
অনেকক্ষণ ধরে তারা বৃষ্টিপথে হেঁটে
গেল
কিন্তু কারও ডাকে তাদেরকে কোথাও
থামতে হল না
আগেকার বৃষ্টি তো, চোখে চোখ রাখা
স্বভাব
তাই মাটি ভিজে থাকত অনেককাল ধরে
সেখানে বৃষ্টিগান রোজ ভিজে যেত নিয়ম
করে
আজও বৃষ্টি আছে কিন্তু তার কোনো
গান নেই