শনিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০১৯

কাকলী মুখার্জী


কাকলী মুখার্জী

ছায়া

ছায়াটা ছিলো অনেকদিন ধরে,
ছায়াটা বড়ো হচ্ছে ধীরে ধীরে,
আস্তে আস্তে গ্রাস করে ফেলছে!
গিলে নিচ্ছে সবকিছুই....
স্নেহ, মায়া, মমতা, ভালোবাসা আর বিশ্বাস!!

একটা ছায়ার কতো ক্ষমতা!!
শেষ করছে একটা মানুষকে!!
শেষ করছে একটা তাজা জীবন,
শুধু কি একটা মানুষ!!
তার সাথে জড়িয়ে থাকা
সেই কাছের আপন জনেরা??
শেষ হয়ে যাচ্ছে তো তারাও।

ছায়াটার তবু ক্ষিধে মিটছে না,
এ যে সেই অমোঘ করাল ছায়া!
মৃত্যু বড়ো কঠিন বন্ধু...
আর সেই মৃত্যুর কালো ছায়া!
সে যে তার চেয়েও বুঝি ভয়ানক।

আচ্ছা মৃত্যু কি শুধু মানুষের হয়?
আর সেই মৃত্যুগুলোও কি কম সাংঘাতিক?
সেই সুন্দর সম্পর্কের মৃত্যুগুলো!!!
শেষ করে দেয় 'সবুজ' মানুষকে,
করে দেয় ওই চিতায় শোয়ানো শবদেহ।।

           




ওরা আসে

রাত নামলো,থেমে গেল সারাদিনের ব্যস্ততা!
কত কোলাহল, কতো কাজ, হয়তো অকাজও!!
তবু ব্যস্ততা ভালো, ভুলে থাকা যায় সব,
আর এখন এই গভীর রাতে শুধু.....
শুধু স্মৃতিগুলো ভিড় করে মনের মাঝে!
অন্ধকারের বুক চিরে পেঁচার কর্কশ ডাক!
গাছেদের কেমন ঝিম ধরানো খসখস!!
রাত গভীর হচ্ছে যে,
ভারী হচ্ছে দু চোখের পাতা,
তবু ঘুম নেই কেন চোখে!
এতো মুখ কেন ভিড় করে আসে মনে!!
ওরা আসতেই থাকে,একে একে, সারে সারে!!!
পরিচিত বেশী কিন্তু 'অপরিচিত'ও কম নয়,
পালাতে ইচ্ছে করে, ওরা পিছু ছাড়েনা...

ধীরে ধীরে ঘুম নামে,  'চোখে'!
পাখি ডাকে, রাত ভোর হয়,
ওরা চলে গেছে, ওদের সবটুকু নিয়ে...
অপেক্ষা চলে আগামী রাতের!
ওদের চাই যে, ওরা চলে গেলে তো চলবে না.......

                        






যেতে দেব না

তুমি রাতেই এসেছিলে,
আমি আলো জ্বালাতে চাইলাম,
তুমি বললে, 'থাক,
আমার আঁধার ভালো,'
তখন চারিদিকে শিশির পড়ার শব্দ,
বাতাসে হেমন্তের রাতের গন্ধ!
তুমি চাইলে মুখের দিকে,
চোখের মধ্যে কি বিদ্যুৎ ছিল কে জানে!!
আমি যেন মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে গেলাম!
তুমি ধরলে আমার হাত,
আমি তখন....তখন মৃতপ্রায়!!!
মাথায় হাত দিয়ে বললে,
'ঘুমাও, পৃথিবী ঘুমাক,'
আমি বললাম, 'ঘুমালে জাগাবে কে!!'
তুমি বললে, 'আমি তো রইলাম পাহারায়!'

এখন হাওয়াতে ভোরের নতুন সূর্যের ঘ্রাণ!
তুমি বললে, 'রাত ফুরালো, বিদায় নেব....'








পড়ে ফিরছিল ছেলেটা

পড়ে ফিরছিল ছেলেটা,
মাধ্যমিক দেবে সে এবার,
পিঠে ব্যাগ হাতে ভুট্টা, নুন লেবু মাখানো
খিদে পেয়েছে যে, বাড়ি যেতে
হাঁটতে হবে এখন অনেকটা পথ!
পড়ে ফিরছিল ছেলেটা।

রাত নটা হবে তখন,
বড় রাস্তা ছেড়ে গলিতে ঢুকতে যাবে!
হইহই করে এসে পড়লো ' ওরা '!!
দুপাশ থেকে দুটো দল,হাতে তাদের....
ধোঁয়ায় ভরে গেল চারধার!
পড়ে ফিরছিল ছেলেটা।

মনে খুশি পিঠে ব্যাগ হাতে ভুট্টা
হঠাৎ একটা তীক্ষ্ণ শব্দ  'ধাতব '
কোথা থেকে ছুটে এলো বুলেটটা!
পড়ে গেল ভুট্টাটা, ছিটকে গেল কটা দানা
পিঠের ব্যাগ ভিজিয়ে নামল রক্তের ধারা....
পড়ে ফিরছিল ছেলেটা!

রাস্তায় তখন অনেক লোক, পুলিশও,
খবর গেল,ছুটে এল পরিচারিকা মা!
ভুট্টার দানাগুলো, আর পড়ার ব্যাগটা...
তখন রক্তে মাখা!!
'ওরা ' কারা ?? নীরব জিজ্ঞাসা মায়ের চোখে!
বলতে লাগলো সবাইকে, " আমার বাপি "??
পড়ে ফিরছিল আমার ছেলেটা.......