শনিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০১৯

প্রিয়াঙ্কা ভুঁইয়া


প্রিয়াঙ্কা ভুঁইয়া

জলছাপ

জলের দাগেই আঁকছি ছবি
হৃদয়ের এই ছিন্ন ক্যানভাসে,
অনুভূতিদের আঁকিবুকি চলে
ফিরে দেখার আপন অভ্যাসে।

ছুটছে সময় জলেরই স্রোতে,
বিবর্ণ মুখেরা ঝাপসা কাঁচে;
আবছা ছবির স্মৃতিদের ঝড়
অতীতটুকু বাঁচে মনের আঁচে।

জীবন নকশা যেন জলতরঙ্গ,
নদীর গতিপথে রৈখিক ঢঙে;
স্মৃতিদের আনাগোনা ভীষণ
লেখনী তুলির মৃদু জলরঙে।

রঙগুলো সব হারিয়ে গেছে
সাদা-কালোর ধূসর পাতায়,
রামধনু রঙ কুড়িয়ে পেলেই
রাঙিয়ে দেব মনের খাতায়।।








ট্রাফিক জ্যামে গল্প ওড়ে

ট্রাম লাইনে মোড়া ব্যস্ত শহর,
অচল হাওয়ার নস্টালজিয়া;
ফিরতি ট্রামের জানলা ঘেঁষে
গুমটিমুখো ক্লস্ট্রোফোবিয়া।

এই ট্রাফিক জ্যামে গল্প ওড়ে,
কবিতার গতি হারায় নাব্যতা;
থমকে যাওয়া চোরাবালিতে
মুখ ফেরায় কর্মমুখর সভ্যতা।

গাড়ির কাঁচে আলতো টোকা,
ছোট্ট শিশুর দু'হাতের প্রতীক্ষা;
হয়তো কেউ করে সামান্য দয়া,
কখনও বা চিরাচরিত উপেক্ষা।

পরিচিত যানজটে স্তব্ধ জীবন,
এখানে মানুষ পথ বানিয়ে চলে;
শহরের বুকে আজ ধুঁকছে হরিৎ,
অনলাইন সিগন্যাল সবুজের দলে।







কাব্য বিভীষিকা

আঁটঘাট বেঁধে কাব্যের নাম দিয়ে কাগুজে প্রলাপ,
বিভীষণ শব্দজালে অসংলগ্ন কিছু ভাবনার ছাপ,
গন্তব্যহীনতায় ভাসিয়ে দেওয়া আনকোরা কথা,
দাঁতভাঙা শব্দেই জব্দ, মানে বোঝার চেষ্টা বৃথা!
মর্মার্থ দূরে থাকুক, অর্থটুকুই উদঘাটন বড় দায়!
পাঠকের বোঝা-না বোঝাতে কীই বা আসে যায়!
গুরুগম্ভীর জটিলতা ঘিরে শুধুই অলীক প্রবচন,
ঝুড়ি ঝুড়ি লাইক আর কমেন্টে ফেসবুক প্রহসন,
চাটুকারদের মনে কবিতা পাঠের প্রবৃত্তি থাকে না,
'অসাধারণ' মন্তব্য করতে কাব্য বিশারদ লাগে না;
সৃজন তো নয়, দিনভর তোষামোদই এদের সাধনা,
'সেরা সাহিত্যিক' সম্মাননায় সাহিত্যের অবমাননা,
দুর্বোধ্যতার নাম হেঁয়ালি, আসলে যেন শব্দভনিতা,
কাঠিন্যের নাম আর যাই হোক, কখনও না কবিতা;
সাহিত্য তো থাকে মানুষের মনের ভীষণ কাছাকাছি,
ফল্গুধারার সিঞ্চন করে তৃষিত প্রাণেরই মাঝামাঝি,
আবেগী ভাবনারা ভরায় আবেশে প্রতিটি অক্ষরে,
চোরাস্রোতে হারায় না চিন্তারা কঠোরতার স্বাক্ষরে;
মানুষের জন্য কবিতা লেখো, ভাষাবিদের জন্য নয়,
কত কবিতা আসে-যায়! সব কী মনের খাতায় রয়!
সৃজনের সাথেই উঠুক ফুটে কবির সম্যক পরিচয়,
দূরদৃষ্টির পরিচয়টা থাকুক কাজে, দেখনদারি নয়;
কেবল কবিতা লিখলেই কিন্তু 'কবি' হওয়া যায় না,
প্রাণহীন হাজার সৃজনেও 'স্রষ্টা' উপাধিটা মেলে না।