শেখ সামসুল হক
স্বাধীনতা চর হাজী গঞ্জ
জমির তোর খুব কাছে যেতে চাইছি বিশ্বাস
কর
যেখানে তুই সেদিন যেতে চাসনি
সেখানে জোর করেই ওরা তোকে পাঠিয়েছিল
যাবার বেলা হয়নি দেখা
ছিলনা কেউ নিকটে তোর
শুকনো ঠোঁটে একটুখানি জল ঢেলে দেয়
চোখের ধারা মুছিয়ে দিতে মা জননী
তাকেও ওরা যেতে দেয়নি
এমন নিঠুর অসময়ে বড়ই একা কেউ দেখেনি
গুলির ঘাঁয়ে কলজে ছিঁড়ে
রক্তে ভেজা দেহ নিয়েই বিদায় হলি
ক্যামন করে
পদ্মা তোকে আপন বুকে ঠাঁই দিয়েই
খুঁজলো তার যে কতশত অতীত জ্বালা
ঢেউ উঁচিয়ে সে কথাই বলছে যেনো ঃ
‘জমির আছে আমার কাছে’
কেঁদোনা কেউ দেখবে তাকে
যে কোন এক ঝড়ের দিনে আমার তীরে এলেই
তবে
দেখতে পাবে ঢেউ নিয়ে সে করছে খেলা
শক্ত হাতে রক্ত চোখে
জমির বিশ্বাস কর আজকে আমিও তাই
তোর কাছে ভাই যেতে চাই।
তুমি কাছে এলে
কুতুব মিনার থেকে শহীদ মিনার
ভাঙ্গা গড়ার এক ইতিহাস তুমি
তুমি কাছে এলে আমি একা হয়ে যাই
লাশ কাটা ঘরে জল কোকিলের কালো
বুক ছিঁড়ে ফেড়ে সেদিনের সব কথা
বেহাল নেশায় রাত তিনটার চোখ
কিংশুক হয়ে ফিরে যেতে চায় যাক
ক্ষতি নেই কোন হিংস্র বাতাস এসে
অনেক দিনের একটা পুরোনো ছবি
কাঁপিয়ে তুলছে ছবিটা হঠাৎ করে
আঁছড়ে পড়ার শব্দ এখন ভীরু
বেদনার মুখে রাত প্রভাতের ছায়া
ফেলছে; বলছে তুমি কাছে এলে কেন
?
তুমি কাছে এলে আমি একা হয়ে যাই
পশু হয়ে যাই অমানুষ হয়ে যাই
আমার ভেতর ভূমিহীন কৃষকের
ভেঙ্গে পড়ার জরুরী খবর পেয়ে
রাতের চেয়ার ছেড়ে উঠে আসে মেঘ
ফুলের আদেশ অমান্য করে তাই
শস্য উজাড় মাঠে ঘাটে নামে ঝড়
পুড়ছে হৃদয় আগুনে দিয়েছি হাত
চার দিকে ঝড় তুমি ফিরে যেতে চাও
যাও ফিরে যাও আমি একা হয়ে যাই
তুমি কাছে এলে আমি একা হতে পারি।
ঢেউ দেখে কেউ
সেহেলী তোর কারুকাজহীন ঠোঁটের লাল
দীঘিতে
এখনো কি বেদনা অপার হাসির পদ্ম ফুটে
কি-না?
জানিনা জানিনা জানবোনা আর কোনদিন
একদশক বাদে বাহাদুর শাহ লেকের ধারে
শুধু চোখের দেখা হলেও কথা হয়নি তোর
সাথে
সে দুঃখ বোধটা আজকাল মনের ভাঙ্গা
মঞ্চে
স্মৃতি সভার আয়োজন করে বসছে নোটিশ
ছ্ড়াাই।
দুলালী তুই বলীর পাঠা আমার কাছে
পূজোর ফুল
কল্পনা সেতো স্নান ঘাটের জলকন্যা,
বেদানা তুই
ছুটে যাওয়া জাবর কাটা ঘাস বিচালি
সারা জীবন
পারশীন চিরদিন দিল আফরোজ নাচে গানে
মুখর হয়ে থাক তুই নীল কাঁচ জলসা
ঘরে।
বেলী গন্ধছন্দহীন স্বরাজে বিরাজিত
থাক
বাবলি তোর হাসির ঢেউ দেখে কেউ হারিয়ে
না যায়
নীলকণ্ঠ নীলাঞ্জ তোর নীল নদের দুই
তীরে
দন্ডায়মান যুদ্ধ পাগল কামচতুর সমরজান্তা।
পরিপূর্ণ তুমি
ডুবে যাচ্ছি নাতো, ঠাঁই কোথায় ?
দূরে না কাছে
ময়ূর পঙ্খী নাও, ভীষণ দুলছে
দুঘন্টি পালে দমকা হাওয়া খেলছে দারুণ
খেলা
এরপর আরো আছে ঢেউয়ের মাতলামী
ঠাঁই কি নেই তাহলে আজকে আমার
আপৎকালীন আশ্রয়ের পারাপারে
আপন বলতে এক নাম জানি সে আর কেউ
নয়
আশায় ভালোবাসায় সেতো তুমি
তুমি ছাড়া এ দুর্মর ক্ষণে কারো কথা
কোন স্মৃতি
মনোভূমি আলোকিত করার সাহস করেনি
ডুবে যাচ্ছি নাতো ঠাঁই কোথায় দূরে
না সুদূরে
মনপবনের নাও ভীষণ দুলছে হালে পানি
নেই নেই
তুফানী হাওয়া যা খুশী তাই বলছে
ঢেউয়ের দাপট বাড়ন্ত লাউয়ের ডগায়
সুন্দরী ফণা তুলে
আপন পর ভুলে হানছে আঘাত
তবে কি কোথাও যাবার নেই কিছুই পাবার
নেই
অভীরু মনোপ্রাণ ছুঁই ছুঁই করছে ভয়ের
আকাশ
চেনা জানা কেউ নেই ধারে কাছে
অবসাদ আর ক্লান্তির কাটাতারে জড়িয়ে
যাচ্ছি কেবল
দশদিক থেকে ঘিরে ফেলছে গোলাপ বাগান
কোথায় তুমি নিশিভোর স্বাগত সূর্যমুখী
উদ্ধার করো ডুবে যাচ্ছি হে বিপত্তরাণেষু
চাঁদ ডুবলে ওঠে আসে রোদে ভাজা কড়
কড়ে সূর্য
আমি ডুবলে ওঠে এসো তরতাজা পরিপূর্ণ
তুমি।
বিজ্ঞান সনেট -৫
মাধবী সুন্দর বারুদ কণায় চারু নিম
চোখে
সুপার মুনের নিকট দূরের সিলভার ¯্রােতে
কাকর নদীর কাঁশবন ছোঁয়া ভোরের বাতাসে
খোয়াড়ে আটক খটমল দল অস্থির যখন
ফকিরি জিকির বাজনা বিহীন কত ভাললাগে
বিবরণ দিতে পড়তি বেলায় হেলায় খেলায়
সাধু সাবধান হবার সময় পায় না ভুবনে
অধরা উদ্ধার বুঝে না অবুঝ রকেট হামলা
কত ভয়ানক ক্ষতের সৃস্টিতে অতল বিহারে
করজোড় নেই ভক্তির মেলায় ইমেইল আসে
যেতে চাই ছুটে যাওয়া হয় না চড়ক বাধায়
থমকে দাঁড়ায় শক্তির পাহাড় রঙিন মহল
বেসামাল হয় দারুণ করুণ অসহায় রূপে
বিকট নিদান অদূরে বিপ্লব ঘটায় গোপনে।
নক্ষত্রের রাত্রিবাস
জেগে আছি ভালবাসা নক্ষত্রের রাত্রিবাস
তুফানের চিত্রদেশ সহজ সত্যের কাছে
নতজানু সংগ্রাম খুঁজে ফিরে পারাপার
চিরচেনা ভাবনার নদী তীর করতল
ছুঁয়ে যায় শতাব্দীর অবশেষ সরাসরি
মাধ্যমের তারকাটা পেরুবার কৌশলের
ঝাড়বাতি জ্বলে ওঠা সময়ের জোড়াতালি
নিয়ে চলা জীবনের খটমল তাড়াবার
লড়াইয়ের আওয়াজ কানে বাজে ছটপট
দৃশ্যপট পড়ে থাকে নিকটের ছায়াতলে
অবিরাম বিশ্বাসের পোড়ামাটি নাই পাই
ধা ধা কলে হচকিত বুঝতে পারে না কিছু
জেগে থাকা মোমরসে শনির আখড়া বসে
ধূপখোলা রথখোলা ভাব তাপ নিয়ে চলে
গদাধর ঘুম চোখে কাটায় প্রহর একা
উচাটন উর্বশীর নরক নৃত্যের তালে
গোলে
জীবনের একদাবী ফিরে যেতে পারি নাও
পারি।
স্মৃতির হাঙ্গর নদী
মধ্যরাতে মাধবী লতায় জড়িয়ে পড়ার
সাহসটা এখন স্মৃতির হাঙ্গর নদী
যাত্রাপথে জেগে থাকা চাঁদ তারা
অন্ধকারে জোনাকির চোখ যায়
অনিচ্ছার কাঁচ কাটা চকচকে হিরে
চুপচাপ থাকে তীরের ভাঙ্গন খেলা
নি:শব্দের বায়ূচড়া ভাব ধীরে ধীরে
কাটে
বাঁশী হাতে শুকনো পাতার ঝরে পড়া
নিয়ে
কেউ কিছু বলে না কি হলো এমনটা কেন
চির চেনা রাতের ছবিটা ভালো লাগে
না যে
সময়ের সাথে পাল্লা দিতে হবে ঠিকঠাক
ব্যতিক্রম হলে মার খেতে বাকি থাকবেনা।
রকেট যাত্রা
জীবন কালের জীবনী শক্তির উর্বর উত্তাপে
ভাবের রকেট যাত্রায় চলার ভাবনা নিকটে
রাখার প্রবল বাসনা কাতর সময় এখন
জানার তেমন সাহস হয় না এমনটা নয়
কি হবে জানতে পারলে ফেরার পথটা ফাঁকা
সেখানে কিছুই নেই যে কেবল একলা থাকা
রাত যায় চলে দিন আসে বীণ বাজিয়ে
ধামাকা
প্রয়োজনহীন একটানা বসে থাকার নামতা
পাঠ করে যেতে আর কত ভাল লাগবে এখানে
পরিবেশ যা তা এ রকম বলা যায় না ঠিকই
তারপর এক মনে হতে পারে কোথায় আছি
কথা বলে জেনে নিতে সাধ জাগে কি করে
বাঁচি
স্বপ্নের বসত ভিটায় উচ্ছেদ অভিযান
চলে
হ্যাঁ করে তাকিয়ে থাকার অধিক কি
করবে বলো
না করে থাকার উপায় একটা আছে খুব
কাছে
ভুলের জানালা কপাট হঠাৎ বন্ধ করে
দেয়া।