শনিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০১৯

বিকাশ চন্দ


বিকাশ চন্দ

মহুলগন্ধী বুক

ইচ্ছেরা সব থমকে থাকে জীবন জোড়ার বাঁকে,
পীতরঙা শীত খোঁজে বসন্ত লাল পলাশ---
অথচ এখনো ভেজা আলের এপারে কাটা মাথা
ওপারে কবন্ধ শরীর অলীক উদ্ধার কখন,
দিগন্তে গত দিন ছিল বৃষ্টি রামধনু রঙ নেশা---
এ কেমন সময় সাজ পথে ঘাটে আগুন শরশয্যা।


লজ্জাহীন বাসর সাজায় পাঁচ তারা কোন ঘরে,
আত্ম ভুক মানুষ জানে কাছাকাছি কত গড়ে ওঠা সংসার---
ছোট ছোট ঘর প্রতি প্রহরের প্রাণে ধরে রক্ত ফাটল,
দে খুলে দে আত্মস্থ সমূহ আশার নির্লোভ বাকল---
একতারা সব হাতে বাজে সব মননের গান,
পায়ে পায়ে উঠে আসে জনপদ শাশ্বত অভিমান।


খরা বন্যা বৃষ্টি রোদ হাতে হাতে হাতে হাতে মেপে নেয় মাটি,
সর্বংসহা গঙ্গা জানে মেঘনা বোঝে দু'কুলের টান---
জাত গোত্র সীমানা ভেঙেছে কত বার পুরুষ্টু দুধেল টানে,
বনের ভেতর ঝাঁঝরা বুকে গাছের শরীরে লুটিয়ে আছে---     
অদল বদল কোন সে সময় অনিন্দ্য কোন সুখ,
হৃদয় জুড়ে চাপা আগুন জানে মহুল গন্ধী বুক!      
 






জল যাত্রা

মানুষের কাছে এলে অন্তর উত্তাল,
এই ক'দিন আগে বাসি খাবার তুলে খেয়েছি
কিছু ছিল চেনা শোনা মুখ কিছু ছিল রক্তাক্ত অক্ষর
কিছু দিন আগে ঘন ভোর বনে রাতে ছিল আগুন ফুল,
সবাই জানতো বেচা কেনা করা যায় সস্তায় জান্তব---
সমূহ অস্তিত্ব মেলে অনেক মানুষের জীবন ভরসায়।        


এখন উদার সময়ে সোনা ফলেছে সবুজ ক্ষেতে,
নীরবতা রাত্রি জানে জোনাকি রাত্রি এবং তারা,
নবান্ন সময় কালে গুমরে ওঠে কান্না যত----
কেউবা গামছা কেউবা আঁচল লুকিয়ে রাখে হৃদয় ক্ষত,
কে জানে কোথায় আছে বেঁচে থাকার সীমা রেখা---
এ গ্রামে ফিবছর আসে শহুরে মানুষ উল্লাসে,
গ্রামের চিকনি শাক থালকুনি গিমা শাক খিদের যোগান---
অদূরে প্রকৃতি আগলে আছে ধোঁয়া ওঠা গ্রাম আর প্রাণ।  


গাঁ গঞ্জ ঘিরে আছে সবুজ তার উপরে নীলের অহংকার,
কৃষক মা আর ঘরনী হাঁটু ডোবা পাঁকে,
মাথায় শিষশুদ্ধ পুরুষ্টু ধানের বোঝা----
কীসের অঙ্গীকার ছিল হৃদয়ের ভারে ও শরীরে,
জাত গোত্র ভাষাহীন মানুষেরা শুধু ভরা পেট খোঁজে---
এখন মেয়েটির শরীরে প্রকৃতির ছায়া জল যাত্রায় চলে।







প্রজাপতি রঙের সন্ততি

সাম গান জানে আজানের সুর
অদূরে বাজে গীর্জার ঘণ্ট,
অসীম সীমায় দাঁড়িয়ে তখন কোমল বর্ষা মেঘ---
স্নিগ্ধ সকাল কোঁচড় ভর্তি খিদে এবং ফুল,
কুমারী জননী তাও সতীসাদ্ধী উৎসব----
আকাশের কি দায় জানে না পাঞ্চালী।


মণীষার বীজে অঙ্কুর কথা জানেনা মন্দোদরী----
সুবচনের আড়ালে মায়াহরিণ জানে আদিম কালের ক্রোধ,
অশ্লীল ভাষা ওড়ে বোঝে না সাজানো বাগান----
কি ঠাণ্ডা আলোয় তোমার শরীর ছুঁয়েছে মায়া,
এসো তবে হোক পূর্ণিমা উদযাপন---
ক্ষয়ের সময় এখন ধূলিসাৎ প্রত্ন স্বাধিকার।


হঠাৎ রাতে দৌড়ে আসে রাত্রি ভাঙা মশাল---
রাত বিরেতে পাড়ায় পাড়ায় মায়া ইন্দ্রজাল   
শুষ্ক সময় জানে রাতের অরন্যে বাজে বৃষ্টি নূপুর,
অবিনাশী প্রেমের ঠোঁট ছুঁয়ে গেছে রাত রতি আলো---
অভিমানী রঙ মাখে কৃষ্ণচূড়া লাল--
সারা শরীর জুড়ে তৃষ্ণা বেড়ে ওঠে প্রজাপতি রঙের সন্ততি।