শনিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০১৯

মানিক বৈরাগী


মানিক বৈরাগী

যাপনের প্রাত্যহিক খবর
আমি তুমি সে
-----
মন চেয়েছিল বলি, দাঁড়াও যেও না, ডাক দিতে কোথাও বাঁধলো,
তাই ডাকিনি, ভয় পেয়েছি তোমার কোকিলা চোখ
তুমিও হন হন করে গিয়েছ চলে, পাশ ফেরোনি

জানি জানি খুব জানি, তোমার সাজানো শোভাঘরে
খুব চিল্লাচিল্লি হয়, আশপাশ পাড়ায় চায়ের দোকান আর সেলুনে
যুবাদের আড্ডায় কথা আর গল্প ফুরিয়ে গেলে তোমরাই বিষয়
পাড়ার বখাটেরা টিটকারি মারে, তুমি খুব নীরবে অফিসে যাও

আমি ঠিক ঠিক সেই লাল চোখ ভদকা দোচুয়ানি টেনে মিষ্টি জর্দায়
শাহীন বাসায় লেবুর শরবত গ্লাসে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রাখে
তেঁতুল অথবা জলাপাই আচার টেবিলে রেখে রাত দশটায় ঘুমিয়ে পড়ে
মন চাইলে ভাত সবজি নয়তো একটুকরো মাছ আচারসমেত খাই

সে ভোরে জেগে প্রথমে টেবিলে রাখা নোটপ্যাডে খুঁজে তাজা কবিতা
আমি তার জন্যে প্রতিদিন কবিতা না হয় কিছু লিখে রাখি
আমাকে জাগায় বাজায় অসিফ যাওয়ার আগে , আমরা এক সঙ্গে কবিতা পান করি
তারপর সিগারেট ধোঁয়া ছেড়ে দেই আকাশে
হাসানের সূর্যোদয় খুব মনে পড়ে, সুরাইয়া কেমন আছে জানি না।





শব্দ ও ফুলেরা
------
মাথার ভিতর শব্দেরা গিজ গিজ করছে
কত রংবেরঙের শব্দ
কলমের ফনায় কিলবিল করছে
কিন্তু টুপটুপ করে ঝরছে না
আমার শুধু অচেনা দীর্ঘশ্বাস ঝরে
আমার শুধু অনাহুত বেদনা ঝরে
আমার শুধু আপেল সদৃশ কষ্ট ঝরে
কতদিন এই ঠোঁট শ্রাবণের জলে ভিজে না
কতদিন বাদাম চিবুতে চিবুতে ঘাস ছিঁড়ি না
কতজন কত কী ছাপায় পত্রিকার পাতায়
আমি শুধু শ্রাবণের মেঘাচ্ছন্ন জ্যোৎস্নায় একা
তোমাকে দেখতে চেয়েছি ভিজতে চেয়েছিলাম
সাদা কাগজ পড়ে আছে উইও আসে না
কেউ আসে না
তবু জানালার কার্নিশে ফুটিয়েছি গোলাপ
উঠোনে ছাতিম ফুলের সৌরভ শ্রাবণ জ্যোৎস্নায়
তবু আমি কদম রোপণ করি
তবু প্যাপিরাস ফুলের মন্ড সাজাই
বাকলগুলো ফেটে শুকিয়ে যাচ্ছে ক্রেতা নাই
নিষিদ্ধ গন্দমের মতো আমিও যেন পপি ফল
সে এলো না শব্দগুলো ছন্নছাড়া এলোমেলো
পপির মধু সহজে ঝরে না সবখানে সব পাত্রে।






তুল্যমূল্য

ন্যায়ের পক্ষাবলম্বন রক্তজাত
তাই আমি বেদনা বিধৌত মানুষ

ক্ষুধার্থ সর্পকেও খাবার দেয়া স্বভাব
আহত নেকড়ে কে দেই আশ্রয় সেবা
ক্লান্ত শিংউছা বিরিষ কে দেই তৃষ্ণায় জল
তাড়াখাওয়া শিকারি কুকুর পেয়েছে আশ্রয়

ওরা করেনি প্রতারণা, করেনি আঘাত
সর্প দিয়ে গেছে মণি
নেকড়ে দিয়েগেছে চোখ
বিরিষ দিয়েগেছে সাহস
কুকুর দিয়ে গেছে কৃতজ্ঞতা

মানুষ প্রাণী দিয়েছে আঘাত
মানুষ প্রাণী করেছে প্রতারণা
মানুষ প্রাণীই করেছে সর্বহারা
মানুষ প্রাণীই দিয়েছে মায়াবী যাতনা
কারণ আমি  মানুষ ভালোবেসেছি।






সিসিফাস

গৃহলক্ষ্মী দেবী অন্নপূর্ণা কামিনী জায়া
প্রতিদিনের সংসারের কাজ করতে করতে করতে
যখন তুমি
টানাপোড়ন
জ্বলন জ্বালানি
চাল ডাল তেল রসুন নুন
আমাদের নিত্য প্রয়োজনের যত চাহিদার
অলিখিত অপ্রকাশিত শ্রুতি কবিতা
তুমি উচ্চস্বরে আবৃত্তি করো।

আর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, একনেকের বৈঠকে
গ্যাসের দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্তের খবর দেখো টিভিতে
পড়ো খবরের কাগজে  জিনিসপত্রের মুল্য তালিকা
তখন তুমি আর কবিতা আবৃত্তি করো না।

পত্রিকা পাঠের পর
আমার না দেখা রেসকোর্স ময়দানে জাতির পিতার
অমিয় ভাষণের মতো অবিকল কলরেড়ি মাইকের সামনে
হ্যাশেলের টুলে দাঁড়িয়ে বক্তব্য রেখে যাও

আমি অবাক হয়ে তোমার দিকে তাকাই
আর মুগ্ধ শ্রোতার মতো যখন শুনি,
ঠিক তেমনি সময়ে  অতিথি এলে তাকে নারায়ণরূপে
সাগর সেনের দরদী কণ্ঠে রবীন্দ্র সঙ্গীত শোনাও!
তখন তোমাকে খুব ভণ্ড মনে হয়।

প্রতিমাসের কুড়ি তারিখ থেকে পরের মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত
আমিই তোমার একমাত্র শ্রোতা ও নির্বাক দর্শক।