তনিমা
হাজরা
অথভালবাসাজনিত
বলিদানের
পর রক্তারক্তি হয়ে জেনেছি
যে
সেটা নাকি বিবাহ ছিল,
কে
আমাকে সম্প্রদান করেছিল?
কই
আমি তো সম্মতি দিই নি,
আমি
তো কলমা পড়িনি,
আমি
তো অন্যমনস্ক হয়ে নূপুরের ঝুম ঝুম শুনছিলাম।
আমার
ফুলশয্যার রাতে আমার পাশে শুয়েছিল
প্রতিবেশিনী
বলাকা বৌদি।
আমি
সেদিন রজঃস্বলা ছিলাম বলে বিধিমতো নাকি ফুলশয্যা নিষিদ্ধ ছিল।
অথচ
সেদিন শরীরের গল্প দিয়ে কাহিনীটা শুরু না
হয়ে প্রাণের আদানপ্রদান দিয়ে সম্পর্কটা
শুরু হবার সেটা একটা দারুণ সুযোগ ছিল।
কিন্তু
আমি সেই রাতে কার পাশে শুতে চাই, কেউ আমাকে জিজ্ঞাসা করেনি। সেই শুতে
চাওয়ার ইচ্ছেটা আমার পক্ষে জানানো নাকি খুব নির্লজ্জের কাজ একথা জেনেছিলাম একজন
হিতৈষিণীর কাছে।
কেউ
জানতে পারেনি সেইদিন সারারাত আমি ঘুমোইনি, কেঁদেছিলাম। তারপর আমার সব চোখের
জল শুকিয়ে গেছিল। যেমনি ভাবে রোজ বলাকা বৌদির পাশে শুতে শুতে খাটের সব
রজনীগন্ধাদের আস্তে আস্তে শুকিয়ে যেতে দেখেছিলাম।
তিনদিন
বাদে এক দুপুরবেলায় শুকিয়ে যাওয়া রজনীগন্ধার খাটে আমার শুকনো মন ও ভেঙে গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে গেল। সেদিন কিন্তু আমি
একটুও কাঁদিনি।
আমি
তাড়াতাড়ি সেই গুঁড়ো হয়ে যাওয়া মনকে ঝাঁটপাট দিয়ে ফেলে ঘর পরিস্কার করে নিলাম।।
সেই
থেকে আমার কোনো মন নেই।।
আমি
একটা নারী শরীর।। শুধুই একটা নারী শরীর।।
প্রেমের
হরতাল
পঞ্চায়েতে
ডাক পড়েছে,
তুই
কি মেয়ে সতী?
তোর
বাচ্চার বাপ যে ব্যাটা
জানবি
সেইটেই তোর পতি।
কি
বলছিস কালশিটে দাগ,
যৌন নির্যাতন?
শরীর
নিয়েই টানাটানি,
খোঁজে না সে মন,
চুপ
আবাগী তাই বুঝি তোর
মনের
ভেতর অন্য কোরোর ঘর,
মুখপুড়ী, এই
দিচ্ছি দড়িকলসি,
যা
ডুবে তুই মর।
পারিস
যদি সমঝোতা কর,
তবে
গলায় পাবি মালা,
শোকেসেতে
রাখব ঝেড়ে,
বাহ বাহ প্রশংসাতে ভরাবো
দুইবেলা।
আরে, এদিকে
আয় এই যে ব্যাটা হতচ্ছাড়া
আকাট
মুখ্যু ছেলে,
কি
দেখে দিস আগুনে ঝাঁপ
সমাজ
সংসার ফেলে?
কি
দেখেছিস? গতর নাকি? ডবডবে আর তাজা,
নারী
মাংস স্বাদু বড়,
জানি, জানি খেতে দারুণ মজা।
কি
বলছিস চাস না শরীর,
শুধু চাস একটা মন,
যার
কাছে তোর ইচ্ছে ডানার অবাধ বিচরণ,
শালা, তোর
মতো এক আহাম্মকের কেন হয় না রে মরণ?
আইন
হলো গুপী গাইন
গাইছে
গলা ছেড়ে,
সুর
তাল সব ঠিক না হলে দেবে ফকির করে।।
তানা
না না শব্দে বাদ্যি দিব্যি বেজে ওঠে।
মারের
প্যাঁচে সেয়ানারা দিব্যি শানায় অসি,
সংযন্ত্রের
কলুর ঘানি সাবেকি মৌরসী।
কত্তা
যারা বাগিয়ে কোঁচা
গোঁফে
দিয়ে তা,
বগল
দিয়ে বাদ্যি বাজান,
সাদা
সাজেন, কালো ঢাকেন,
নাটুকে
সব ঢ্যামনামিতে রগড়ে রগড়ে দাঁতন মাজেন,
আতর
দিয়ে দুর্গন্ধ লুকোন,
চক্ষু
টিপে কয়ে থাকেন, পারলে খোঁজো বেআইনের ছুঁচের
নীচের ফাঁক,
ওপর
ওপর সাজিয়ে রাখো নথিরা ঠিকঠাক।
শরীর
হলো আইনমাফিক বর্গা জমিদারি,
সোয়ামি
দেয় ইস্তিরিকে, সোয়ামিকেও ইস্তিরি।
তার
বাইরে গেলে পরেই শমন হবে জারি।
রুটিন
মাফিক ঢেকুর তোলা,
কে
প্রেমিক,
কে ঠগ,
থামো
বাপু,
সাজন্ত এই থিয়েটারে আর মেরো না তো ওসব খাপছাড়া ডায়লগ।
ফেলে
কড়ি মাখেনি তেল এমন গাধা যারা
আজকে
তাদের বাড়ির হদিশ আনুক জজের পেয়াদারা।
হাড় মাংসের ঊর্ধ্বে উঠে মন দিও না নাড়া
যারা শুধু গতর বোঝে, সদরে
সব সাদা,
ইচ্ছেমতোন কলের নীচে নিচ্ছে ধুয়ে কাদা,
হায়
কলিযুগ তোমার ফাঁসির জজ সেজেছেন তেমনই কত্তারা।
শুদুমুদু
এই সেরেস্তায় মনের কিতাব খুলছ কেন মিঁয়া,
মনের
বরং কাবাব বানাও আগুনে কাঠ দিয়া।
তপ্ত
তপ্ত অঙ্গারেতে পুড়িয়ে ঝাল ঝাল,
মন
জ্বলে যাক চুল্লীতে,
আজ প্রেমের হরতাল।।।
শাহাজাদি
ধন্যি
বটে সাহস তোমার
নাম
রেখেছ "শাহাজাদি"
এখানে
তো জিগায় কেবল
মদ্দা
হলো, নাকি মাদি?
মদ্দা
হলে ফোঁড়ে হবে
কিংবা
বেচবে মদ বা চরস।
মাদি
হলে বেচবে দেহ
বয়স
হলে ষোলো বরষ।
তুমি
কিন্তু বেচতে বেচতে
রক্ত
এবং মাংস টাও,
শাহাজাদির
শেকল ছেঁড়ার
স্বপ্নটা
ঠিক দেখে যাও।
শাহাজাদি
হচ্ছে বড়
পাঠশালে
যায় রোজ সকাল,
বাড়ছে
শরীর,
দেখছে জগত
হেঁ
ই সামাল রে,
হেঁ ই সামাল।
গলির
ভেতর তস্য গলি
ঘুপসি
ঘরে দোকানপাট,
তুমি ভাবছ শুধু এটাই,
ভুল
ভেবেছো, বিশ্ব জুড়ে মুক্ত হাওয়ায়
দেখছ
না কি নারী বেচার চলছে কেমন অবাধ হাট??
কেউ
বা বেচে কলাপাতায়
কেউ
বা বেচে র্যাপ করে,
কেউ
খাচ্ছে শর্টকাটে
কেউ
বিবাহের ট্র্যাপ করে।
অনাদি
সেই যুগ হতে তুই
হন্যে
হয়ে খুঁজিস কি ইভ?
আদম
পাবি গুটিকতক
বেশিরভাগই সরীসৃপ।
তবুও
তুই শক্তিময়ী,
তবুও
তুই উৎস আদি,
অন্ধকারের
জঠর ভেঙে
মশাল
হাতে উঠছে ঠেলে
জন্ম
নিচ্ছে পৃথিবীতে
হাজার
হাজার শাহাজাদি।।