বুধবার, ২১ আগস্ট, ২০১৯

দিশারী মুখোপাধ্যায়


দিশারী মুখোপাধ্যায়

অন্যকিয়া

যদি একটাই বাড়ির পাশ দিয়ে প্রতিদিন
একটাই লোক শুধু যাওয়া আসা করে
কারনের তোয়াক্কা নাকরে
সন্দেহ শব্দটির সতেজ হয়ে ওঠা স্বাভাবিক

জানি লোকটা ভালো করছে না
বাতাসের দূষণমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে রোজ
আর সেই বাড়িটাও ধোয়া তুলসীপাতা নয়
প্রতিদিন একজায়গায় বেহায়ার মত
ওইভাবে দাঁড়িয়ে থাকা কেন
সে সময়ে ঘরের কাজে
মলে বা প্লাজায় গিয়ে ব্যস্ত থাকতে পারে

রাস্তাদেরও দোষ কিন্তু কম নয় কিছু
প্রতিদিন একইভাবে একই দিকে একই নাম নিয়ে যেতে হবে
কে এমন মাথার দিব্যি দিয়েছে তাদের
রাস্তা যদি রাস্তার ভুল করে মাঝে মাঝে
মহাভারতের তাতে মারাত্মক অশুদ্ধি কিছু হবেনা মোটেই

আমরা যারা কানে দেখি নাকে শুনি চোখ দিয়ে
বলি আর মুখ দিয়ে মলত্যাগ করি
মহামান্য আদালতে নালিশ করেছি





রোগ

আমি তাকালেই সজনে গাছটিতে ফুল ফোটে
ইশারা করে সে আমার পরাগ কামনা করে

সারাদিন দেওয়ালের বাইরে বেচারা একাএকা
অদূরেই জটলা করে একদল টাটকা যুবক
তারা চাইলেই ওকে তুলে নিয়ে যেতে পারে সমূলে
বা ওর দুএকটি ডাল যদি ওইদিকে আন্দোলিত হয়
দিতে পারে উচিত শিক্ষা সর্বাঙ্গ জুড়ে হুলের দংশনে

এদিকে
আমার এখন নখ চুল কিছুই বাড়ে না
বছরে একবার কাটলে দিব্যি কেটে যায়
সজনের দৃষ্টিতে তবু প্রতিদিন নিয়মিত বাড়ে ক্লোরোফিল

কখনো কখনো
স্ফীতমান ইউনিভার্স যান্ত্রিক ত্রুটিতে থাকে পজে
আমি তাকালেই শুধু বাড়তে থাকে আড়ে ও বহরে ,অর্থাৎ
আজো আমি সামান্য একটি মহাবিশ্ব   আর
অসামান্য ওই সজনে গাছটির এ্যান্টিভাইরাস







গাঢাকা দিয়েছি

ভালবাসাকে দেখে ভয়ে আমি গাঢাকা দিয়েছি
আন্দামান দ্বীপে
সমুদ্র ও বেলাভূমির দৃষ্টি এড়িয়ে
গভীর জঙ্গলের মধ্যে একটি লবঙ্গ গাছের নিচে
রাতের তরল পিচ সর্বাঙ্গে মেখেছি

রাতের সমস্ত পর্যটকরা তাদের হোটেলে ফিরে গেছে
নৌকো , ক্রুজ এবং ভেসেলের নাবিকরা সেই রাতের ক্যানভাসে
তাদের নিজ নিজ সুন্দরীদের নেড়েচেড়ে দেখছে আর
জীবনের হাতে তুলে দিচ্ছে
বেঁচে থাকার আগামীদিনের নেশা
অথচ তারা কেউ জানেনা
ব্রহ্মাণ্ডের একমাত্র প্রতারকের নাম ভালবাসা

এক জারোয়া যুবতীর অপরিসীম গোপন সমুদ্রে আত্মগোপন করে
বিছের কামড় থেকে রক্ষা পেয়েছি
একমাত্র আমি






ভালবাসার গ্রাস

যন্ত্রণা আমাকে সাষ্টাঙ্গে তার পাশবালিশ

দুজন দুজনকে ঘেন্না করার মত ভালবাসি
থাবার নখ বার করে আঁচড়াই
আবার বোরোলীন গরম করে প্রলেপ দিই
খিস্তিখেউড় আর দুর্নাম করার শব্দ
ভাণ্ডারে কম অনুভব করি
একে অপরকে উপহার দেবার জন্য
দুজন দুজনকেই দাঁতে পিষি
পরস্পরকে অভয় দিয়ে ঠেলে ফেলে দিই
পাহাড়ের খাদে নির্মম

আমরা দুজন দুজনকে ভালবাসি
কুঁচোকুঁচো করে
মেটে চর্বি সহ বিক্রি করব বলে






দ্বিতীয় রহস্য

প্রথম রহস্য ছিল
আমাকে নাকি মানুষের মত দেখতে
তৃতীয় রহস্য ছিল
মানুষকেও আমার মতই
কিন্তু কোথাও খুঁজে পাচ্ছিনা
মনেও করতে পারছিনা
দ্বিতীয় রহস্যটা কী ছিল
অথচ একের পর তিন লিখেছি বলে
অনেকেই আমার ধোপা নাপিতে কাঁচি

রাস্তা ছেড়ে দিয়ে রাস্তা নিচ্ছি
সেতু ছেড়ে দিয়ে সেতু
প্রতিদিন আরা কাপড়
অন্য অন্য ঘাটে

নৃতাত্ত্বিকরা বলছেন
বহু ঘাটের জল খাওয়ারা
আদপে মানুষ নয়
কিন্তু এনাটমিতে তা মানলে তো

এখন দ্বিতীয় রহস্যের জন্য
জোর তালাশ
কে জানে ,তুমি তে তার
অস্তি মিলবে কিনা !







রহস্য -৩

আমি চেয়েছিলাম আমার একটা বড় বাগান থাকবে
আমি চেয়েছিলাম আমার বাগানের চতুর্দিক ঘেরা থাকবে -
অনন্ত উন্মুক্ততা দিয়ে
আমি চেয়েছিলাম
আমি পেয়েছি
আমি কৃতজ্ঞ

আমি চেয়েছিলাম কুবের আমার সম্পদ দেখে চমকে উঠবে
আমি তাকে বলবো তার সম্পদের অপ্রাচুর্য হলে
আমার ঋণ মকুবকারী দেনাব্যাঙ্ক থেকে প্রয়োজনীয় সম্পদ সংগ্রহ করতে পারে
আমার সম্পদ এখন অনন্তব্যাপী , অফুরন্ত , ক্রমবর্ধমান
আমি চেয়েছিলাম
আমি পেয়েছি
আমি কৃতজ্ঞ

আমি চেয়েছিলাম ভালোবাসাকে তার হৃদয় প্রসারিত করার ইষ্টমন্ত্র দান করবো
যাতে সে তার ছোট্ট উঠোনকে আকাশ ,মহাকাশ এবং জায়মান-ইউনিভার্সে নিয়ে গিয়ে
অনন্তকালীন সময়ের জন্য একটা বিরামবিহীন অক্সিজেন সংগ্রহের দম নিতে পারে
আমি চেয়েছিলাম
আমি পেয়েছি
আমি কৃতজ্ঞ