বুধবার, ২১ আগস্ট, ২০১৯

তাপসকিরণ রায়


তাপসকিরণ রায়

আগুন মুখ

তোমার আগুন মুখ দেখি

লৌহ কারাগার ভেঙে ফেলে সে প্রেমিক তার শেষ চুম্বন দিতে ছুটেছে--

সে জানে, তারপর ফাঁসিকাঠ ঝুলবে তার গলে।

সে জানে চার শ বিশ ভোল্ট বৈদ্যুতিক শরীর কেঁপে উঠবে--

এক যৌনমুখ ক্রমশ একটু একটু করে প্রকাশিত হবে।

শেষ বসন্তের লাল কৃষ্ণচূড়া কিংবা পলাশের ঠোঁটে তখনও চুয়াচন্দন ছুঁয়ে যায়।

মেঠো ঘ্রাণ মাটির শোষণে প্ৰথম বর্ষার জল সোঁদা গন্ধ  নিয়ে আসে।

তুমি ক্রমশ ডাঁসা থেকে আস্তে আস্তে রসভরি হয়ে উঠছ !

প্রচণ্ড চুমুকে শুষে নিতে হচ্ছে হয় রসনা

ঘ্রাণের মাঝে ম ম মাছিঝাঁক উতলা হতে থাকে

বাতাসে কাঁঠালি চাঁপার গন্ধ ভাসে--তারই আড়ে এক প্রেমিক লুকিয়ে থাকে

তোমার স্নাত শরীর থেকে প্রসাধনী গন্ধ বয়,

শ্লথ বসনের ভাঁজে ভাঁজে কামনার ধোঁয়া ওড়ে। 

এক জোর প্রেমিক-প্রেমিকার সহবাস শীৎকার ওঠে।

তার মাঝে একটা রেলগাড়ি অনায়াস লাইন ভেঙে এগিয়ে যাচ্ছে বাসভূমির দিকে।








আঙুর থোকা

আঙুর থোকায় আলতো টোকা মারি

বেলুন ঘর্ষণ সুখে লাল চাঁদ উড়ে যায়...

তোমার আলুথালু চুলের গন্ধ শুঁকি

একটা আদলে এসে তুমি থেমে আছো

দক্ষিণা বাতাস কি এখনই বওয়ার ছিল ?

আর ওই লালরঙা শাড়ির ভাঁজ খুলে খুলে

এক দর্শনার্থীর মজে যাবার কথা ছিল না।

তোমার বাধাই আমায় আরও দুর্বৃত্ত বানিয়েছে--

কখনও তুমিও তো চাও ঘরে সিঁধ পড়ুক ? 

সমস্ত কিছু তছনছ হয়ে খান খান ছড়িয়ে ছিটিয়ে...

সমস্ত লুণ্ঠন করে চেঙ্গিস খাঁ চলে গেছে,

তার তরবারির ফলা এখনও ঝলসে ওঠে--

অনেক ধর্ষকামী জন্ম নিয়েছে দেশটায়।

কখনও শরীর যেন আমি নই, হয়ে যায়--

কখনও মন শরীরের বশে থাকে না।

তাই বুঝি চেঙ্গিস খাঁ কারও কারও শরীর ভেঙে

এখনো উঠে আসতে পারে!

সে ছায়াবৃত্তের আড়ালে দাঁড়িয়ে ছোঁ মারতে পারে

কামনার মাংসপিণ্ডে।







জলোচ্ছ্বাস

জলোচ্ছ্বাস চলছিল।

তবু নির্লিপ্ত, তোমার চোখে মুখে কোন ভাবান্তর নেই !

তোমায় তাতিয়ে নিয়ে আমার লৌহশ্বর বিঁধে যাচ্ছিল,

তুমি একটু একটু করে ক্ষয়ে যাচ্ছ--

অন্ধকারের আতুর ছায়া কামনায় চাঁদ উঁকি দিয়ে যায়

ঘোমটার নিচে অগাধ বিচ্যুতি বুঝি সে টের পায়!

তোমায় ছিনিয়ে নিয়ে না হয় একটা রাত উধার করি,

সর্বনাশা সাপের ছোবল,

বাঁধা থাকে আমার নেশা পুটুলিতে

এই শরীরধোঁয়া থেকে সৃষ্টির অগাধ ধারা

নিষ্ফলা গড়িয়ে যায় অনুর্বর মাটি।

অন্য দিকে অকাল বরিষণে চাঁদও কলঙ্কিত হয়

এক নগ্ন অচিন  শরীর--তাতে রাত মিশে আছে--

তার ছায়াছবি ঝুলে থাকে চরিত্র হনন পর্দায়

ছায়ায় লুকিয়ে থাকে তোমার অনায়াস ভূলুণ্ঠিত প্রতিকৃতি।








আদিম অরণ্য

খুলে নাও শরীর

আদিম অরণ্য এসে আবার বন্য হাওয়া ছাড়ুক

তালে তালে উলঙ্গ ছায়াদের নাচ--লাফ ঝাঁপ সব কিছু তার অবারিত হোক--

সব কিছু অচিন থাক, কামজ গন্ধে ছুটে আসুক কস্তূরী মৃগ

আসুরিক বুকের ঘর্ষণে প্রেম আরও ঘন হয়ে উঠুক

পিষে দিয়ে যাক এই  দ্রবযন্ত্রণা--জ্বালা ভেঙে উঠে আসুক সেই সুখ।

কামজ রণন নিয়ে কিছু সুর যাতে তুমি মাতাল হয়ে উঠতে পারো

মদিরা রসে দুঃখগুলি গুড়ি গুড়ি ভেঙে যাক

নিয়ন চোখের পর্দা হোক রঙিন--

অবশেষে একটুকু ঘুমন্ত নেশা--

মনে হবে এক পেগ নেশায় কিছুই হয়নি তোমার।








কালো কেষ্ট

নাড়ি নক্ষত্র টেনে এনে তোমার ঔরস ভাঙে

প্রসব বেদনার পরেই বুঝি এক মা জন্ম নেয়।

অথচ খেলাটা থাকে গোপনে--

নিশুত রাতে কালো কেষ্টর বাঁশি বেজে ওঠে

অন্য রাইকিশোরী ঘর ছেড়ে যায়

ওই মুখ পোড়ার বাঁশির টানে নারী যে বিবসনা হল।

নিশুতি রাতে লজ্জা বিসর্জিত হয়--

উর্বরার দেহে বীজ ঢেলে কর্ষণ করে যায় কালাকেষ্ট।

সে প্রসব যন্ত্রণায় সন্তান হয়ে বেরিয়ে আসে, আর এক ফাটাকেষ্ট।

অন্যদিকে নারীর খোলস পাল্টে নিয়ে এক মা জন্ম নেয়।








এক মুঠো চাঁদ

সূর্য তখন তার শেষপটে লাল আলো ছড়াচ্ছিল।

এ দিকে ইচ্ছের লাল আপেল দুটো নিয়ে

লোফালুফি খেলতে খেলতে

সন্ধ্যে পার হয়ে গেলো।

চুপিচুপি আকাশের চাঁদ তখন

আমার জানলা গলিতে ঘরে ঢুকে আসে।

চরিত্রহীনতার লক্ষণগুলি শরীরের মধ্যে

কেমন খুঁটে খুঁটে যাচ্ছে দেখো !

এক মুঠো চাঁদ ধরে আমি চুমু কাটতে পারি

এই সব ব্যভিচার ও ধর্ষকাম এড়িয়ে

চুপিচুপি চাঁদও যে কি ভাবে কলঙ্কিত হয়ে গেলো!

আমিও ধপধপে জ্যোৎস্নার বিছানার

মৈথুন দৃশ্যগুলির কামনা এঁকে নিচ্ছি।

এক জ্যোৎস্নারানীকে শুইয়ে রাখি ঠিক আমার পাশটিতে

তারপর সমস্ত প্রেম ঢেলে দিয়ে আমি বিসর্জিত হই।