শুক্রবার, ২১ জুন, ২০১৯

রবীন বসু


রবীন বসু

সেই আষাঢ়ের কথা

এক

তোমাকে বলছিলাম সেই আষাঢ়ের কথা

সরপুঁটি ভিজে কাক আর কদম ফুলের কথা

তোমাকে বলছিলাম বিরহী রাধা

                              আর রেললাইন হাঁটছে

হা়ঁটছে কামিন ঞমেয়েরা পায়ে পায়ে,

                               পাচার হওয়া হাওয়া

প্রেম প্রেম খেলা নিয়ে জঙ্গি নিশানায় মধ্যদুপুর

নিপাট ধর্ষণ দ্যাখে মুঠো ভর্তি বালু

সব পারাপার পাচারের  সীমান্ত অতিক্রম করে


তোমাকে বলছিলাম সেই আষাঢ়ের কথা

সেই মেঘভাঙা বৃষ্টির কথা

সেই ধস নেমে যাওয়া পাড়      জলস্ফীতি

ছিন্নমূল বাস্তুভিটা

          মানুষও পতঙ্গ হয় শিহরিত ফড়িং ডানা


তোমাকে বলছিলাম এই বর্ষাই সব খাবে     

                                      সম্পর্কের উচাটন

নাবাল জমির ওপর বসেছে শকুন

সভ্যতার সিন্ডিকেট ধুয়ে দেয় প্রোমোটার থাবা


তোমাকেই তাই বলছিলাম সেই আষাঢ়ের কথা

সেই চিরবিরহণী শ্রীরাধিকার কথা

                  সেই প্রেমহীন চিকন সভ্যতার কথা






দুই

তোমাকে বলিনি আগে, সারাটা আষাঢ় মাস আমি

গ্রামদেশে কার সাথে সারাবেলা ভিজেছি জলে?

কার সাথে রাজারানি খেলা?

কচুপাতা হাতে নিয়ে জল-মানিক ধরার আগ্রহ


তোমাকে বলেছি কি আগে?

আষাঢ়ের দীর্ঘবেলা ছড়ি হাতে ঘাসফড়িং মেরেছি কত?

হলুদ ঠ্যাং শালিকের খাদ্য হয়ে

                                 তারা সব শুয়ে ছিলে মাঠে।


আমাদের যাত্রা পথ, আমাদের সবুজ শৈশব

কাদামাটি জলে ভাসে আষাঢ়ের নিমগ্ন সন্ধ্যা

সারারাত বৃষ্টি ঝরে, সারারাত মেঘের গর্জন

রূপকথার ঘোড়াগুলো এইমাত্র মেঝেতে শুয়েছে ।

সেই ফাঁকে স্বপ্ন আসে, জিয়নকাঠি মরণকাঠি

কালোচুলের রাজকন্যা আর

পক্ষীরাজ ঘোড়া থেকে নেমে আসে রাজপুত্র


এভাবেই গল্পকথা সত্য হয় আষাঢ় মাসে!







তিন

তোমাকে বলব এবার ভয়ে ভয়ে

তোমাকে বলি শোন, সব রূপকথা ভাসে বর্ষার জলে

অবিরত বৃষ্টি ঝরে, কুঁড়েঘরে ত্রিপলও জোটেনি

সরমা বুড়ির হাতে ত্রাণ নেই, বিপিএল কার্ড

মনসুর মিঞা পায় না কৃষিঋণ

হাভাত ভারতবর্ষ দুঃখের বিপন্নতা মাখে


নদীর ধারে বাস যাদের ভাবনা বারোমাস

আষাঢ়ে বুক কাঁপে, আষাঢ়ের সর্বস্বান্ত হাওয়া

ভিটেমাটি ধসে যায় নদীর গ্রাসে

তবু দেখি সবুজের প্রাণ নিরন্তর নড়ে ওঠে

তোমাকে বলছি শোন নম্র স্বরে

এই আষাঢ়েই প্রেম এলো, আষাঢ়েই মেঘদূত

কালীদাস অমর হল রবীন্দ্রনাথে….