শুক্রবার, ২১ জুন, ২০১৯

সীমা ব্যানার্জ্জী-রায়


সীমা ব্যানার্জ্জী-রায়

তোমার জন্য


বাইরে বৃষ্টি, বেদম হাওয়া, ঝড়ের ঝাপটা জানলার পাশে,

কাঁচের এপাশে বাজ বিদ্যুৎ-এ দুমড়ে মুচড়ে আমার শরীর,

তুমি ছুঁয়ো না আমাকে...

:

দরজা -জানলা খুলে আজ আমি ভিজব আবোলতাবোল

উৎসুক চোখ মেলে দাও শুধু লেলিহান ঝড়ে
প্লিজ! খুঁজো না আমাকে...

:

কত আঁকিবুকি দেখি কেন আজ একলা ঘরের দেয়ালে

এসো দেখি শুধু আসে কেন তারা শুধুই আপন খেয়ালে

কিছু ভেবো না আমাকে...

:

যাব না বেড়াতে বিকেলে আজ তো

শুধু দেখা আর শোনা হবে

দুইজনে আজ দেখব কেবলি
সমাজের প্যাস্টেল রং-তুলি








স্বরলিপি

ব্রাজো নদীতে আজ এত জলের নাচন

আকাশ থেকে বৃষ্টির স্বরলিপি

শোনা যাচ্ছে

কী অসম্ভব তাল, লয়, সুরছন্দ...

প্রবল হাওয়ায় ভাসে ছেঁড়া কথারা

ফেটে পড়ে বিদ্যুতের উদাসী আওয়াজ

চাপা গর্জনের মধ্যে যেন এক

প্রতিদ্বন্দ্বী অভিমান

জয়ডঙ্কা বাজিয়ে দিগন্তের কাছে

মিশে আছে অলৌ্কিক আলো

আকস্মিক সুন্দর তা, এ যেন প্রকৃ্তির

দুনির্বার খেলার দৃশ্য-

ঝড় আর বৃষ্টির নেশায় পড়ে

থাকে কবি বন্ধু...

জানি না কোথায় ভুল হয়ে যায়'

কেউ মুখ ফিরিয়ে চলে যায়,

আমার মনের স্বরলিপি

দিগভ্রান্ত হয় ক্রমাগত।









মেঘ না বৃষ্টি

এখানেও আকাশে মেঘ আসে কিন্তু বৃষ্টির জলধারা আনে না

কোন স্মৃতি, না কোন স্বপ্ন।

অদ্ভুত অচেনা বন্যা আকস্মিক অন্ধ করে দেয় নারীপুরুষের

সঙ্গোমের প্রতিবন্ধকতা। অফুরন্ত শোনিতপ্রবাহে মাটি ভিজে একাকার

আর সমস্ত অসাড় । দগদগে বৃষ্টি নামে বিদ্যুতেরও বেশী গতিবেগে...

বৃষ্টির ডানায় থাকে তখনও টকটকে লাল রক্তের দাগ

শুধু আকাশ যেন কোন সূত্রে কবেকার চেনা-

মিছিল করা স্মৃতিগুলো কিছুতেই তাল মেলাতে পা্রে না।


এই স্ংকেতের অনুবাদ যদিও অসম্ভব

পারলৌকিক স্তব্ধতা যেন ব্জ্রকঠিন স্তম্ভ...

দেখো! তোমাদের পবিত্র বৃষ্টি আসবেই আগামী

এই প্রত্যাদেশে আমি এক সূর্যদয়কামী।








বৃষ্টি আবীর


বৃষ্টি ফোঁটা পাঠিয়েছিল গোপন চিঠি

বসন্ত দিন আবীর মাখা পলাশ রেণু

অঙ্গ জুড়ে সঙ্গ দিল সিক্ত আদর

জলের চাদর, জল বিছানা বৃষ্টি নামে

শরীর বেয়ে, পাগলি মেয়ে

স্বপ্ন মাখিস অবাধ্য এক

মনের সাথে দিনে ও রাতে

মাতাল হাওয়া ভুলিয়ে দিল

নাওয়া খাওয়া

খুশীর ছোঁয়ায় জিড়িয়ে নিলি

শুধুই গেয়ে, দস্যি ছেলে।









ঘুমায়ে পড়েছে ধরা...

কোন এক শেষ রাতে এলোমেলো জীবনের শেষ জল রঙ

আকাশটা চিড়ে দিয়ে উল্লাস-এ ডেকে ওঠে বিদ্যুত

আজ আহ্লাদি বৃষ্টির মাতালপনায়...


কোথা থেকে উড়ে এল ভেজা সে ডাহুক

আনমনে দেখি জল ডানা টুপ টুপ

পাখি! সে আমার বড় একলা পাখি......

ঝড়ো হাওয়াতে আন্দোলিত বাগানের লেবু ডাল

পাখি ভাবে এই বুঝি ভেঙ্গে গেল বাসা

আঁকড়ে ধরেছে সে -'সতর্কীকরণ!'

কত কিছু দেখেছিল শুধু এই মন।

মন ভাবে এরই নাম বুঝি শেষ আশা

এই বুঝি নুয়ে এলো যতো ছিল ভাষা

ঝোড়ো ঝোড়ো তান্ডবে মুঠো মুঠো বরিষণে

এভাবেই প্রতিদিন লড়ে বেঁচে থাকা।







ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টিকে

আজ আমার খোলামকুচি মন

শুধুই আত্মসমর্পণ-

আলতো পরশ মেখে বৃষ্টিপাতে

শুকনো কালির পদ্য লিখি হাতে-

অতল খুঁজি বিলীন চোখে যেই আলো

আদল ধুয়ে রঙ্গীন ছবির ঘোর কালো।

শুন্য ঝুলির দাবি শুধুই রাগ করে

হৃদয় ভাবে রোষটা করে কার পরে।

আপন মুঠো করলে ফুটো

তখন কি আর মুক্তি মেলে?

ঘরের মধ্যে পর যে থাকে

নাড়ছে সে যে খড়কুটো।

তাই আমার পাপড়িভেজা মন

করে আত্মসমর্পণ......