সুধাংশুরঞ্জন সাহা
বৃষ্টি: এক
সেই যে কবে বৃষ্টি ভিজেছিলাম
তোমার সঙ্গে অসাবধানে
আজও মেঘ ডানা মেললে
দীর্ঘশ্বাসে ভিজে ওঠে চোখ ।
জীবনে এমনই ঘটেছে বারেবারে ।
#
সম্ভাবনাময় বৃষ্টিকথা
মেঘের বিদ্রূপে জর্জরিত করেছে জীবন
।
প্রতীক্ষার বলয় প্রসারিত হয়েছে
শুধু ।
কোন সহজ যোগ বিয়োগেই মেলাতে পারি
নি
জীবনের সেই জটিল গণিত ।
#
যদিও জীর্ণ সেতু আদ্যোপান্ত ভিজে
গেছে
বৃষ্টির প্রাবল্যে ।
তখন তো বুঝি নি, বৃষ্টিই
আমার প্রথম প্রেম !
আজ এতোদিন পরে একাকী ঝড়ের রাতে
বৃষ্টির দাপটে কাঁপতে কাঁপতে
একা ঘরে ঢুকে বুঝি ভালোবাসার
প্রকৃত মানে ।
বৃষ্টি: দুই
সমস্ত মেঘ উড়িয়ে
অনেক দিন পর এলে, কুয়াশাকণ্যা !
ছাতিম ফুলের ঘ্রাণ মেখে
শীতের তুমুল দুপুরে এলে একাকী ।
#
সন্ধ্যা গাঢ় হলে ফিরে যাবে ফের ।
তবু তোমার ইতস্তত ডানায়
মুছে নিচ্ছি ঝোপের আড়াল
কুয়াশায় ভেজা আমাদের প্রিয় কথামালা
আর আলিঙ্গনে ঢুকে পড়া খরা।
#
বস্তুত তোমার চোখে
বৃষ্টিভেজা ফলন্ত গাছের লাজ দেখে
আমার চলার পথ চমকে চমকে ওঠে ।
বৃষ্টি: তিন
রোদ-বৃষ্টির একগাল মিহি হাসিতে
সম্পর্ক কি বদলায় ?
নাকি, বৃষ্টির প্রশ্রয়েই সম্পর্ক ঘন হয়
বেশি !
এইসব নানা প্রশ্নে
ঘর তছনছ করি,
কলমের কাছেই গচ্ছিত রাখি বাজি ।
#
দুহাত তুলে প্রার্থনা করি : আয়
বৃষ্টি,
আয় !
ধুয়ে দে মনের যত কালি ।
বৃষ্টি: চার
আষাঢ়ের প্রথম বৃষ্টির রাতে
বেজে উঠল তোমার কন্ঠস্বর ।
মনে হল একটা নীল পাখি সাদা আকাশে
ডানা মেলে উড়ে এলো ।
পাখিটার চোখে ঘুম নেই
আছে বৃষ্টির স্বরলিপির টুপটাপ
আর জেগে থাকার পরিযায়ী ঘুঙুর ।
বৃষ্টি: পাঁচ
গঙার একূল ওকূল দুকূল জুড়ে কান্না
।
বৃষ্টি ভিজে ভিজে ফিরে যাচ্ছি
ঘরে....
এইমাত্র যাঁকে হারালাম, তিনি আমার মা ।
আমার আলোয়, আমার
অন্ধকারে কোথাও
কেউ রইল না আর ।
আমি আজ নিস্ব, একা ।
দু'চোখের বৃষ্টিতে
শুধু সব হারানোর বিষাদ ।