পিয়াংকী
বারিষ
(১)
আচমকাই
শোরগোল ,
শ্রাবণ নেমেছে রাস্তায়
মায়ের
'দুমুঠোযাপন' ভিজে সপসপে
বাবা
তখনও সেলাই মেশিনে মেঘ জুড়তে ব্যস্ত
সুতোর
অভাব আমাদের দেশে বরাবরই ছিলো
যত
দিন এগিয়েছে সমানুপাতে বেড়েছে তার অনটন
তবুও
কোথাও যেনো হতদরিদ্র সংসারে লেগে থাকতো আরো আরোও ভালোবাসার হাহাকার ।
একদিন
আষাঢ় জমলো ঘরে
ঘোরতর
জলে দ্রবীভূত হচ্ছে আমাদের দেশ
উড়ে
যাচ্ছে মাথার ওপরে রাখা ভাঙ্গা টিনের ছাউনিটুকুও
ক্ষয়ে
যাওয়া অবশিষ্ট কাঁধটাতে সমাজ তুলে নিয়েছে
জীবন্ত কোজাগরিকে
আমরা
সবাই হাঁটছি ,
খালি পা ,
নূন্যতম
নুনটাও শুষে নিচ্ছে শরীর
একটুকরো
কাপড়ে বেঁধে রেখেছি সাধের ধর্মগ্রন্থ
অকাল
বর্ষা এলো হঠাৎই
ধুয়ে
গেলো সমস্ত পৃষ্ঠা
বিয়োজনের
ভয়ে আমি আজো খোলা মাঠে দাঁড়িয়ে ধর্মগ্রন্থের পাতা শুকাই ।
বারিষ
(২)
আজন্মকাল
...
একপশলা
বৃষ্টির অপেক্ষায় তাকিয়ে আছে দেহ
দিন
মাস বছর কেটে যাচ্ছে কালের নিয়মে
স্নানঘাটে
একমাত্র জলের শব্দই প্রকট হয়ে উঠছে
ক্রমাগত
ডুবে যাচ্ছে প্রেমিকের শরীর
একটু
একটু করে অদৃশ্য হচ্ছে জীবন
অথচ
জলহীন খরায় ভুগছে বর্ষাঋতু
জুনের
প্রথম বর্ষা এলো আজ
নরম
আদুরে সোহাগে ভিজে গেলো প্রকৃতি সমাজ সংসার ভালোবাসা
স্নানঘাটে
বসে ছেলেটা এখনো পা দাপড়ায়
ভিতরঘরের
আগুন নেভেনি ওর
দমকল
এসে ফিরে গেছে
খবর
দিয়েছে বৃষ্টিকে
আমি
অসহায় পাঠক ।
পূর্বজন্মের
বাস্তবকে রঙ্গিন দুমলাটের উপন্যাসে কিনি ।
বারিষ (৩)
সেদিন
বৃষ্টি এসেছিল
পোড়া
ঘায়ে মলমের মতো এসেছিলে তুমিও
আকাশের
এককোণে হঠাৎই সূর্যটা দ্বিগুণ তেজে জ্বলেও উঠেছিল সেদিন ।
আমি
জানতাম, তোমরা বরাবরই প্রতিপক্ষ ।
একথা
অবশ্য বৃষ্টিও জানতো
তাই
শুধুই হেসেছিল একটু
সঙ্গমের
ঋতুতে বরাবরই আমি বাড়াবাড়ি রকমের রজস্রাবে
ভুগি
পবিত্র
শরীর এঁটো হয় না কখনো
অথচ
আমার বাড়িরই পুকুরে মাছচাষ করে অজানা অচেনা কেও
একদিন
দেখি,
সারা শরীরে কিলবিলিয়ে উঠছে
অগুণতি মাছ
আমি
পিচ্ছিল হয়ে উঠছি ক্রমশ
ততদিনে
ভাতের পাতে নুনের মতো অপরিহার্য হয়ে উঠেছো তুমিও
তারপর
সব ঝাপসা ...
আজো
চোখ খুললে দেখি অক্টোবরের অসময়বৃষ্টি দাঁড়িয়ে আছে দূরে
তোমার
আমার সহবাসী শরীর ধুয়ে যাচ্ছে ওর প্রতি ফোঁটা আলোজলস্নানে !