তারিক-উল ইসলাম
বকুলব্যাকুল
আজও বৃষ্টি হবে এবং আজও তোমার আসতে
দেরি হয়ে যাবে।
আসতে চাইবে খুব দ্রুত, কিন্তু
আসতে পারবেনা।
কাঠবকুল ছুঁয়ে গড়িয়ে পড়া
জল-জলধ্বনি শুনবে না কেউ।
হাঁসের পাখা থেকে ছড়িয়ে পড়া
জলসিম্ফনি থাকবে
শুধু তোমারই মধ্যে।
বকুলব্যাকুল- এই শব্দসন্ধি যেন আজ
তোমাকেই মানায়।
হাঁসপাখা জলসিম্ফনি, তাও।
বৃষ্টি আকাশের কান্না নাকি
আনন্দ-সুর,
নির্ধারণ করা যাবে না।
যেমন নির্ধারণ করা যায় না
বিসমিল্লাহ খাঁর সানাই
আনন্দ নাকি বেদনার স্বরলিপি।
ঝড়-বাতাসে কাঁপতে থাকা নারকেলের
চিরল পাতায়
ছড়ানো অনিশ্চয়তা আরও দীর্ঘ হবে।
চোখে ভাসবে আমার চোখ।
নেমে আসা অন্ধকারে ছড়িয়ে পড়া
আলোদ্বীপে
লণ্ঠনের সলতেয় ভীরু সময় কাঁপতেই
থাকবে।
বারান্দায় কপাল-কপোলে অণু অণু জল
থমকে
আটকে যাবে।
বোঝা না বোঝার, দেখা
না দেখার
মেঘ ময়ূরের স্বতন্ত্র অনুভব।
আজও বৃষ্টি হবে এবং আজও তোমার
আসতে দেরি হয়ে যাবে।
আসতে চাইবে খুব দ্রুত কিন্তু আসতে
পারবেনা।
বাজবে বিসমিল্লাহ খাঁর সানাই।
পথজুড়ে জল গড়িয়ে পড়বে জলে।
পড়বো বলে ধরে থাকা বই বিছানার পাশে
টি টেবিলে পড়ে যাবে।
উড়বে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা।
আজ বৃষ্টিদিন। কাঠবকুলের গন্ধ
ছড়িয়ে যায় ঘরে।
মেঘ-পল্লবে আজ পাঠ্য শুধু তুমি।
জলের স্বভাব জলই জানে
এই যে আমার দিন কাটে না রাত কাটে
না;
কোথায় যেন থাকি!
জলের স্বভাব জলই জানে দুয়ার আঁটে
না;
জলের ছবিই আঁকি।
ও জল নদী নিরবধি আকাশ সখা যদি
থমকে যেও না।
মেঘ-বিদ্যুতে জেগে থেকো জাগিয়ে
রেখো
হাতটি ছেড়ো না।
থাকি জেনো তোমার কাছেই ও প্রণতি
ছায়ার মধ্যে ছায়া
তোমার সাথেই হাঁটি জেনো খুব আরতি
খুব কম কি মায়া!
জলপাতা পক্ষ
জল লাফিয়ে পড়ে জলে। ঝরে গাছের
পাতারা।
চায়ের কাপে টের পা্ই উত্তাপ।
চশমাটা কেঁপে ওঠে।
যারা হাত ধরেছিল তাদের মুখগুলি আজ
ঝাপসা।
যারা হ্যাঁ-না কিছুই বলেনি তারাই
হয়েছে সঙ্গী।
বিরুদ্ধ স্রোতেও তারা দেখি আকাশ ও
সূর্যের ঘরবাড়ি।
রোদ আর ছায়ায় ওড়ে মায়ের মেলে দেয়া
শাড়ি।
জলের জানালায় হ্যাঙার-আকাশ।
তার নিচে দরোজায় দাঁড়িয়ে রয়েছেন
মা।
স্বপ্নটা আজ আবার দেখলাম। ভেঙেছে
শ্লেট,
পেনসিলটাও।
পারছি না লিখতে। নতুন শ্লেট হাতে
মা বলেন,পারবেই তো।
লিখি ফের।
কাঠের বাক্সে ন্যাপথলিনের গন্ধমাখা
শার্ট,
সরে না মন।
আসে নতুন জামা। লাল-সবুজে মিশে
থাকা হলুদ। আছে নীলও।
নিজেকে রাজা-রাজা মনে হয়। আমার
মা-হ্যাঁ,
আমার রাণীমা
বলেন, রাজাই
তো। রাজপুত্র তুই আমার।
জল বাতাসের মতো ঘূর্ণি ছড়ায়। কাঁপে
গাছের পাতারা।
ছিটকে পড়ে চা।
জায়নামাজ গুছিয়ে রাখতে রাখতে বাবা
ফেরালেন চোখ
- এই স্বপ্নও দেখলাম সেদিন।
মাথায় বোলাতে বোলাতে
তিনি বলছেন, হাত-মুখ
ধুয়ে আগে খেয়ে নে বাবা।
স্বপ্নে মা আর বাবাকে আজকাল
প্রায়দিনই দেখি।
জল আকাশকে আকাশ করে রাখে। ঝরে
গাছের পাতারা।
পুকুরপাড়ে পাখিদের আসা-যাওয়া।
আজ পাখি ধরতেই হবে। পারি না ধরতে।
মা বলেন- আজও পাখি চলে গেল!
পাখি ধরবো বলে দিনের পর দিন
নিরন্তর চেষ্টা।
পাখি ধরা হলো না।
মা বলেন- পারবি, একদিন
ঠিকই ধরতে পারবি।
পারলাম না। মা-ই একদিন পাখি হয়ে
উড়ে গেল।
মাকে আর ছুঁয়ে দেখতে পারলাম না।
নাগরিক ধোঁয়াশার চিত্রকল্প নয়, পাখি,
আকাশ তারা ছিল তার প্রিয় বিষয়।
মা আজ নিজেই আকাশ, তারা।
চিরায়ত গল্পের সারাৎসার।
আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকি, তারা
দেখি, বলি- কোনটি আমার মা?
কোথায় বাবার জায়নামাজ?
পাতাগুলি সবুজের নিচে
দীর্ণ-বিদীর্ণ। আর জলের সংসারে জল-ঢেউ।
থাকেনি যারা, ছাড়ি
তাদের হাত।
রই আমি মা আর বাবার চোখের দিকে
তাকিয়ে।
খুঁজি তারা আর পথ-পদচিণ্হ। হাঁটি
একা।