শুক্রবার, ২১ জুন, ২০১৯

সবর্না চট্টোপাধ্যায়


সবর্না চট্টোপাধ্যায়

বারান্দা

শহরতলির হালকা দুপুর শুকনো দেয়াল ঘড়ি
রাত বাড়লেই স্বপ্নবিমুখ একপাতা ঘুমবড়ি
বাঁচব বলেই বাঁচছি কেমন ইচ্ছেগুলো ফিকে
উড়ছে জীবন হাওয়ার সাথে ছাইভস্ম লিখে 

একফালি রোদ বারান্দাতে কলমকারি চালে
হাসতে হাসতে ছড়িয়ে গেল টোল পড়া সে গালে
মানিপ্ল্যান্টে হাত রেখেছে ফিনফিনে তার ডানা
সবুজ ঘাসের ছোট্ট ফড়িং শুনবেনা আর মানা!

একটা ছিল হারিয়ে যাওয়া একটা শহর ছেড়ে
দুপুরগুলো কলার পাতায় ভাতটুকু দেয় বেড়ে।
একচিলতে বারান্দা তার বাড়িয়েছে বন্ধুতা
আসন বোনা ছুঁচের ওপর যেমন ঝাঁপায় সুতা

খুলব যখন যত্ন করে ফিতেয় বাঁধা চুলে
দেয়াল ঘড়ির শুকনো কাঁটা উঠবে যেন দুলে
লেখার খাতায় ভাঙছি একা গোলাপ ফুলের বোঁটা
রেলিং যেমন আটকে রাখে প্রথম বৃষ্টি ফোঁটা!








অসম্ভব

সন্ধে নামে অচেনা সেই ঘাটে
হলুদ পাখি ফিরছে একা গাঁয়ে
বাছুর এসে মুখ দিয়েছে বাঁটে
সূর্যডোবে জনান্তির পায়ে

নৌকাডুবি রুপোলি কার চোখে
অস্তাচলে তুলছে মাঝি পাল
যে যা বলে বলুক কিনা লোকে
পায়ের নীচে ভর্তি মুঠো চাল

জাহাজ বোঝাই সোনার ঘড়া ভেড়ে
সন্ধে আলো জলের বুকে লাল
পাতায় পাতায় লিখব ঘটা করে
বছর মাস তারিখ আর সাল

এই যে দুজন সন্ধ্যা তারা দুটো
ভিজব বলে ঘর ছেড়েছি একা
নামবে যখন আষাঢ় মেঘ চিরে
ঠোঁটের কোণে প্রথম জলরেখা

একটা ছবি কালো তরুন চোখে
পথের ধারে সন্ধ্যামনি ফোটে
হাতের মুঠো বাতাস ভরে রাখে
অসম্ভব! একটা দুটো ঘটে...








বর্ষা

হঠাৎ যখন বৃষ্টি নামে ভিজতে থাকে একলা শহর
অন্ধকারের রাস্তাগুলো ঝুপরি তোলা চায়ের দোকান
সানসেটে কাক বৃষ্টি ভেজা। ভিজতে থাকা প্রথম প্রহর।

ভিজতে থাকি ভিজতে থাকি, বটের ছায়া দুইটি পাখি
দমকা আসে ঝড়ের মতো, লালচে ধুলো অসংযত
জলের কাছে মাছের ভাষা, ভিজতে থাকি ভিজতে থাকি

একমুঠো মেঘ গঙ্গা ধারে, জগদ্দলের ঘাট পেরিয়ে
হাওয়ায় দুটো চড়ুই পাখি, উড়তে উড়তে ষাট পেরিয়ে
হাওয়ার সাথে মেঘের দেশে, সব ঠিকানার চোখ এড়িয়ে

এমন যদি সত্যি হত, ভিজতে থাকা আমার শহর
ষাট পেরিয়ে ঘাট পেরিয়ে, ঝড়বাদলা মাঠ পেরিয়ে
ভুল গুলোকে শুধরে নিত। খোঁপায় সাদা ডবল টগর!

অন্ধকারে ঘাড়ের কাছে, শ্বাস ফেলে যে ক্লান্ত পাখি
চোখ ধুলোতে ঝাপসা হলে, দাঁড়িয়ে থাকি দাঁড়িয়ে থাকি
সব ভুলেছি এমন ঝড়ে, চড়াই দুটো ঝগড়া করে

সর্বনাশী জলের তোড়ে, বৃষ্টি ভেজা শহর জুড়ে
হঠাৎ যদি বর্ষা আসে, ‘একটা ছাতা সঙ্গে রেখো
ভিজতে থাকা সন্ধে গুলো ঝলমলিয়ে উঠবে দেখো।

জমবে আবার রাস্তাগুলো ঘর বাঁধবার স্বপ্ন নিয়ে
বৃদ্ধ শহর কাঁপবে একা ঝড়ঝঞ্জাট সঙ্গে নিয়ে
হয়ত সেদিন চড়াই দুটো সামনে ভেজা বেঞ্চি পাতা
ঘাড়ের ওপর অনেক ধুলো ঝমঝমিয়ে ভিজছে খাতা

রাস্তাগুলো হারিয়ে যাবে ভিজতে থাকা ধুলোর খাঁজে
একটা দুটো হিসেব যদি মিলত ঠিক নিজের কাছে!