শুক্রবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

সম্পাদকের কলমে



সম্পাদকের কলমে

আশ্বিনের মেঘের বাইচ দ্রুত চলমান
একাংশে সেও স্থির স্তম্ভিত
বাতাস বিশ্বব্যাপী বিস্তারিত
লিখিত পৃষ্ঠার প্রভাব
ভাষা ও রীতি প্রসঙ্গ সম্পর্কিত ......

(হাসিদা মুন)


সাহিত্যের বিভিন্ন অঙ্গন, কাব্য রচনা এবং প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের মধ্যে একটা Ecocritics সংযোগ টানা হয়। যা হচ্ছে Interdisciplinary, এ থেকে সাহিত্য এবং কাব্যিক পরিবেশের উপরে নানা ধরণের গবেষণা করা হয় যেখানে বর্ণিত গ্রন্থে বিশ্ব সাহিত্যের পণ্ডিতরা পরিবেশের উপর প্রভাব, উদ্বেগ, উত্থান পতন, উৎকর্ষ সাধন এসব দিক নিয়ে বিশ্লেষণ এবং সাহিত্য প্রকৃতির বিষয় সম্পর্কে আচরণ লক্ষ্য করে বিভিন্ন উপায়ে নিরীক্ষাধর্মী পরীক্ষা পর্যবেক্ষণ করে থাকে

ডারউইন যেমন গবেষণা করতে করতে সমুদ্রযাত্রা শেষে তিনি লিখতে শুরু করলেন মানব প্রকৃতির উপর বিবর্তনীয় প্রভাব প্রসঙ্গে  জীববিজ্ঞান তথা বিজ্ঞানের ইতিহাসে এক  আলোচিত অধ্যায়  'বিবর্তনবাদ' এই  বিবর্তন শুধু  শ্রেণীগত বা কাঠামোগত  প্রকারভেদেই হয়ে থাকেনা, এর সাথে সাথে বদলে যায়   সাংস্কৃতিক ও জৈবমানসিক দিক এই   উভয় মৌলিক গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গির মিথস্ক্রিয়ায় পরিবেশের   পারিপার্শ্বিক অঙ্গন  যেমন  বদলে যায়, তেমনই  বদলে যায়  শিল্প সাহিত্য - সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলও

অভিযোজনের মাধ্যমে পৃথিবীর সকল প্রাণীই কোটি কোটি বছর ধরে তাদের পূর্বপুরুষ থেকে বিবর্তিত হতে হতে আজকের অবস্থানে এসে পৌঁছেছে। অর্থাৎ সবকিছুই ঘটেছে প্রাকৃতিক নির্বাচনের ভিত্তিতে। তেমনি সাহিত্যও দেশ কাল ভৌগলিক কারণে বিবর্তনের ধারায়  সমুদয়  বিবর্তিত হচ্ছে সময় ও যন্ত্রের সাথে পাল্লা দিয়ে পাল্টে যাচ্ছে বিশ্বের অদিতি এবং এই পাল্টে যাওয়াটাই স্বাভাবিক পরিচ্ছদে আসছে নতুন স্টাইল, কাপড়' ধোবার এবং ইস্ত্রি করার সময় বাঁচাতে এসেছে জিন্স - টি শার্ট কাব্যে কেন নয়? মেদহীন হতে যদি 'জিমনেশিয়াম' আশীর্বাদ ডেকে আনে তেমনই এক - দুই লাইনের 'কবিতা'ই বা  কেন নয়? সাহিত্য গবেষণার ক্ষেত্রে নিজস্ব ধরণের গঠনধর্মী শিল্পী ক্ষমতা হচ্ছে আমাদের কবিদের সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টিএকজন কবি নিজেকে, একটি জায়গায় যেখানে নতুন শব্দের ধারণা এবং ধারনণার সঙ্গে প্রস্ফুটিত হয়ে ওঠেন কাব্যিক রচনা শৈলী নিয়ে, মনে করা যেতে পারে কবির নিজস্ব দর্শন বাস্তবের দোলাচলে যা একটি সংমিশ্রণের নতুন জংশনে এসে মিশছে তাঁকে ভালবেসে প্ল্যাটফর্ম দিন

প্রত্যেকেরই একটি করে 'মন' আছে, এবং লক্ষ লক্ষ তাদের উত্তেজিত অনুভূত অনুভূত হয়েছে, তাতেই তারা ভর করে একটি কবিতা লিখতে চেষ্টা করেছেন বা অন্য একটি সুর শৈলীতে একটি 'বিট স্টাইলে' গেয়ে উঠেছেন একজন সম্পাদকীয় লিখে নিজেকে সুস্পষ্ট প্রকাশ করার জন্য চেয়েছেন এমন করে নিজেকে প্রকাশ করার প্রয়োজন মানুষের অবস্থানের বিশেষ অংশ। কারণ শিল্পী তাঁর বিশেষ্য দিয়ে 'বিশেষের' দিকে যেতে চায় যা কিনা এক জীবনের লক্ষ্য

একজন কবি হতে হলে তাঁকে এই লক্ষ্যে নিপীড়নের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পক্ষপাতিত্ব করতে হবে। সেক্ষেত্রে সে 'স্লোগান' লিখবে সেটাও 'কবিতা' সমগ্র ও সমসাময়িকভাবে  হৃদয়কে দেখুন এবং লিখুন এটা অবশ্যই জনসাধারণের শিল্প যদিও একটি ব্যক্তিগত একক প্রতিফলন, বিজয়ী গাঁথা বা জীবন্ত অনুস্মারকযা তিনি কি করে তোলেন আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং অবিচ্ছেদ্য সব আলেখ্য কবি মানুষ - কল্পনাপ্রবণ মানুষ। এর মানে, কিছু স্তরে, তাদের কবিতার জন্য একটি ক্ষুধা আছে, কবি তাদের হিসাবে শ্রোতা বা পাঠকদের হিসাবে তাঁর আত্ম অনুভূতিকে বিক্রি করেন না বইটির ইতিহাস গ্রন্থপরিচয়, সাংস্কৃতিক ইতিহাস, নতুন নান্দনিক ধারনা উপস্থাপন, সাহিত্য ইতিহাস, এবং মিডিয়া তত্ত্বের পদ্ধতিগুলির উপর ভিত্তি করে আন্তঃশিক্ষামূলক তদন্তের ক্ষেত্র হিসাবে পাঠক সেসব জানার জন্য ক্রয় করে থাকেন রোম্যান্টিসিজম বইয়ের ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় তাদের বস্তুগত দিকগুলির সাথে যৌনতার ধরনগুলিও সংযোগ করতে চায়। সেসব সেই পাঠকের রুচি অনুযায়ী আমাদের সাহস, আমাদের জ্ঞান এবং আমাদের শিক্ষা দীক্ষা, আমাদের সমবেদনা, আমাদের দেশের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা। বিকৃত কিছু লেখক সবকিছুকেই ক্ষুদ্রতর করে তোলে, যা অনাকাঙ্ক্ষিত কবির কবিতাটির কি প্রকাশ্যে কোন স্থান নেই? এখন তো অবারিত প্রকাশ করার জায়গা ইন্টারনেটের সফল পদচারণায় কাব্যকথাও যেন কোথাও কোথাও জলবায়ু পরিবর্তনের বৈরিতার মতো কেবলি আবেগময় চটুল পঙক্তিমালায় পরিণত হতে বসেছে।

প্রকৃতিতে আবহাওয়ার ছন্দপতন সত্ত্বেও মধ্য আশ্বিনের পর থেকেই হয়তো স্বচ্ছ শিশির ভিজিয়ে দেবে তৃণরাজি, বৃক্ষরাজির সবুজ পাতা আর বৈচিত্র্যময় মাটি। মৌসুমি ধুনকারেরা দল বেঁধে নেমে পড়বে লেপ, তোষক, জাজিম ইত্যাদি শীত নিবারণী সামগ্রী বানাতে। প্রভাতী শিশির মনে আনবে অপার্থিব প্রফুল্লতা ও সজীবতা। কোমল রূপালী জোছনায় শিহরিত হবে মানবমন। এই মাসের আরেক লক্ষণীয় দিক হলো, বাংলা পঞ্জিকায় ৩০ দিনের মাস এই আশ্বিন মাস থেকেই শুরু হয়। প্রথম পাঁচটি মাস একত্রিশাহয়ে থাকে। মৌসুমি বায়ুপ্রবাহ এখনো শুরু হয়নি। তবে অনেক ব্যত্যয়ের পরও আহ্নিক গতি ও বার্ষিক গতির ভারসাম্য বজায় রাখার চিরন্তন নিয়মে

ক্রমশ দিনের পরিধি ছোট হয়ে আসছে, বড় হচ্ছে রাত। এ পরিবর্তনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়ে উঠুক মানব সভ্যতা, সাহিত্য প্রতিভা ও সেইসাথে জলবায়ু বাংলার বঙ্গাব্দের ষষ্ঠ তনয়া এই আশ্বিনেও স্নিগ্ধতার পরিপুষ্ট আমেজের যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। বিস্তৃত কাশবনেও কেন জানিনা - প্রাণহীনতা বিরাজ করছে, বিস্তীর্ণ জলাশয় ভরাট হয়ে ইষ্টকের শহর গজিয়ে ওঠায় কাশবন বিলুপ্ত প্রায় তারপরও বাংলার আকাশ আর মাটিকে ঘিরে রূপ বদলের অনাড়ম্বরও আয়োজন শুরু হয়ে গেছে। কাশবনে উচ্চিংড়ের সাথে ছুটোছুটি করা মন কিংবা বিভিন্ন রঙের ঘুড়ি উড়িয়ে সাদা মেঘ, নীলাকাশ ছোঁয়ার বাসনাকেই যেন জানান দেয় যান্ত্রিক রাতের অবসানে কপালে কমলা টিপ পরে বৃন্তচ্যুত হয়ে মাটির বুকে ঝরে পড়ে শিউলীফুল বর্ষার বিস্তীর্ণ পানির আধারে জন্মানো শাপলা পদ্ম ফুল এখনো সৌন্দর্য বিলাবার চেষ্টা করে চলছে আগস্ট থেকে শুরু হওয়া বন্যার পানি দুর্গত এলাকার জন্য অভিশাপ হয়ে দাঁড়ালেও পাট 'জাগ' দেয়ায় বেশ কাজ দিচ্ছে জমে থাকা পানি আশীর্বাদ হয়ে বৈকি। কৃষককূল অর্থনৈতিক ফসল পাট পচিয়ে আঁশ ছাড়াতে পেরে বেশ স্বস্তি বোধ করছে গ্রাম গঞ্জে এ মাসে বরষার ঘোলাজল স্থির হয়ে পানির উৎস ধারা স্বচ্ছ থেকে স্বচ্ছতর হতে থাকে।

এক্ষণে  আমাদের পাঠকদের জন্য স্বচ্ছ বার্তা তবে কি হতে পারে? এই পর্যালোচনাতে উদ্ধৃত প্রথাগুলির জন্য প্রমাণের স্তরকে শক্তিশালী করতে, কবিতার সাইটগুলিকে আন্তরিকভাবে তাদের প্রকাশের মূল্যায়ন করতে হবে এবং তাদের ফলাফলগুলি প্রকাশ করার জন্য উৎসাহিত করাও উচিত। পঠন দক্ষতা অর্জন করতে হবে না ঠিক ঠাক পড়েই - 'জটিল','কঠিন' শব্দে ভূষিত করা ঠিক নয় পর্যালোচনা করা নিবন্ধ পড়া এবং বিশ্লেষণ শুধুমাত্র ভাল পড়ার দক্ষতা, ভাল বোঝার দক্ষতা, ভাল শোনার দক্ষতা শিল্পের জন্য দরদ তৈরি করা, লিখবার পাশাপাশি ভীষণ প্রয়োজন। আমরা এই মাসের পর্যালোচনা পরিচালনা করার প্রাক্কালে নির্দিষ্ট প্রশ্ন করতেই পারি বিশ্লেষণ এবং পর্যালোচনা কি সামাজিক নির্দেশিকা নয়?

সবশেষে সারসংক্ষেপে আমি বলতে চাচ্ছি আপনারা পাঠকেরা সমস্ত নির্দিষ্ট কাব্য চর্চা উদ্ভাবনের জন্য এবং এর ক্ষত প্রতিরোধে অংশগ্রহন করুন এবং প্রমাণের ভিত্তিটি বাড়িয়ে দিয়ে - ভুল, ত্রুটি, ব্যঞ্জনা সৌকর্য, শৈলী বাড়াতে যত্নশীল হোন নয়ত নতুন লেখক নতুন কবি দাঁড়াবে কোথায়? পাঠ করুন আন্তরিক হয়ে পড়তে কি শরীরের ব্যায়ামের মতো কসরত করা লাগে? তবে যে এতো কষ্টসাধ্য মনে হয়? ......

হাসিদা মুন