শুক্রবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

শাকিলা তুবা


শাকিলা তুবা

প্রেম চাইনি অপ্রেমের দিনেও

এই দেখো আয়নায়
একটা ট্রেন হুঁশ করে চলে গেল
গন্তব্যের ইশারায়...
চোখ থেকে লাফিয়ে লাফিয়ে কাশবন
নির্দ্বিধায় পার হল
সিনাইয়ের চূড়া;
কয়েকটা খাঁড়ি।

ট্রেনটা ফিরে এল না অথচ
রেললাইনের স্লিপার থেকে পাথরগুলো
পায়ে পায়ে হেঁটে হেঁটে এল
কাশবনের কাছে
এবং অতঃপর...
আয়নার পারদটুকু
খেয়ে ফেলল দ্বিধাহীন।






চব্বিশ ডিগ্রী ছয় সেকেন্ড

ফিরিয়ে দিয়ো আংটি, জলকাব্যের ঘর
শরতের দুই চোখে অগাস্ট কাশবন
উদযাপন হোক পানীয় দিন,
জলীয় উৎসব।

আরো আরো দূরে, যতদূর যাবে দৃষ্টি
দ্বিতীয় মৃত্যু খুঁজে নেবে
রক্তের তেতো ঘুণ
নবান্নের আগমন।

স্পীডবোট ভেসে যাবে, ছিন্ন রুমাল
মুখ মুছে দুঃখ হয়েছিল জমা যত
শুষে নেয়া বাতাসে একবচন শোক
ছায়ার মরচে ঢাকছে তমালের বন।

দেয়াল এভাবেই দাঁড়িয়ে থাকে ঠাঁয়
আঙ্গুলে আঙ্গুলে আংটি
জলঠোসা বদল, এখনো তবু
ফেরারী প্রাণে জাগে দ্রাঘিমার উৎসব।








আ বাস জার্নি টু হোম

প্রতিটা বাস স্টপেজে
আমার একজন করে প্রেমিক থাকে
বাসে উঠবার পর আমাকে অধিকারভুক্ত দাসীর মত
ওরা আমার পেছনে এসে দাঁড়ায়
আমার ঘাড়ের মাংসে আঙ্গুল ডুবিয়ে দেয় আর
উরুর পেছনে ওদের উঁচানো স্টেনগান
ঠেকিয়ে রাখে।

বাসের ঝাঁকুনীতে আমি ঘুমিয়ে পড়ি
আমার চরম উল্লসিত শরীর
রাগমোচনে একাকার হতে থাকে।

বাস থেকে নামবার আগে
একটা সিটে রেখে আসি
আমার শরীর বিচ্যুত তাল তাল মাংস
আমার প্রেমিকগণ খাবে বলে।
পৃথিবীর সকল
মাংস-হাড্ডি-মজ্জা তো আসলে
ভোগ দখলের, কে না জানে!

বাস থেকে নেমে আমি হেঁটে যেতে থাকি
পরবর্তী প্রেমিকের দিকে; এক সমাদৃত দিন থেকে
আমার আরেক সমাদরণীয় দিনের দিকে।





১ ২ ৩ ৪  .......

আঙ্গুল জুড়ে দেখো
জরীর খরতাপে
পুড়ছে কজনা
আঙুল খুলে দেখো
কিভাবে তারা উজানে যায়
পরস্পরের জড়াজড়ি
সম্প্রীতিতে।

বদলে গিয়েছে এই শরতের গতি
দৌঁড়ে চলে গেছে আকাশ
ছোট সাম্পানে ভেসে
টুকরো মেঘগুলোই এখন সঙ্গী শুধু
মার্বেল রঙা গণিকালয়ে
হুড়মুড়িয়ে বাড়ছে ভিড়।

কিছু কিছু মানুষ নিঃশব্দে খুন হয়,
খুন হয়েও খুশবুদার হয়ে বাঁচে
নিরাপদ দূরত্ব নিয়ে খুনী
ভাব করে ভালবাসে।

জাজ্বল্যমান মিথ্যার উপর
একটি মানুষ মৃত্যুমুখি
আলোর নীচে সহসা পাখার ক্ষয়, অথচ
নির্বিঘ্নে চলে ঘাতক ও নিহতের মুকাভিনয়।

শরীরে জন্ম নেয়া কয়েকটি মীরের কাজ
আমাকে অ-সুর হতে বাধ্য করে।






পথের দেরী

যেখানেই যাই শণের নুড়ি
তুলোর বুনটে ধুসর রাত
তারপর চলে গেছে কতকাল!

গজনীর সুলতান ছুঁড়ে দিয়েছিল কবে
কণ্ঠহার; ছুঁড়ে দিয়েছিল মসনদ।
কবে যেন সকালটা
নাগ হয়ে উঠেছিল ফোঁসফাঁস ছোবলে
সেই থেকে ফের শুরু।

জলের উপর শবাসন
সয় না জলশৈবাল
কুমিরে তাই টানছে রাশিফল
শুক্র থেকে জাতক চলে যাচ্ছে অস্থির বুধে
ধনুক বাঁকা রাত টম এন্ড জেরী খেলে একমনে।

যেখানেই যাই অযথা কালক্ষেপণ
অমানুষের মিছে পূজো পেতে পেতে
দেরী হয়ে যায় খামোখাই।






বক্রশৃঙ্খল

মাহিন বড়ুয়া জানতে চেয়েছে,
তুমি কি সত্যকে ভয় পাও?’
কোন সত্য? মিথ্যে দিয়ে যা আড়াল করা?
সত্য এক ঘণ বনের মিথজ রোদ,
আলোময় দিক যাপনে নিবিড় প্রাপ্তি আর
উতল শান্তির মিঠে আয়ুর্বেদ বলপ্রদক।

এরপর আমি পৌঁছে গেলাম
সূর্য যেখানে মেঘ ভাঙ্গে জ্বালাময়
আশ্চর্য জল চুঁইয়ে পড়া রেখায় শান্তিকে চিনলাম
মিথ্যে তবে মিছে-সত্যের সাথে ডোমঘরে যাক।

বড়ুয়াকে বলে দিলাম,
সত্যের খোঁজে বোধিবৃক্ষের কাছে যেও
সেখানে গণিকার গোড়ালী বেয়ে নামছে
ধ্যানমগ্ন বঁধুর তরল চোখ; অমিয় সত্যসুধা।