শুক্রবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

মহুয়া দাশগুপ্ত


মহুয়া দাশগুপ্ত

বিষাদ

মেহেফিল সেজে ওঠে,
আকাশে ঘনিয়ে আসে মেঘ!
বৃষ্টিনুপূর বেজে যায় ,যেন
গওহরজানের সুরেলা স্বর !
আকাশেরও নেশা হয়,
প্রমত্ত ঈশান কোণ থেকে
ছুটে আসে বিষতীর,
আকন্ঠ বিষাদ সুরা গিলে,
জমজমাট মেহেফিলে
রক্তাভ ওড়নার আড়ালে
বৃষ্টিমেয়েটি মনে মনে বলে
আগলে জনম মোহে বিটিয়া না কীযো!







রূপকথা

একশো বছরের ঘুম থেকে
রাজকন্যে এবার জেগে উঠবে,
উন্মুক্ত হবে পদ্মপলাশ নেত্র,
গোলাপের পাপড়ির মতো ওষ্ঠে
রাজপুত্র এঁকে দেবে
দুখজাগানিয়া,ঘুমভাঙানিয়া আদর!
রূপকথার দরজা বন্ধ হবে এইবার
‘’....and they live happily ever after!"
স্লোগান তুলবে মুখ্যু সুখ্যু শিশু জনতা!

ঠিক তখনি অন্ধকারের পোশাক পরে
ছুটে আসবে তেরো নম্বর পরী!
খিলখিল করে হেসে উঠে বলবে,‘
"...let's celebrate the pain!"








কালের পথিক

লেখনীতে আগুন ছিল
শব্দে ছিল বিষ,
প্রহর শেষের আলোয় ছিল
দ্বন্দ্ব অহর্নিশ !
তবুও বিকেল মধুর ছিল
সুধা ছিল মনে,
পদাবলীর আবেগ ছিল
এক হল দুইজনে।

চিঠির পাতায় ছন্দ ছিল
হৃদয়ে বিপ্লব,
একত্রিত মিছিল ছিল
নতুন কলরব!

যে গোধূলি রক্ত ঝরায়,
যে আকাশে ব্যথা
কালপুরুষের সঙ্গে যাদের
হাজার কালের কথা,
তারা শুধু পথ হেঁটে যায়,
মাধুকরীই চায়
পরিব্রাজক ঘর বাঁধে না
সভ্যতা আগলায়।

এমনি করে দুটি পথিক
দ্রোহকালের গানে,
পবিত্র আর বিশুদ্ধ হয়
নিত্য আগুন স্নানে।

লেখনীতে আগুন ছিল,
কন্ঠে ছিল গান,
সে কোনোদিন কৃষ্ণ ছিল,
রাধার ছিল মান!

সেসব কথা বেশ পুরনো
অনন্ত রূপকথা,
বিপ্লব আর প্রেমের মাঝে
তেপান্তরের ব্যথা!

যাদের লেখায় আগুন থাকে,
তারাও ভালোবাসে,
তাদের শুধু ঘর থাকে না,
প্রেম থাকে না পাশে।








গুরুদক্ষিণা

কখনো, কোনোদিন যদি দেখা হয়,
পাথুরে মূর্তিতে জাগে প্রাণ,
মৌনতা মুছে যায় যদি
তখনো পুন্যতোয়া স্রোতোস্বিনী  তীরে,
আমার দরিদ্র পাতার কুটীরে,
তোমাকেই ছুঁয়ে যাবে জানি
নামগোত্রহীন এক শিষ্যের নম্র নমস্কার  !
এখন ঝড়ের দিন,
বনের পাতারা অভিমানী ,
একলব্য একা!
বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠি ছিন্ন হবার আগে
দ্রোণাচার্য গুরু
আশীর্বচন হোক তোমার তিরস্কার!







তর্পণ

মহালয়ার ভোর!
আকাশের রোদ্দুর আলোয়
তাড়াতাড়ি  পথ চিনে চলে এসো।
আজ সকলে পিতৃতর্পণ করছে,
শুধু  জল,তিল,তুলসীপাতা জড়ানো
এই পবিত্রতায় বুঝি তৃষ্ণা মেটে?
কত দূরের পথ পার হয়ে আসছো বলো তো?
জল ,আগুন,বৃষ্টি,ঝড়,আকাশ,মাটি তো
তোমার বায়ুশরীর ছুঁয়েই আছে।
আর আমি সেই কবে  থেকে খুঁজে চলেছি
তোমার স্নেহান্ধ মন!
মহালয়ার আলোর বেনু
হ্যামলিনের সেই বাঁশিওয়ালার মতোন
তোমাকে পথ দেখিয়ে নিয়ে আসুক
আবার মাটির পৃথিবীতে।
আর আমি তোমাকে জড়িয়ে থাকি,
আমার জমে থাকা কান্নায়
তোমার তৃষ্ণা মেটাই!

এলোমেলো প্রলাপে সাজিয়ে তুলি
আমার তর্পণ।