শুক্রবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

তৈমুর খান


তৈমুর খান

দগ্ধমুখ

ভালবাসিবার মতো ফসল কই ?

রোগা বেহদ্দ ভঙ্গুর কিছু কথা

সূর্যের আলোয় চোখ মেলিতেছে ।

বিদ্যাসাগরের পাঠশালা আছে

কিন্তু সাধুভাষা কই ?

ক্রিয়াসংযোগ ঘটিতেছে, সর্বনাম বসিতেছে

গুরুমশাই আসিয়া আলো করিতেছেন।

সকাল হইতেছে, মাখনরঙা স্বপ্ন উড়িতেছে

ধরিব ধরিব করিয়া দিন রাঙাইতেছি 

ঘর-দুয়ার, বসিবার স্থান, গোয়ালঘর

শিং নাড়া গোরু আর গ্রাম্যদেবালয় সাজাইতেছি ।

তবু আগুন লাগিয়া যাইতেছে

আগুন নিভাইবার প্রচেষ্টা কাহারও নাই 

এইসময় কাহাকে ডাকিব? নিজেরই তো মুখ পড়িতেছে !









দেশপ্রেমের শিক্ষা

মাথা নোয়াইতে হইবে

একটি ভারী পাথর মাথায় বাঁধিয়া দিয়াছে ।


দেশপ্রেমিক হইলাম না

শ্রদ্ধা করিতে জানিলাম না

কী আমার পরিচয় হইবে ?

মাথায় পাথর বাঁধিয়াছে ।


ক্লাসরুমের বাহিরে জীবন কাটাইলাম

ভারতী ম্যাডামের অভিনয় দেখিলাম না ।

দেশটাকে একটি ঘিঞ্জি বস্তি মনে হইল ।

আগুন লাগিল । দাঙ্গা বাঁধিল।

কোলাহল হইচইকে গান ভাবিলাম ।

এখন পাথরের যন্ত্রণা

মাটিতে মাথা ঠেকিল, দেশের মাটিতে









সন্ধিসময়

উঠোন ফাঁকা হয়ে গেছে

এককোণে কুমড়োলতার নাচ পড়ে আছে

চড়ুইয়ের বন্দনা পড়ে আছে

আর সন্ধ্যার ছায়া হয়ে আসা মুখ


ভীরুর মতো কাঁপছি

বুকের ভেতর রক্তক্ষরণের শব্দ

বাতাস ছড়িয়ে দিচ্ছে এই সন্ধিসময়


কে নেবে আমাকে আর ?

রাঙা চপ্পল পরে মৃত্যুর যাওয়া-আসা দেখি

হাসে, আদর করে, গান গায়

পান খাওয়া টসটসে মুখে পিক্ ফেলে


বুকের ভেতর থেকে কান্নার শব্দ আসে

ঘুমের ধ্বস ভেঙে পড়ে স্রোতে

বিছানা জুড়ে কাঁটাগাছ লতিয়ে বেড়ে ওঠে

দিনের অবসানে সন্ধিসময় পাথরে মুখ চেপে হাসে







মহিমারঞ্জন হতে পারব না

যে যার মতো ফ্রক্ কিনে নিচ্ছে

ফ্রকে ফ্রকে আয়না বসিয়ে নিচ্ছে

আয়নায় নিজের মুখ দেখতে দেখতে

সবাই নিজেকে পাহারা দিচ্ছে খুব


বেশ রসালো যৌবন

শরীরে বর্ষা নামছে

আমরা শুকনো নদীতে নৌকা নামিয়েছি


একটু আগুন হবে না ?

হাত কাঁপছে

মহিমার কাছে যেতে পারব আর ?

তারা সব ঘন্টা বাজিয়ে দুয়ার খুলে দিয়েছে

মেঘবর্ণ পুরুষেরা ঢুকে যাচ্ছে ঘরে


আমরা একা একা ঝড়ে তাণ্ডবে ত্রিকাল মুহূর্তের

বারান্দায় অপেক্ষায় আছি

আমরা কোনওদিন মহিমারঞ্জন হতে পারব না !







ভাঙা আয়নার নীচে

ভাঙা আয়নার নীচে জমে আছে চোখের জল

সব পর্দা উড়ে গেলেই কি দেখা যায় সব ?

মেঘেরও পিপাসা থাকে ;

কোনও কোনও ব্যথার থাকে না কলরব


হাওয়ার দিকে মুখ ঘুরিয়ে থাকা সহজ

কখনও কি ধরা যায় হাওয়া ?

চোখ বুজেও অনেক দেখার থাকে

হাত দিয়েও যায় না যাকে ছোঁয়া


বিকেলেই ঝড় ওঠে বেশি

কিছু কিছু কর্তব্য উড়তে থাকে ধুলোয়

ধুলোকেই রাঙিয়ে নেয় ব্যর্থ প্রেমিকেরা

আকাশ ফেঁপে ওঠে অভিমানী মেঘের তুলোয়


ধারণার বাঁকে বাঁকে ছুটে যায় জল

বন্যা আসে আর আসে ভয়

আমাদের কপট বেঁচে থাকাগুলি

আয়ুহীন বিবর্ণ দিন পায় !