শুক্রবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

উদয় শংকর দুর্জয়


উদয় শংকর দুর্জয়

আগুন ভর্তি জাহাজ

এক অষ্টাদশী সমুদ্রদুহিতা;
পিঙ্ক-স্ট্রব্রেরি জমা করে দীর্ঘ করেছ স্তন-সমুদয়।
দুর্নিবার স্রোতের বিপরীতে তুমি নিভিয়ে রেখেছ
আকাঙ্ক্ষার জলাঞ্জলি, উন্মাদ সূর্যের কাছে স্টারডাস্ট(কল্পনানুভূতি) ধার করে
বৃন্তের বেহালায় সাজিয়েছ 'সিরিয়াস'(উজ্জ্বলতম তারা)।- বাঁক থেকে
নেমে যাওয়া রেডিয়াম প্লানেটস, এক সজ্জা-ছায়ার পাদদেশে
অবসর বিলাস লিখিয়েছে ব্যাসার্ধের পরিচয়।
বহ্নিভরা কামনার 'আইল অফ হোয়াইট' ছেড়ে গ্যাছে
সাত-সাতটি আগুন ভরা জাহাজ। সেই কোন সময়!







পরাবাস্তব জোনাকদল

দহন নিভিয়ে সূর্য-পরাগ।
                        এ বর্ষা পেরুলেই হিমকাঠ বোঝাই হাওয়ারথ দাঁড়িয়ে থাকবে ত্রিনেত্রে; এক চোখে স্নাত রয়েল-ডক, অন্যাকাশে ধূপজ্বলা শিউলির আধো-গোলাপী ঠোঁট। বিধুর অয়ন ছেড়ে লবঙ্গ বোঝাই জাহাজ এসে ঘ্রাণ কুড়িয়ে নিতেই, বিহ্বলে লেখা একশ'টা অষ্টোক সুর ভেঙে যখন উড়ে যাবে রহস্যময়ী খমক, তখন তপ্ত পারদে ঢালা প্রপঞ্জের রঙ, মিশে যাবে দগ্ধ অভ্রের গলিত ঘ্রাণে। এরপর স্বর্ণকুচি মাখা শরত যেন, পরাবাস্তব মায়ার টানে স্টারলিঙের ডানায় লুকিয়ে পাড়ি দেবে ভৈরবের কোলাহলে।

সপ্তসুর-দগ্ধ-স্নাত-সাতী।
                        সন্ধ্যাকুমারীসেঁতার হেঁটে এলে জলের পাহাড়, এক অবিরাম ঠুমরি নেমে পড়ে রাত্রি বক্ষে। কতবার খুলে পড়েছে সে উদ্যানের গোপন বাক্সে জমা মাস্তুলের ঘুড়ি! তবু উড্ডয়নের প্যারাসুট সংগীত, অচেনা ভেবে পাড়ি দ্যায় আরেকটি মহাকাল।

অকারন কোলাহল বোহেমিয়ান।
                        পাথরের উপর পাথর ব'সে, জমাট বরফ খুলে রাখে কপাট; অযুত লহরী ভেঙে, অতিথি হয়ে ওঠে রাক্ষসীর সবুজ চোখ; কর্নিয়ার ফাঁকে পাঁচতারা বিকেল তাড়িয়ে আনে জুনিপার গ্রাম। শরত তখন হরিদ্রাভ আগুন মেখে সবে ভোরের বাদ্য শুনিয়েছে বাকলের কর্ণকূহরে। হিম-রিম-হিম যেন পিয়ানোর রিড থেকে তুলে নিয়েছে আগমনী ট্রাম, হুইসেলের লোকালয়ে বনোহরিনী, পাতার অরণ্যঝোপ থেকে জোনাকদল আলো কুড়িয়ে এনে, কালভ্রমনে প্রহর রেখেছে বাজি।







আলপিনে জড়ানো জ্যোৎস্না

জোস্নার আলপিন বিঁধে আছে অযুত কাল ধরে, রেটিনার চারপাশে;
একফোঁটা কান্নার হ্রদে, ভেসে আছে নিস্তব্ধ পাঁচতলা জাহাজ।
দুপুরের রঙ ছুটে আসে বিভ্রান্তি ফেলে, একপাল নীল ঘোড়া হয়ে;
প্রত্যাহ আকাশ ভাঙে কলতান রুখে, নিশ্চুপ ক্লান্তির ফিনিক্স বেহাগ।

পাল্টাতে এসে মৃদু কলরোল, থেমে গ্যাছে উল্লাসের দল;
ভাব্বার বিষাদ লিখে, ফিরে গ্যাছে সোনালি আলবাট্রাস।
কখন যেন স্টারলিং সুর চুরি করে গায়, স্বর্নচাপার গান,
এক অষ্টাদশী রোজ তাড়িয়ে বেড়ায় নিরুদ্দেশি পেগাসাস।

ত্রিকোণী রোদ্দুরে ভেজাতে আসা অঞ্জলির গৃহদ্বার,
বিববর্ণ বেহালায় পড়ে থাকে বিভ্রমের কলতান।
আর চাইলেও নিকষ ফেরি, উড়ে আসবে না, ছেড়ে পাটাতন।
এক অন্যযানে, সমুদ্র থেকে তুলে নেবো, ধুলো সমেত রুপোলি মনিহার।।








অনিবার্য অক্ষমতার দূরাস্ত চোখ

অকারনে চূর্ণতা জমায় শরত-মেঘ। কলতান মুখর
সেইসব প্রিয় অবসর কখন যেন ফাকি দিয়ে
এক অনিবার্যকে মেনে নিয়েছে। নিয়তি বলে কিছু নেই
যে এতদিন মেনেছিল, সে এখন বেলান্ত বসে ভাবে
এই গ্রীলের ওপারে মাথাটা বের করতে পারলেই
আকাশ-মেঘলা-জল ছোঁয়া যেত, অঢেল।

বুকের কপাটগুলো অতিশয় উদ্বিগ্ন, পেরুবার অক্ষমতাকে
কিছুতেই পেরুনো যায় না। এর বাইরে এক বিশালতা
তবু দৃষ্টি স্থবির, ক্রোধ ভিড় করে আছে বিদগ্ধ নাবিকের মতো।
শুধু পালাবার পথটাই অমন নির্ভার চেয়ে থাকে; চোখগুলো চেনা
তবু বিশ্বাসের খোদাই নকশা দেখলেই ঝুম-নিশা পিছু দাঁড়ায়।

অবচেতন বলতে কিছু নেই এখানে, পুড়ে গ্যাছে সব
পুড়িয়ে গ্যাছে যার আগমনধ্বনিতে লেখা হয়েছিল
একশ'টা রক্ত জবার নাম। এ এক ঠুনকো প্রতিরোধ! 
টুকরো স্পর্শে গুড়িয়ে দেয়া যায় তবু আঙুলের অগ্রভাগে
সামর্থ্যের কোনো চিহ্ন অবশিষ্ট নেই।

সত্যিকার অবশিষ্ট বলে কিছু থাকে না
অবশিষ্টের নামেই নিজের সাথে নিজের প্রতারণা।







শঙ্কিত আগামীর সংশয় অনুভাষ

সংবেদ্য ভর্তি যুদ্ধাজাহাজ এসে ডাকবাক্সর মুখোমুখি ভিড় করে,
মিছিলের ত্রিমাত্রিক বারুদ ফ্যালে ক্ষোভের রঙছায়া। জলন্ত মানব এসে দাঁড়ায়!
কিন্তু নিরন্ন রক্তদুপুর কিছুতেই দূরের রেলপথ পেরুতে পারে না। ঝাক-কোলাহলী-বৃষ্টি
উপুড় হয়ে  নাচে অবাধ্যে। সূর্যরা পুড়ে যায়, আলখ্যে-রেডমুনের উদাসিন্য অনুপ্রবেশে। তখন
ঔপনিবেশিক শোষণের যত ডার্ক এগ্রিমেন্টের লুপ্তবীজ সুপার রানওয়ে হয়ে ওঠে। ছেড়া সুতোরা
সুপারগ্লুর ফর্মুলা চুরি করে বেড়ে ওঠে, ভেতর দেয়ালে-আড়ালে-সান্নিধ্যে।