শুক্রবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

অর্পিতা সরকার


অর্পিতা সরকার

জন্মদিনে

শুভেচ্ছা ছড়িয়ে যায় শূন্য দেওয়ালে
যাপন পিছোতে চায় ইচ্ছেসকালে,
ভরা থাক ভালোবাসা, সঞ্চয়ী ঋণ
বয়স বাড়ন্ত তবু দিনটা রঙিন।







বৃষ্টিপ্রেমিক

তোমার উঠোন জল মাখছে টানা দুদিন ধরে,
জলের ছাটে ভিজছে ডানা উড়বে কেমন করে?

বেতার বেয়ে খবর এলো নিম্মচাপের কোপে
জল ঝরবে আরও দুদিন বর্ষাআইন মেপে।

তোমার ঘরে বৃষ্টি পড়ে, আমার ঘরে বান,
বন্য যত আদর মোছে, চোরাস্রোতের টান।

ঘূর্ণিজলে পিছলে গিয়ে নিম্নগামী হাওয়া,
জলের নিচেও বৃষ্টিবাসা সবজে মেঘে ছাওয়া।

ইচ্ছে হলে সাজিয়ে নিও আলতো রোদের রেখা
সময় বুঝে আকাশ নীলে ভাসিয়ে দিও পাখা।

বৃষ্টি তোমার আশকারাতে প্রেমিক শতক ধরে,
তোমার জন্য বৃষ্টিফোঁটাও রোদ ওঠাতে পারে।

আমি ধরার চেষ্টা করি, সাজাই সাধের ঘর,
কোনটা হলে তোমায় পাবো, বৃষ্টি নাকি ঝড়?







চন্দ্রকণা

অনেক ছোটোবেলা থেকে আমি জ্যোৎস্না চুরি করি
প্রতি গুরুবারে মায়ের উপোসী হাসিতে তাকে সাজিয়ে দিতাম
আর দিতাম মাসের শেষে বাবার কপালের ভাঁজে
রাতে ঠাকুমা লাঠি ঠকঠকিয়ে বাইরে গেলে
আমি পিছনে জ্যোৎস্না হাতে দাঁড়িয়ে থাকতাম
বাবা আমার নাম পাল্টে রেখেছিলেন, চন্দ্রকণা__
আমার খাতার ভাঁজে ভাঁজে জ্যোৎস্না জমিয়ে রাখতাম
কখনো মায়ের সিঁদুরের কৌটোয়, কখনো বাবার বুকপকেটে
এক আমি জ্যোৎস্না নিয়ে তোমার কাছে এসেছিলাম
তুমি মুহূর্তের জন্যেও আলো নেভালে না__







কবি

বয়স ছয় কি সাত, কবিতা পড়েনি
কীভাবে অঙ্ক মেলে, মেরুদন্ড কী__ জানেনা কিছুই।
সেই ছেলে ভাগ করে,
কোঁচরের কুল হোক কিংবা বিকেল
মুঠো মুঠো বেটে দেয় অনাবিল হাসি।

অনায়াসে ভোর হয়, জানে পাখি ভাষা
কচি বুকে পুষে রাখে আলোদের বাড়ি,
জানেনা বিরহকথা, কবিতা পড়েনি__

মাত্রা বাঁধেনি তার ছন্দগতিকে।
সেই ছেলে গড়ে ভাঙে শব্দ-ঢেউ-জল,
কবি ও কবিতা নিজে, বাকিটা জীবনী।







জীবন

অভিশাপ কুড়িয়ে আয়ুর কোঠায় জড়ো করে যে
সে জানে,
প্রেম ভীষণ সাবধানী__
লাইন বদলে যেমন সাবধানী ট্রেন।

অক্ষরে অক্ষরে জীবন পালন করে যে
সে জানে,
ভুল করে ভালোবাসা...
গন্তব্য এলে উইন্ডো সিটটাও ছেড়ে দিতে হয়।

অহোরাত্রি দুপায়ে পৃথিবী ঘোরায় যে
সে জানে
তীব্র বেঁচে থাকা,
তরলে ব্যর্থতা নয়, ক্লান্তি ভুলে যাওয়া।







অভাব

হাতে সময় ছিল না।
বৃষ্টিতে ভেজা হয়নি সেদিন,
পথে ছড়িয়ে ছিল বকুল
গন্ধে মালা গেঁথেছি পেরিয়ে তাকে
শুধু কুড়োতে পারিনি।

মরা গাছটার পাশে ট্রেন থামে রোজ।
চোখে চোখ পড়লেই
হত্যাকারীকে চেনাতে চায়,
অস্থির হাত সময় নাড়াচাড়া করে,
তীক্ষ্ণ হুইসেল হাফ ছেড়ে বাঁচে।

মাঝপথে সাহসী হতে পারিনি।
একটা গোটা উপন্যাস নিয়ে
রক্তের মতো রঙ্গন গাছটা অপেক্ষা করত,
পাশে বেড়ার ঘর রোজ ঝরে পড়ত
একটু একটু করে।

রাস্তার ধারে এক বৃদ্ধ বসে থাকেন প্রতি ঋতুতে।
চলন্ত প্রণাম ছুঁড়ে দিলে
হাত তুলে আশীর্বাদ করেন,
কখনো সে হাত স্পর্শ করিনি
শোনা হয়নি শুভাকাঙ্খীর ভাষা,

সমস্ত দৃশ্যকুচি ঝেড়ে ফেলে ঘরে ফিরি ।