গদাধর সরকার
উপহার
ভাষা বুক থেকে বুকে ওড়ে ---
ভাষা জেগে ওঠে ধান ভোরে ।
ভোরে আঁকা বাঁকা পথ ছোটে --
ভোরে পাখিদের গান ফোটে ।
ফোটে নদী নদী ঢেউ গুলো --
ফোটে আকাশের নীল ধুলো ।
ধুলো সারি সারি গাছ আঁকে --
ধুলো রাজা বলে কাছে ডাকে ।
ডাকে পারিজাত মন, পারি --
ডাকে মাছরাঙা আঁকা বাড়ি ।
বাড়ি সারাদিন মাতে কাজে --
বাড়ি আলপনা দিয়ে নাচে ।
নাচে হুসপাখি, নাচে রবি ।
নাচে গানপরী, নাচে কবি ।
কবি ঘেমে ওঠে তবু চলে --
কবি ঢেউ ছুঁয়ে ছুঁয়ে বলে -- !
বলে আহা আজ আমি কেযে ---
বলে ভাষাটাকে ঘষে মেজে ।
দেবো উপহার কাকে ? এসো।
দেবো তোমাকেই। ভালো বেসো ।
জীবনকুচি
তুই শিলালিপি । দোপাটির চারা ।
তাই বুঝি পথে বাজে বাঁশিতারা ।
ফোটে গান, ছোটে, ঘামে ভেজা মোহ ।
তোকে খুঁজি কেন? ভুলে গেছি ওহো ।
তোকে পেলে আমি, জানি সব পারি ।
তোর সাথে ভাব । তোর সাথে আড়ি ।
তুই শিলালিপি । মরীচিকা মাসি ।
তোর কথা ভেবে কাঁদি আর হাসি ।
পথ ভেঙে গেলে, ভাঙা পথ গড়ি ।
যত বাধা আসে ততো তোকে ধরি ।
আমি ডিঙি, তুই
প্রজাপতি বাড়ি ।
তোর সাথে ভাব । তোর সাথে আড়ি ।
তুই শিলালিপি । চোখ ধরা পাখি ।
তোর দুটি চোখে - মায়াদ্বীপ রাখি ।
যত উড়ে যাস ততো আমি উড়ি ।
দিবানিশি তোকে নানা রঙে জুড়ি।
নাচে বাঁশিতারা, আলাদীন গাড়ি ।
তোর সাথে ভাব । তোর সাথে আড়ি ।
তুই শিলালিপি । মোনালিসা নদী ।
বলে দেনা এসে কিসে মেলে বোধি ।
পাতাঝরা বেলা, খরা, চোরাবালি
।
তোকে ভেবে ভেবে যাই পুড়ে খালি ।
তবু ডানা মেলি, তবু হাত নাড়ি ।
তোর সাথে ভাব । তোর সাথে আড়ি ।
খুশির ছবি
চাঁদে হাটি মাটি ছুঁয়ে
মোনালিসা ছুঁয়ে ছুঁয়ে
ছাপানো রঙীন শাড়ি
দুলছে !
কাকে ডাকি, কাকে ডাকি ?
উড়ে উড়ে কত পাখি
আকাশে মেঘর বাড়ি
খুলছে !
ছোট ছোট বাড়ি গুলো
আহা যেন প্যাঁজা তুলো
বাতাসে রোদের গুঁড়ো
ভাসছে !
আলো, আলো,
আলো মেখে
পটে যেন ছবি এঁকে
খুশিতে বরফ বুড়ো
হাসছে !
বাউরী বাতাস
এইখানে এক ভোর এঁকেছি, সেইখানে এক সাঁকো ।
বললে আকাশ, ভুলেই গেছি, কোথায় যেন থাকো ?
আমি বললুম, তাও জানোনা, শুনবে আমার বাঁশি ?
ঢেউ ছড়িয়ে -- সে বলবো না । ছুটতে ভালোবাসি -- !
ছুটতে, ছুটতে,
হারালে দিন,
ছুটতে, ছুটতে নদী !
থমকে দাঁড়ায় । তিনটি হরিণ হাততালি দেয় যদি -- !
হরিণ কোথায় ? হরিণ তো নয় ! হরিণডাঙার মাঠে !
বাউরী বাতাস বাজিয়ে সময়, একমনে ধান কাটে -- !
শ্রীমান টেঁপু
দোয়েল,ফিঙে
সবাই ভালো !
গরুর শিঙে
চাঁদের আলো !!
মাটির বাড়ি,
কাঠের ঘোড়া !
টিনের গাড়ি,
বেতের মোড়া !!
পোলাও, পুরি
পায়েস, রুটি
!
বাদাম, মুড়ি,
গাজর, ফুটি
!!
ডাকাত রে রে --
পাতার ভেঁপু !
বাজায় কেরে ?
শ্রীমান টেঁপু !!
ইচ্ছে
পাখি কারা যেন বলে গেছে ---
পাখি তারাপথ নেচে নেচে -- ।
পাখি জল পড়ে, পাতা নড়ে --
পাখি অবিরত ছবি ঘরে -- !
পাখি জলছবি আঁকা বাড়ি ।
পাখি ওড়ে চাঁদ, ধুয়ো, জারি ।
পাখি ঘুম ডুবে সারা পাড়া --
পাখি আমি আজ দিশে হারা !
পাখি দিশাহীন থাকি চেয়ে !
পাখি নাচে এক গান মেয়ে --- ।
পাখি কত ঋন থাকে বাকি --
পাখি এক মনে ভাষা আঁকি --- ।
পাখি জল পড়ে, পাতা নড়ে --
পাখি অবিরত ছবি ঘরে -- ।
পাখি ছবি গুলো ধরে রাখি ।
পাখি আমি নাকি, আমি নাকি ,--
পাখি বলে দেনা কিযে আমি ।
পাখি মেঘ হলে ফুলে নামি --- ।
মনের ভুল
ঘাগট, কাঁসাই,
কুলিক, খোড় !
কোথায় থাকিস, কি নাম তোর ??
দোয়েল, তিতির, শালিক, বক
!
আলাপ করাই আমার শখ !!
টেবিল, পিঁড়িম,
চেয়ার খাট !
আমার পকেট গড়ের মাঠ !!
শিমুল, পলাশ,
টগর, জুঁই !
হাজার ভুতের চরণ ছুঁই !!
নোলক, নুপুর,
কাঁকন, দুল !
কোথায় শ্রীভুত? মনের ভুল !!
বন্ধু মেঘের দেশ
চুমকি পাতায় নাম লিখেছে বর্ণমালা ভোর !
বুকের ভিতর ছবির জগৎ, ঝর্ণা ফুলের ঘোর !!
পাঁপড়ি থেকে ঝরলো আলো, পুচ্ছ নেড়ে তাই !
বললে পাগল চরকি বাতাস, ইচ্ছে উড়ে যাই !!
এক তারাটির সুর মেখেছে স্বপ্ন তুলির চর!
ঢেউ সাগরে ভাসছে এখন শঙ্খ দ্বীপের ঘর !!
মোহর নিয়ে আসবো ফিরে, গল্প হবে বেশ !
এইতো কাছেই ওড়না পাহাড়, বন্ধু মেঘের দেশ !!
গদাধর সরকার, ( ছদ্মনাম - মালিপাখি ), পিতা - নানুগোপাল সরকার, মাতা - লক্ষ্মীরাণী সরকার, জন্ম - ১২-১০-১৯৬৭, জন্মস্থান - কৃষনগর। পেশা - ভূমি ও
ভূমি সংস্কার দপ্তরের কর্মচারী । ছোটদেরকথা, নীল আকাশ, টুকলু, তিতলি, জীবনকুচি পত্রিকায় লেখা প্রকাশ । বই -
মালিপাখির ছড়া সংগ্রহ ( ডি এম লাইব্রেরী, কোলকাতা - ৬ ),