অনুপম দাশশর্মা
নীল নীরবতা
দিব্যি হেঁটে চলি স্বপ্নের ভিতর
রাস্তা নেই, পা
চলে যেন
মেঘের পাপড়ির উপর।
যারা বায়বীয়, অদৃশ্য
পরিজন
অশেষ ছায়া নিয়ে সঞ্চালক স্বপ্নের।
মরে যাওয়া বাগানের গাছগুলি
ডালপালা হয়ে ফিরে আসে
অঘোর চোখে।
এই এক মায়া। মুছে ফেলে না
স্মৃতির কলরব,
মুখ তুলে তাকাই ঘুমন্ত বিশ্বাসে
বলি, কিছু সময় কী পারো
না ফেরাতে যাদুতে
আবার ঝুলবো ডালপালাতে।
সহসা ভাঙে নীল নীরবতা
প্রতারিত স্বপ্নের শেষে..
সব মায়া নয়
মেনে নিতে হয়। দুর্গম কোন বাসনা আর
নয়।
আলো থেকে সরে গেছে মেধার পরিচয়।
মেনে নিতে হয় ঝকঝকে মার্বেল
বহুপিছনে
ঠেলে দিয়েছে দুঃখের নিরাময়,
তথাগতর পায়নি খোঁজ
একা একা ভেসে গেছে রাত
চৈত্র-জোছনায়।
মেনে নিতে হয় শেষ বিকেলের রোদ্দুর
ধীবরের সহ্যগুন মেখে নেওয়ার পরে-ও
ধুলোকে দেখেছি বাদামী আকাশে উড়তে
যে পাহ্ন বটগাছের নীচে কুড়োয় ছায়া
তার কাছে শিখেছি কীভাবে
নিঃস্বতায় হওয়া যায় অতিকায়
প্রকাশ্যে ঝোরায় নামি, এর
পরে-ও
আমায় আতান্তরে কবিতা পায়,হয়
!
ছিটকে যাবার পর
আমার ভিতরে বেড়ে ওঠে বীজধান
তোমার মুখ ভাসে শস্যের আয়নায়
ফেলে এসেছি ঋণ ঘুঙুরবিষাদে
ভিজে বিকেলে দেখলাম তোমায়-
উন্মুখ হয়ে ঝুঁকে আছো শব্দের
স্তনে।
যে-সমস্ত অস্থিরতায় ঘিরেছিলে আমায়
সব-ই কী মতিসম্মত ?
সময়ের থেকে পরিত্রাণ চায় আবেগ
লাঞ্ছনার ভয় রাখোনি রীতিমতো
আমোদময় মন এখন স্রোতের শ্যাওলায়
তুমি বিচ্ছেদের শিকড় খুঁজছো গভীর
গোপনে।
মাটি
মাটি ছুঁয়ে থাকলে গর্ভ থেকে অযুত
কান্না শোনা যায়
কবেকার গোধূলির মায়া সারাদিনের আলো
শুষে
শূন্যতার মহিমা জাহির করতে
বেছে নিয়েছে সুপ্রাচীন আঘাত
খসে পড়ে বিধুরমনের কৃষ্ণ বৃন্ত
ভেসে আসে মহুয়ার মাদল চৈত্র সন্ধায়
মরুমেহনের জ্বালামুখ খুলে গেলে
মাটি ফুঁড়ে উঠে আসে জড়তার কান্না
শরীর পোড়ে বোধের, পুরনো
ক্ষতের থেকে
জন্ম নেয় অপরিচিত অমিতাভ !
অরণ্যনদেব
সেই একঘেয়ে কুলকুচি, ফেলে
আসা
মধ্যএরাতের স্বপ্ন
সকালের মহিমা শরীরে মাখতে মাখতে
দেখি নেমে আসে মিহি রোদ
কান ঘেঁষে উড়ে যায় আজানের ধ্বনি
রাস্তায় নামি, সম্ভাবনার
উজ্জ্বল হাতিয়ার
আমার অতীতলব্ধ সতর্কতা
দেখি, অপার্থিব
খুশিতে চলেছে সাদা-বাস
স্কুলমুখী কৈশোরকে নিয়ে
আমি প্রলম্বিত ছায়াকে সাথে রেখে
অফিসের চেয়ারে
আমাকে এখন ছোটবেলায় ফিরিয়ে দিচ্ছে
অরণ্যদেবের শৌর্য, খবরের
কাগজে।