শুক্রবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

সুদীপ্ত বিশ্বাস


সুদীপ্ত বিশ্বাস

পুনরুত্থান

নিভু নিভু আকাশে যেই ঘনিয়ে এল মেঘ


তোমার চোখের তারায় তারায় দেখেছি উদ্বেগ।


অনেক চেনা কেমন করে খুব অচেনা হয়


 জীবন খাতা গোলকধাঁধা সরলরেখা নয়।


শান্ত জলে হঠাৎ হঠাৎ ছলকে ওঠে ঢেউ


ঘুমের মাঝে চমকে দেখি পাশেতে নেই কেউ।


নেই তাতে কি, একলা বাঁচি, একাই টানি দাঁড়


স্বপ্ন দেখি আকাশ ছোঁব, সমুদ্দুরের পার...






পাতকী

এসেছে প্রেমিক যুবা প্রেম ভেঙে গেলে

পাষণ্ড পুলিশ থেকে ডাকাতের দল

সব্বাই এসেছে আর ঢেলে গেছে বিষ।

ধোয়া তুলসী পাতা যে সেও তো এসেছে

এঁটো পাতে চেটেপুটে খেয়ে চলে গেছে।

এসেছে উকিল বাবু এসেছে সন্ন্যাসী

মুখ পাল্টাতে এসেছে গৃহস্ত মানুষ।

এসেছে জুতো বিক্রেতা, জুতো কেনে যারা

তারাও এসেছে সব গাঁ উজাড় করে।

কি নেবে গো দেহ থেকে? দেহে কী বা আছে?

নর দেহে যত পাপ সব মুছে নিয়ে

রক্ত মাংস বিষ মেখে অন্তরে অন্তরে

ধর্ষিত হয়েছি রাতে অযুত বছর।

সমস্ত শরীর দিয়ে বিষ শুষে নিয়ে

অপবিত্র তবু আমি, কুলটা, পাতকী!






বাক্যহারা

রাতদুপুরে আসছে উড়ে একটা দুটো স্বপ্ন পাখি

হারানো সেই সোনালি দিন, এখন একে কোথায় রাখি!

আবছা আলোয় চমকে দেখি সেই যে তুমি মেঘের মেয়ে

কলসি নিয়ে দুপুরবেলা একটু দুলে ফিরছ নেয়ে

হালকা রঙা কল্কা শাড়ি, দুলছে বেণী ইচ্ছেমত

স্তব্ধ চোখে থমকে থাকি, আরে এটাই সেই ছবি তো!

সেই যে যেটা হারিয়ে গেছে একটুখানি অসাবধানে

আজ পুরোটা রাখব ধরে, আজকে লিখে রাখব প্রাণে।

গভীর রাতে আবছা আলো, হতেও পারে চোখের ভুল

বলো না তুমি সত্যি করে,তুমি কি সেই টগরফুল?

যাচ্ছে খুলে স্মৃতির পাতা,ডাগর চোখে দেখছি খালি

অরফিউস ও ইউরিডিসি, বুদ্ধদেব ও আম্রপালি...

স্বর্গ বুঝি আসল নেমে আবছা আলো ঘরের কোণে

না বলা কথা অনেক ছিল পড়ছে না যে কিছুই মনে।

হঠাৎ দেখি কাঁদছ তুমি, তোমার চোখে অশ্রুধারা

তোমার মুখে আমার ছায়া আনন্দেতে বাক্যহারা।







অভিলাষ

তুমি যখন নদী হলে
আমার চোখে আলো
সাঁতরে ভাঙি উথালপাথাল ঢেউ
অনভ্যস্ত গহীন গাঙে
আনাড়ি এই মাঝি
তুমিই জানো, আর কি জানে কেউ?

ঠিক সে সময় ঝাপুরঝুপুর
বৃষ্টি যদি নামে
আকাশ জুড়ে গলতে থাকে মেঘ
সুখ সাঁতারে শ্রান্ত আমি
ঘুমিয়ে যদি পড়ি
জানবে আমার কেটেছে উদ্বেগ।


ঘুম ঘুম ঘুম ঘুমের দেশে
স্বপ্নমাখা চোখে
দুহাত দিয়ে জাপটে ধরি নদী
বাঁচতে রাজি অযুত বছর
আলোকবর্ষ পারে
ভালবাসা, তোমায় পাই গো যদি।

সহজ তুমি সহজ হয়েই
থেক আমার পাশে
গ্রীষ্ম দিনে,দারুণ মরুঝড়ে
বুকের পাশে নরম ওমের
পালক হয়ে থেক
শীতের রাতে বরফ যদি পড়ে।