নুরুন্নাহার শিরীন
আশ্বিনের পঞ্চমী
এক
শেষবার কবে যে
তুমুল রোদ রঙের জামায়
ঝলোমলো ছায়াকে
দেখেছি জানালায় !
কী কথা বলতে চেয়ে
একটুকু হেসে
একটু আড়াল ভেঙে
চলে যায় ভেসে !
যেমন উছিলা খোঁজে
খয়েরি ডানার পাখি
তাহাকে না পেয়ে
একা মেঘলা দাঁড়িয়ে থাকি !
নদী ও নীলিমাতল চুরমার
করা বিদ্যুতভার
শেষবিন্দু অব্দি
একলা আমার !
তবু ঘাটের মড়ার
মতো অনন্ত অপেক্ষা শুধু
কী জানি কাহার
তরে রোদেলা দুপুর ধু ধু !
পুরনো বিকেল এসে
ঝুপ করে বসে
সন্ধে হতে না হতে
কবেকার তারা খসে !
কত যে মায়াবী রূপ পৃথিবীর প্রিয় মুখে
দুচোখ ফেরানো দায়
অপলক সুখেদুখে !
দুই
ভাবছি এবার যাবো
যেদিকে জীবন ধায়
হাওয়া তেমন
সুবিধের নয় তবুও যাওয়া যায়।
নীলাকাশ তো ধূসর
হবে তা হোক আমরা
যেতে চাইলে ধূসর
থেকে জ্বলবে পরম্পরা।
হয়তো তখন ঠিক
অন্য গ্রহ থেকে কেউ এসে
পাখির ভাষায় কথা
বলবে শুধোবে হেসে
পৃথিবী কী তার
বেশি ভালোবাসাময়?
সেথায় হাজার পথ
হাজার বিভাসা নদীময়?
এসব ভাবের মাঝে
আচমকা অসীমের চোখ
অতীত ইতিহাসের
পাতা খুলে দেখে শোক।
শোকের আগুনে পুড়ে
খাক হলুদিয়া মাঠ
সে আমার আশাহত
অন্যতর দগ্ধতার পাঠ।
সে আমার পোড়া দেশ
স্বপ্নবদ্ধ ভালোবাসা
বাংলাদেশের
সোঁদামাটির গভীর ভাষা।
তিন
সে কবে কবিতা
চেয়ে শতবার গেছে ফিরে
সেসব লিখতে বসে
আছি অকাজের ভিড়ে।
স্মৃতির রৌদ্রজলে
ঋতুদের ছায়াবাজি
সেথায় ঝাপসা শত
ছায়ায় আমরা আছি।
আমাদেরই মায়াবী
দিনগুলি নেভে আর জ্বলে
সুদূর গাঁয়ের
গন্ধে জন্মকাল কথা বলে।
না বলা ছবি ও
কবিতার প্রথম প্রহরে
যারা নাড়ি
কেটেছিলো তারা সব গেছে ঝরে।
তাহলে কীসের তরে
এতটা এতিম ডাকে
আমাদের পথগুলি
ভাঙাচোরা চেয়ে থাকে !
কে কবে তাদের
চোখে চোখ রেখেছিলো
এবঙ খানিক আলো
জ্বেলে দিয়েছিলো
আজ তা অতীত শুধু
মেঘলা রঙের রেখা
যেন সে আধখেঁচড়া
একটুকু দেখা !
চার
এবার তাহলে চলো
সবকিছু গোছগাছ করে
অজানায় বাড়াই পা
ভ্রুকুটি উপেক্ষা করে।
ষড়ঋতুর এদেশে নদী
ভাঙন সইতে জানে
জেনেছি নদীর নামে
মরা গাঙ ছুটতে জানে।
আমার গোমতিবেলা
বহুদূরে সরে গেছে জানি
তথাপি আমিতো তারে
মায়ের মতোন জানি।
আমার হৃদয়পুরে
রেখেছি তাহার ছবি
একটা কবিতা না
লিখেও সে আমার কবি।
কেউ না জানুক তবু
আমিতো জেনেছি তারে
কবিতাহীনতা থেকে
ভেসে যাবো এপার ওপারে।
সাথীহীন চলে যাবো
অজানার ডাকে
যে কেউ যেতেই
পারে যদি অনন্তে বিশ্বাস থাকে।
যা কিছু অযথা
বোঝা সেসব থাকুক পিছে
বাপের জমিজমার
ভাগ তো আদতে মিছে।
পাঁচ
আদতে আমার বলে
তেমন কিছু তো নেই হাতে
যা কিছু বোঝার
মতো এতকাল বয়েছি দুহাতে
ফেলে যেতে হবে সব
এমন কী মায়ার বাঁধন।
কবিতা সে ততোধিক
হাওয়ায় ভাসা ধন।
তাহলে ভাসিয়ে
দিয়ে যাওয়াই ভালো
জমিয়ে রেখেছি যত
আলো আর কালো।
ভালোর কপোলতলে
বিন্দুবিন্দু জোছনার টিপ
কে কবে পরিয়েছিলো
ভুলে যাবো ঠিক।
না ভোলা কাহিনী
থাক অলিখিত আজ
কত কী অলেখা থাকে
জেনে কাহার কী কাজ?
অজানারে জানা
বাপু সহজ তো নয়
তারে জানতে জানতে
জীবন ফতুর হয়।
এদেশে এমন কত
ঋতুমতী ভৈরবীরাগ
শিকড়ে বাজিয়ে যায়
জীবনের শতভাগ।